‘প্রিয় ইফতেখার, এই পৃথিবীর একটাই তো আকাশ’
Published: 30th, October 2025 GMT
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক ইফতেখার মাহমুদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিসিএস ক্যাডার হয়েও প্রশাসনিক চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন ইফতেখার মাহমুদ। তার মৃত্যুতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে স্মরণ করে, তার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেছেন লেখক, সাহিত্যিক, সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
আরো পড়ুন:
বাংলা একাডেমিতে আল মাহমুদ লেখক কর্নার চালু
উপন্যাস ‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে বুকটক
‘ইফতেখার আপনাকে মনে থাকবে ভাই’
কবি, সাংবাদিক, কলাম লেখক এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “ইফতেখার লেখক হিসাবে ছিলেন ধীমান। মৃদু ভঙ্গিমায় চলতেন। তাঁর কোনো শত্রু থাকা সম্ভব ছিল না বলেই হয়ত ক্যানসার চরম শত্রুতাটা করলো। পড়াশোনা করতেন। সুলেখক। তার অকালমৃত্যু মানা যায় না। ছোট্ট মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েকে একা করে যাবার কষ্ট ইফতেখার মাহমুদের জন্য নিশ্চয় মৃত্যুর চাইতে বেশি ছিল। ইফতেখার আপনাকে মনে থাকবে ভাই।”
‘আমরা যেন ইফতেখার মাহমুদকে ভুলে না যাই’
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক চঞ্চল আশরাফ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ইফতেখার মাহমুদ আমার ছাত্র ছিল। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি শুক্রবার বিকালে সাহিত্যের ক্লাস চালু করেছিলাম। ড্রয়িং রুমেই আমরা বসতাম। যতদিন ক্লাস চলেছে, ইফতেখারের উপস্থিতি অনিবার্য ছিল। খুব শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত, চিন্তাশীল, পরিপাটি আর মনোযোগী দেখেছি তাকে। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালের সম্ভবত মার্চের কোনো এক শুক্রবারের বিকালে। বিষণ্ন ছিল ওর মুখ, মনে পড়ে। সেদিন বাসায় কেউ ছিল না, ঋষভ ছাড়া। সে আমাদের জন্য চা বানিয়েছিল। ফোন করেই ইফতেখার এসেছিল। কথায় কথায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। অন্যমনস্ক ছিল কি, সে? যাওয়ার অনুমতি চাইলে বললাম, চলো এগিয়ে দিই। গলির দোকানে আমরা আবার চা খেলাম। ইফতেখার অন্যমনস্ক ছিল। মনে পড়ে। যদিও কথার চেয়ে তার প্রশ্ন ছিল বেশি। এরপর আর দেখা হয়নি। ফোনে আলাপ হতো। কিন্তু বেশি নয়। ২০২০ সালে একবার কথা হয়েছিল, করোনার সময়ে। তারপর তাও বন্ধ হয়ে গেল। আমার উচিত ছিল ইফতেখারের খবর নেওয়া। কোনো কারণ দেখিয়ে এই ত্রুটি এড়ানো যাবে না। যদিও মৃত্যুর সামনে সব অর্থহীন।
আজ যখন দুঃসংবাদটা শুনলাম, বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচঢ়ে গেল। অনেকের ফোন পেয়েছি। ওর এত অনুরাগী, জানতাম না। আমরা যেন ইফতেখার মাহমুদকে ভুলে না যাই। তার রচিত গ্রন্থগুলি সম্পর্কে আলাপের মধ্য দিয়ে সেটা সম্ভব হবে।”
ইফতেখার মাহমুদ
‘আর কিছু বলার সাধ্য আমার নেই’
কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “কথাশিল্পী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক, অপার সম্ভাবনাময় সংবেদনশীল মানুষ ইফতেখার মাহমুদ পৃথিবীতে তাঁর সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ফিরে গেলেন মহাকালের কাছে। বিদায় ইফতেখার। আর কিছু বলার সাধ্য আমার নেই।”
‘প্রিয় ইফতেখার, এই পৃথিবীর একটাই তো আকাশ’
কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের বন্ধু, গল্পকার, সুকথক এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মাহমুদ মারা গেছেন। খবরটা শোনার পর, কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি। না হতে হতে, কেবলই চোখে ও মনের পাতায় ভাসছিল ইফতেখার মাহমুদের হাসিমুখ এবং দরাজ কণ্ঠে কথা বলার স্বতন্ত্র সুন্দর ভঙ্গিটি। তিনি এত জানতেন, এমন আশ্চর্য সংবেদনশীল বোধ ছিল তাঁর। আর তাঁর লেখালেখি; বই, মানুষ ও সমাজ নিয়ে তাঁর নরম কণ্ঠের তীব্র ও অসাধারণ সুন্দর পর্যবেক্ষণের রেখা আমাদের বিস্মিত করে গিয়েছে একুশে বইমেলার সন্ধ্যাগুলোতে, কখনো ধানমন্ডিতে মীনা বাজারের আশেপাশে বা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে।
মনে পড়ছে.
ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছিলেন ইফতেখার মাহমুদ। অসুখটা গভীর ছিল। নিয়মমাফিক চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।
আজ তিনি চলেই গেলেন।
প্রিয় ইফতেখার, এই পৃথিবীর একটাই তো আকাশ, এই একই আকাশের নিচে কোথাও না কোথাও আছেন আপনি। শুধু জানা হবে না আর, কেমন আছেন?
ইফতেখার মাহমুদ রচিত গ্রন্থসমূহ
তবু যেখানেই থাকুন, আপনি শান্তিতে থাকুন। মহান আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন। অপরূপ নৈশব্দ্য ও সংবেদনশীলতার পুরোটা আপনার ওপর বর্ষিত হোক; এই প্রার্থনা করি।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য় ইফত খ র ফ সব ক র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে: জামায়াত সেক্রেটারি
বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি অভিযোগ তুলেছেন, “দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ভিত্তিতে ভারতীয়রা আমাদের বুদ্ধিজীবী তথা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।”
আরো পড়ুন:
টিটোর আত্মত্যাগে শত্রুমুক্ত হয় সাভার
বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্ম গেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট হল রুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ উত্থাপন করেন গোলাম পরওয়ার।
গোলাম পরওয়ার বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।”
স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দাবি করে গোলাম পরওয়ার বলেন, “বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সব দোষ জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত এবং তাদের এ দেশীয় এজেন্ট জড়িত ছিল; তা ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও লেখকদের লেখনি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।”
গোলাম পরওয়ারের ভাষ্য, “মূলত, ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও ভারতীয় পরিকল্পনায় তা দুই দিন বিলম্বিত হয়। আর এ দু’দিনে আমাদের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, আইনবিদসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। মূলত, যাদেরকে সে সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে হলেও ভারত ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের আদর্শবিরোধী ছিলেন। তাই তাদের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী কোনো সরকারই বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরঞ্চ আওয়ামী লীগ তদন্ত রিপোর্ট চাপা দিয়ে রেখেছে।”
এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি অভিযোগ করেন, “এমনকি চলচিত্রকার শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ঘটনা আজো রহস্যাবৃত্তেই রয়ে গেছে।”
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দিবসের মাত্র দুদিন আগে ঢাকাসহ সারা দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতেই এমন নৃশংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তান। এতদিন এই ইতিহাস চর্চিত হয়ে এলেও মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করছেন, ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাস বিতর্কে গোলাম পরওয়ারের প্রকাশ্যে এই দাবি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হলো স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনে জামায়াতের পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।
উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মু. আতাউর রহমান সরকার, জামাল উদ্দিন, মুহিবুল্লাহ ও নাসির উদ্দীন প্রমুখ।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই আমরা তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বিভাজন করতে চাই না। তারা যে আদর্শেরই হোন না কেন, তাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে চাই।”
তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “জাতি হিসেবে যারা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অপশক্তি। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বিজয়ের ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও এ হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা আজো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের হত্যার রহস্যের জট এখনো খোলেনি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল