শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী যাত্রা শুরু ২৮ অক্টোবরের রক্তাক্ত তাণ্ডব দ
Published: 28th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভি বলেছেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিনের রক্তাক্ত তাণ্ডব গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল, যা ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের প্রথম প্রকাশ।”
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত: লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অতিথি বক্তা হিসেবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে দিনব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য মেলা
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে ঢাবির দুই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
তিনি বলেন, “সেদিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগের প্রক্রিয়ায় ছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের কথা শুনছিল না। প্রশাসন তখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। এই সুযোগেই শেখ হাসিনা ও তার দল ১৪ দলের কর্মীদের দিয়ে রক্তাক্ত হামলা চালায়। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের প্রথম মঞ্চায়ন।”
রিজভি বলেন, “ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটুকে যেভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল, তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। ঠান্ডা মাথায়, নির্মম নিষ্ঠুরতায় একজন আহত মানুষকে ইট দিয়ে থেতলানো এবং লাশের উপর উল্লাস করা—এমন নৃশংসতা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা তখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন—যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার প্রশাসনেও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।”
রিজভি বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিবও ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তখন থেকেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র নির্মাণের পথে হাঁটছিল। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলীয় আনুগত্যের বাইরে কেউ হলে স্থান পেত না।”
ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে রিজভি আরো বলেন, “হিটলারের মতো শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপূজার বয়ান দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে ‘রাষ্ট্র’ মানেই আওয়ামী লীগ। যে এই রাষ্ট্রচিন্তার বাইরে যাবে, সে দেশদ্রোহী।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশে গঠিত ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রোথিত। শেখ হাসিনার সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থা সবকিছু দলীয় আনুগত্যে পরিচালিত হয়েছে।”
রিজভি ডাকসু নেতৃবৃন্দের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ডাকসু যেভাবে আজ মুক্ত আলোচনা আয়োজন করছে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে হবে মুক্ত চিন্তা ও সত্য অনুসন্ধানের কেন্দ্র।”
তিনি আরো বলেন, “ফ্যাসিবাদের বয়ান সবসময় একটি ‘চেতনা’কে বিকৃত করে হাজির হয়। শেখ হাসিনার ‘চেতনা’ও তাই—যেখানে বিরোধী কণ্ঠ মানেই রাষ্ট্রবিরোধিতা। আমাদের তরুণদের এই বয়ানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্য ও স্বাধীনতার চর্চা করতে হবে।”
রিজভি অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যে থেকেও গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, তাদের সংগ্রাম বৃথা যায়নি। আজ তরুণ প্রজন্ম সেই গণতান্ত্রিক স্পিরিট পুনরুদ্ধার করছে। এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জবাব।”
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়, যা আজো জাতির জন্য গভীর শিক্ষা বহন করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “প্রায় ২০ বছর পর আজ আমরা উন্মুক্ত পরিবেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সেদিন যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন—তাদের প্রতি আমরা আজ গভীর শ্রদ্ধা জানাই। কারণ সেই দিন ন্যায়বিচারের দাবি তুলতে গিয়েই আমাদের অসংখ্য ভাই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, অনেকে প্রাণ দিয়েছেন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সেদিনের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসেবে এক নম্বর আসামি করে মামলা হয়েছিল, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ তদন্ত ছাড়াই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। তারা তখন লাশতন্ত্রের পাশে ‘ভয়তন্ত্র’ তৈরি করেছিল—দেশে আতঙ্ক ও দমননীতি প্রতিষ্ঠার জন্য।”
২০০৬ সালের ঘটনাকে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত করে এ জামায়াত নেতা বলেন, “আমরা ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্রজনতার সম্মিলিত প্রয়াসে ভয়তন্ত্রের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। হয়তো অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, কিন্তু আমরা ভয় পাইনি। সেই ১২ ঘণ্টার যুদ্ধে আমাদের হাতে ছিল কাঠের লাঠি, আর তাদের হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। একজন হাফেজ ভাই মৃত্যুর আগে বলেছিলেন—‘আমার মুখে আঘাত করবেন না, এই মুখে আমি কোরআন ধারণ করেছি।’ কিন্তু তারা ইট দিয়ে তার দাঁত ভেঙে দিয়েছিল। এমন পৈশাচিকতা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব দেখেছে।”
তিনি বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকার যখন তুলনামূলক সুনামের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল, তখনই আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা কখনো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না, আবার কাউকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতায় আসতেও দেয় না।”
মাসুদ দাবি করে বলেন, “২৮ অক্টোবর ঢাকায় ১৩ জন এবং সারাদেশে ৩৩ জন জামায়াত–শিবির কর্মী শহীদ হন, আড়াই শতাধিক আহত হন। তাদের মূল টার্গেট ছিল আমাদের সৎ ও জনপ্রিয় মন্ত্রীরা—যারা দুর্নীতিমুক্তভাবে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছিলেন। আর মঞ্চে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামির বক্তব্য চলাকালে পাশের ভবন থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়।”
শফিকুল ইসলাম মাসুদ অভিযোগ করেন, “তারা যখন আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষমতায় এসে ‘ট্রাইব্যুনাল’ নামের মাধ্যমে বিকল্প হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। তারা বাংলাদেশকে মানবিক রাষ্ট্র হতে দেয়নি, বরং প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের উপনিবেশে পরিণত করার চক্রান্ত করেছে।”
মাসুদ আরো বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আমাদের ভাইদের রক্ত দিয়েই ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। তাই আজ সরকারের উচিত তাদের শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি। আমি নিজে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শুনেছি—তিনি ভিডিও কলে নির্যাতনের দৃশ্য দেখতে চেয়েছিলেন। একজন অফিসার আমাকে জানিয়েছেন—এই ভিডিও না দেখলে তিনি শান্তি অনুভব করতেন না। এমন একজন মানুষ ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেছে, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক।”
ডাকসুকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনাদের প্রতি ছাত্রসমাজের যে অগাধ আস্থা, তা যেন কখনো ব্যর্থ না হয়। ২০০৬ সালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে পল্টনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজো আপনারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। কেউ আপনাদের ভালো কাজ আড়াল করতে চেষ্টা করবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিবেকই সত্যের পাশে দাঁড়াবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির যুগ্ম-সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন, ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক রক ত ক ত হয় ছ ন হয় ছ ল র জন য মন ত র র জন ত আম দ র ক ষমত আওয় ম সরক র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’—ভাইরাল যুগেও প্রাসঙ্গিক মিলা
‘ফেরা’ শব্দটা মিলার পছন্দ নয়। ‘এসব বলে আমারে বুড়া বানাইয়া দিয়েন না,’ হেসে বললেন মিলা। নিজেকে ‘তরুণ’ ভাবতে চান। তবু প্রসঙ্গটা এসে যায়। কেননা এই দুই দশকের পথে সব সময় যে আলোতে ছিলেন, তা নয়। ব্যক্তিগত নানা কারণে কিছু সময়ের জন্য সংগীতাঙ্গনে তাঁর উপস্থিতি কমে যায়। নতুন গান প্রকাশ পাচ্ছিল না, মঞ্চেও তাঁর দেখা মিলত না। বরং খবরের শিরোনামে উঠে আসত বিয়ে, সংসার, বিচ্ছেদ, আদালতের নানা ঘটনা। কিন্তু সেই কঠিন অধ্যায় এখন অতীত। ভুলে যেতে চান। এখন মিলার ধ্যানজ্ঞান শুধুই গান। জীবনের সব ঝামেলা পেরিয়ে আবারও আলোচনায় ফিরেছেন তিনি—এবার কেবল গান নিয়েই।
‘আহা, একসময় এফএম রেডিওতে কত শুনতাম, কিন্তু জানতাম না এই শিল্পী মিলা। ধন্যবাদ মিলা, আমাদের শৈশবকে রাঙিয়ে তোলার জন্য’—মিলার ইউটিউব চ্যানেলে ‘তুমি কি সাড়া দেবে’ গানটির মন্তব্যের ঘরে এমনটাই লিখেছেন একজন শ্রোতা। ইউটিউবে মিলার গাওয়া ও অভিনীত ‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’ গানের মিউজিক ভিডিওর ভিউ তিন কোটির বেশি।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে ‘বাপুরাম সাপুড়ে’ গানটির ভিউ প্রায় দুই কোটি। এ গানের মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, ‘মিলার মধ্যে খুবই স্বতঃস্ফূর্ত একধরনের চপলতা রয়েছে, যা বিখ্যাত পপ গানেওয়ালদের এক গুরুত্বপূর্ণ গুণ। কৈশোরে তাঁর গান যেমন আনন্দ নিয়ে শুনেছি, আজও তা–ই।’ ভারত থেকে দেবশ্রী নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে শুনছি। কলেজে পড়ার সময় শুনেছিলাম। আজ হঠৎ করে ইউটিউবে পেয়ে গিয়ে শুনলাম। অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম। বাংলাদেশের গান বলে জানতাম না। কিন্তু দুর্দান্ত গানটা তৈরি করেছিল। জাভা ফোনে শুনতাম। এখন তো অ্যান্ড্রয়েডের যুগ।’ এসব মন্তব্যে মিলাকে পাওয়া যায়।
মিলা নতুন গানে ও কনসার্টে গত বছর থেকেই নিয়মিত। ‘ছেঁড়া পাল’ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছেন। ২০২৪ সালের জুনে জি সিরিজের ব্যানারে আসা ‘টোনা টুনি’ গানের ভিডিওতে মিলার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ‘রূপবান’ গানের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
মিলা ইসলাম