গ্রামের লোকদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে
Published: 27th, October 2025 GMT
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক নিঃসন্দেহে একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারত। ঠিকঠাক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা থাকলে দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এ প্রতিষ্ঠান নীতিগত অবহেলার এমন শিকার হয়েছে যে মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এতে একদিকে যেমন প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে চিকিৎসার ওপর চাপ বাড়ছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে অযত্ন ও অবহেলার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা এককথায় সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার, তার উল্টো যাত্রা। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা আগস্ট মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দেশের আটটি জেলার ৩২টি ক্লিনিক সরেজমিন দেখেছেন, অনেক ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা নেই, বর্ষাকালে পানিতে কিছু ডুবে থাকে, কিছু ক্লিনিক ভাঙাচোরা, কয়েকটি ক্লিনিকের শৌচাগার খারাপ, প্রায় সব ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার যন্ত্র অলস পড়ে আছে। ক্লিনিকগুলোয় জনবলের সংকট আছে, আছে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ।
এ চিত্র সব দিক থেকেই হতাশাজনক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে ব্যক্তির ব্যয় বাংলাদেশে কেন সবচেয়ে বেশি, তার একটি কারণ হতে পারে কমিউনিটি ক্লিনিকের এই স্বাস্থ্যহীনতা। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক দলের কাছে স্লোগান হিসেবে যতটা জনপ্রিয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জরুরি একটি প্রতিষ্ঠান বরং বৈরী রাজনৈতিক চর্চারও শিকার হয়েছে। ১৯৯৮ সালে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সরকারের আমলে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে এটি আবার চালু হলেও সেটাকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
১১ সদস্যের একটি কমিউনিটি গ্রুপ কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা করে। দেশে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের অস্তিত্ব থাকলেও কার্যত এসব ক্লিনিক থেকে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচপিসি, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারীর বেতন রাজস্ব খাত থেকে হয়। একদিকে সরকারের কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয় হবে, অন্যদিকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে, এমন ব্যবস্থা কত দিন চলতে পারে?
জনগণের চিকিৎসা ব্যয় এবং সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি স্তরে স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ কমাতে গেলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যকরভাবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে যে কমিশন করে, তারা তাদের প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম পাল্টে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ করার সুপারিশ করেছে। আমরাও মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রকৃত অর্থেই সংস্কার প্রয়োজন। শুধু অবকাঠামো ও লোকবলের ক্ষেত্রে নয়, নীতিগত জায়গাতেও সংস্কার প্রয়োজন, যাতে গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ক্লিনিক থেকে গ্রামের মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে। স্থানীয় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে অনেক ছোটখাটো দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী বদল চেয়ে নারীদের ঝাড়ু মিছিল
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর–হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করেছেন একদল নারী।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় মুক্তমঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে শতাধিক নারীসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলামকে পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
এর আগে, একই দাবিতে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত পাঁচ প্রার্থী যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করেন।
মনোনয়ন বঞ্চিতরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ হিলালী, ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম খান চুন্নু, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম।
এই পাঁচজনের বাইরেও মাজহারুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করছেন অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ রাব্বানী।
ঢাকা/রুমন/রাজীব