নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিনিয়ত ঘটছে এবং ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে কি আমরা এটিকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে মেনে নিতে শুরু করেছি? নাকি নারী বলেই প্রতিবাদের ভাষা আমাদের কানে পৌঁছানোর আগেই ক্ষীণ হয়ে আসে?

অনলাইনে যৌন মন্তব্য, ট্রলিং, ইনবক্সে যৌন উত্তেজক ছবি পাঠানো, নারীর বক্তব্যের বিপরীতে ঘৃণামূলক ও অবমাননাকর বক্তব্য, ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করা, ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, লিঙ্গভিত্তিক অবমাননা, নারীর স্বাধীনতা ও সামাজিক ভূমিকা নিয়ে হীন মন্তব্য করা - এসব এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নারীকে দমন করতে এমনকি রাজনৈতিক মতভেদ দমন করতেও নারীর ব্যক্তিগত জীবন, শরীর ও চরিত্রকে লক্ষ্য করে সামাজিক মর্যাদাহানির অপচেষ্টা করা হয়। আর বিচার? ভুক্তভোগীর জন্য সেটিও যেন আরেক প্রহসন!

প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৫ সালের শুধুমাত্র জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ)-এ ১১৯২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে গঠিত এই পিসিএসডব্লিউ-তে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত মোট ৪৩৮৩৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, নারীরা কীভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়রানির শিকার হচ্ছে।

নেট্জ বাংলাদেশের ২০২৩ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৭৮.

৭ শতাংশ নারী প্রযুক্তি নির্ভর সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, যারা এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন তারা সকলেই ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। মাত্র ৫৭% নারী সপ্তাহে অন্তত একদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবুও তারা নানাভাবে অনলাইন সহিংসতা যেমন: গোপনে ব্যক্তিগত ছবি তুলে রেখে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করার জন্য চাপ সৃষ্টি, টাকার জন্য হুমকির শিকার হয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি। পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর ৮৪% ভুক্তভোগীকেই অনলাইন ব্যবহার কমাতে বা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয় বরং ভুক্তভোগীর ওপর আরও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, হয়রানির শিকার নারী শিক্ষার্থীদের ১৪.৩% স্কুলে আসা কমিয়ে দিয়েছে এবং অন্যত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে এবং অনলাইনে নানা হুমকিতে ৩৫% নারী মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়েছে।

করণীয় কী?

অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে নারীকে প্রযুক্তি থেকে দূরে নয়; বরং নারীর সক্ষমতা এবং ক্ষমতায়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও বেশি দক্ষ এবং সচেতন করতে হবে। সেই সঙ্গে, অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে আইনকে কার্যকর করতে হবে। সম্প্রতি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে অনলাইন বা সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

আইনকে কার্যকর করার জন্য অভিযোগ করার প্রক্রিয়াকে অনেক সহজতর করা এবং গণমানুষের কাছে বার্তাগুলো স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করে রিপোর্টিং, হেল্পলাইনসহ প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানকে আরও শক্তিশালী করা, এবং অনলাইনভিত্তিক মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবা জোরদার করা দরকার।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতার পরিবর্তন না হলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, সহমর্মিতা ও সমঅধিকার বিষয়ে শিক্ষা গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি মানুষকে এ বিষয়ে সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সারা জামান উন্নয়নকর্মী

ইমেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘আইটিডি ২০২৫’ আয়োজন করছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি

জ্ঞান, গবেষণা, টেকসই ব্যবসা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইটিডি) ২০২৫’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ও আইন অনুষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলন ২৭ ও ২৮ নভেম্বর ঢাকার পূর্বাচলের আমেরিকান সিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। গবেষক, শিক্ষাবিদ, শিল্প খাত ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চতুর্থবারের মতো এ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সম্মেলনটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘টেকসই ব্যবসা ও আইনের অগ্রগতি: উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিবেশ, সমাজ এবং সুশাসনের সমন্বয়।’ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষক, গবেষক, পেশাজীবী ও ব্যবসায়িক বিশেষজ্ঞরা একত্র হবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁদের গবেষণা, ভাবনা, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করবেন এবং সম্ভাবনা তুলে ধরবেন।

আয়োজকেরা জানান, এবারের আইটিডি সম্মেলনে দেশ-বিদেশ থেকে প্রায় ১৯২টি গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্য থেকে ১১৩টি নির্বাচন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক আজিজ, সহযোগী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমান এবং গ্রিন বিজনেস স্কুলের শিক্ষক, জনসংযোগ ও গণমাধ্যম কমিটির সদস্যসচিব মাশরুর মুশতাক।

উপাচার্য মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষাবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাই, যা তাদের জাতীয় ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অর্থবহ অবদান রাখতে প্রস্তুত করবে।’

চতুর্থ আইটিডি সম্মেলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক আজিজ জানান, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেদের গবেষণা তুলে ধরার এক দারুণ সুযোগ হিসেবে কাজ করবে আয়োজনটি।

দুই দিনের সম্মেলনে গবেষকদের গবেষণাপত্রগুলো উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বাছাইকৃত গবেষণাপত্রে টেকসই অর্থায়ন, ইএসজি রিপোর্টিং, ডিজিটাল রূপান্তর, পরিবেশ আইন, এআই নৈতিকতা, মানবাধিকার, করপোরেট গভর্ন্যান্সসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়গুলোতে মূল বক্তৃতা, গবেষণা উপস্থাপনা এবং প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গবেষণাপ্রবন্ধগুলোকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হবে, যা আইটিডি সম্মেলনের শ্রেষ্ঠ গবেষণায় স্বীকৃতি দেওয়ার ঐতিহ্য অব্যাহত রাখারই অভিপ্রায়। আইটিডি ২০২৫ সম্মেলনটিতে সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে চলছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘আইটিডি ২০২৫’
  • ৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না সমতা লেদার
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২৭ নভেম্বর ২০২৫)
  • জাতীয় প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি প্রাণিসম্পদ খাত: উপদেষ্টা
  • হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিটের প্রবেশপত্র প্রকাশ
  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না গোল্ডেন সন
  • চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘আইটিডি ২০২৫’ আয়োজন করছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি