বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে: আমীর খসরু
Published: 27th, October 2025 GMT
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে। এই বিভাগ তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা। বিএনপি আগের বার ক্ষমতায় এসে এটি তুলে দিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এটি আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার এটি বিলুপ্ত করবে।
আর্থিক খাতে সংস্কার করা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। শুধু স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেছেন। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইকোনমিক রিফর্ম সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করে কী লাভ হয়েছে, এই প্রশ্ন তোলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর ধারণা, এতে কোনো লাভ হবে না। কারণ, দুই ভাগেই আমলারা আছেন। এনবিআর নিয়ে বিএনপির ভিন্ন পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।
আমলাতন্ত্র প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করবে না, জবাবদিহিরও কিছু নেই। বরং আমলাদের দায়িত্ব কমিয়ে আনা হবে। সরকার পরিচালনার সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। সেই সঙ্গে নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব আমলাতন্ত্র নয়, নীতিনির্ধারকদের হাতেই থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে নিজস্ব জ্বালানি উৎস কাজে লাগাতে বিনিয়োগ হয়নি, বরং বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনে। গত ১৫ বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, কেননা, এখানেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সুযোগ ছিল।’
অতীত সরকারের প্রবৃদ্ধির মডেলে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের তথাকথিত অর্থনৈতিক অলৌকিকতার গল্পের আড়ালে লুকিয়ে ছিল কঠিন বাস্তবতা। আজ সেই বাস্তবতা প্রকাশ্যে এসেছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে। ইতিমধ্যে বলা হচ্ছে, আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। ১৩ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার। স্নাতক পর্যায়ে প্রতি তিনজনের একজন কর্মহীন।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে। হয় আমরা এই স্থবিরতা মেনে নেব, না হয় অভূতপূর্ব সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব। সে জন্য প্রয়োজন নতুন অর্থনৈতিক মডেল।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে আছে। দেশে জাতীয় বিনিয়োগনীতি নেই। ফলে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য ও পরিকল্পনা নেই। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একটি পদ্ধতিগত বিনিয়োগ উন্নয়ন কৌশল থাকা উচিত—জাতীয় বাণিজ্য, রপ্তানি ও আমদানি নীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এটি।
দেশে গণতন্ত্র ফিরেছেমূল অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দাবিদাওয়া বা সংস্কারের প্রয়োজন হলে রাস্তায় নয়, জনগণের দুয়ারে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে এসে পাস করিয়ে নিতে হবে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না আনতে পারলে শত সংস্কার করেও সুফল মিলবে না। আমাদের মধ্যে সহনশীলতা আনতে হবে, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দ্বিমত থাকলেও পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কাউন্টারপার্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান, চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত য় গ ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘হল অব প্রাইডে’ বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‘কারাগার ঘোষণা’
আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ দেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সবার প্রত্যাশা-বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়।’
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচনী মাঠে আপনারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণ এবং নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবে না।”
উপদেষ্টা বলেন,“ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। তাছাড়া অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেপ্তার বাড়াতে হবে। তবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।”
ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারিত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারিত্ব নাই, শৃঙ্খলা নাই, কমান্ড মানতে চায় না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায়; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “জেলা পর্যায়ে ঘনঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরো সক্রিয় করতে হবে। জেলার সকল বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।”
“থানা থেকে লুট হওয়া বা হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে হবে। জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,“পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ