কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 15th, January 2025 GMT
ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ (পুতুল) ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘মামলাটি তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এর আগে, গতকাল বিকেলে তহমুল ইসলাম (২৭) নামের এক যুবক কিশোরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তহমুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদরের উত্তর লতিবাবাদ এলাকার আবু তাহের ভূঁইয়ার ছেলে।
আরো পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে স্কুলছাত্রকে যৌন নির্যাতন, অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার
খুলনার সাবেক এমপিসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ সদর থানায় ১১টি মামলাসহ জেলায় প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় চার হাজার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০ হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। এই প্রথম কোনো মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আসামি করা হলো। মামলায় আবদুল হামিদ ৩ নম্বর আসামি। ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে; ২ নম্বরে আছেন শেখ রেহানা।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনে সংগঠিত ছাত্র-জনতার গড়ে ওঠা ঐক্য-আন্দোলনকে দমন করতে দেশ-বিদেশে অবস্থান করা ১ নম্বর থেকে ২০ নম্বর আসামি সারা দেশে গণহত্যার পরিকল্পনা করেন। সেই মোতাবেক তারা কিশোরগঞ্জে যাতে কোনো আন্দোলন হতে না পারে, সে জন্য ২১ থেকে ৪০ নম্বর আসামিদের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ৪১ থেকে ১২৪ নম্বর আসামিরা শটগান, বন্দুক, পিস্তল, ককটেল, বোমা ও দেশি অস্ত্র এবং অর্থ সরবরাহ করে আন্দোলন দমাতে এবং গণহত্যার নির্দেশ দেন। গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকায় ছাত্র–জনতার মিছিলে আসামিরা হামলা চালান। তারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে মামলার বাদীসহ সাক্ষীদের আহত করেন। এ ছাড়া আসামিরা গ্রেনেড, ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন।
মামলার বাদী তহমুল ইসলাম জানান, তিনি বিএনপির একজন কর্মী। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি এখন কিছুটা সুস্থ হওয়ায় মামলা করেছেন।
ঢাকা/রুমন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আবদ ল হ ম দ ক শ রগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
শিকারি ইসরায়েলকেই ভুক্তভোগী দেখাচ্ছে পশ্চিমারা
ইসরায়েল শুক্রবার সকালে কোনো উস্কানি ছাড়াই ইরানের অভ্যন্তরে ইস্পাহান ও তেহরানকে নিশানা করে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় বিজ্ঞানী, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, নারী-পুরুষসহ অনেক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারায়। অথচ পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মিডিয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘প্রিএম্পটিভ’ তথা সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে আগাম হামলা হিসেবে দেখাচ্ছে। মার্কিন সিনেটের নেতা জন থুন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইরানি আগ্রাসন’ বন্ধ ও আমেরিকার সুরক্ষার জন্যই ইসরায়েল হামলা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের পরও পশ্চিমা বিশ্ব শিকারি ইসরায়েলকে তারই শিকারদের দ্বারা আক্রান্ত এক ‘ভিকটিম’ বা ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল যখন বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠন করেছে, তখন থেকেই পশ্চিমাদের এ প্রবণতা স্পষ্ট। ইসরায়েল যতই ভূমি দখল করছে ও মানুষকে নিপীড়ন করছে, ততই পশ্চিমারা তাকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখাচ্ছে। এই উপস্থাপনা আকস্মিক বা কোনো দুর্ঘটনা নয়।
১৯৬৭ সালের জুন মাসের যুদ্ধে পশ্চিমারা ইসরায়েলকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখায়। তাকে ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এর ফলে পশ্চিমা খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দাঁড়ায় বহু গুণ, যারা আরব ও ফিলিস্তিনিদের অত্যাচারী হিসেবে দেখে। ইসরায়েলের ভূমি দখলের বিষয়টি আত্মরক্ষার সাহসী ভূমিকা হিসেবে উদযাপন করা হয়। এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমা বিশ্ব ‘ভুক্তভোগী’ ও ‘আগ্রাসী’র যে চরিত্র অঙ্কন করেছিল, তা এখনও চলমান।
১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০০ ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে সেখানে ইহুদি উপনিবেশ বানায়। এই দখলকে পশ্চিমা বিশ্ব অলৌকিক ঘটনা হিসেবে স্বাগত জানায়। ফিলিস্তিনিদের হারানো ভূমিতে জায়নবাদীরা যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, পশ্চিমারা কখনোই তার সমালোচনা করেনি। উল্টা ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের জন্য ইসরায়েলকে মহিমান্বিত করার পাশাপাশি পশ্চিমারা তাদের ছোট্ট রাষ্ট্রের জন্য বিলাপ করেছে। তারা ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভালোভাবেই এ দখলকর্ম চলছিল। ভাবটা এমন যে, ভুক্তভোগী হিসেবে ইসরায়েলের আরও ভূমি দখল করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে দাবি করেছেন, ‘এটি (ইসরায়েল) ছোট্ট একটি দেশ… ভূমির পরিমাণের দিক থেকে এটি ছোট দেশ।’
২৯ জুন ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম জেরুজালেমের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে গ্রহণ করে পরে ফিলিস্তিনি-জর্ডানি মেয়রকে বরখাস্ত করে। এভাবে পৌর পরিষদ ভেঙে পুরো শহরকে ইহুদীকরণ করে। দখলের পরপরই শহরটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে সব রকম নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন ইহুদি উপাসনালয় আবিষ্কার করতে সেখানে প্রত্নস্থল খনন এবং এ কাজ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনি অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে, যার মধ্যে ছিল চতুর্দশ শতাব্দীর ফখরিয়া হাসপাতাল ও আল তানজিকিয়া স্কুল। ১৯৮০ সালে ইসরায়েল অফিসিয়ালি শহরটিকে দখল করে নেয়, যদিও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনে একে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর নিচে ও আশপাশে তারা খননকার্য চালাতে থাকে এ আশায়– সেখানে ইহুদিদের প্রথম উপাসনালয় পাওয়া যাবে, যা আসলে পাওয়া যায়নি। এর পর শুরু হয় জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ কার্যক্রম। দখলকৃত এলাকায় তারা সময়ে সময়ে কারফিউ জারি করে এবং গণহারে মানুষকে শাস্তি দেয়। ইসরায়েলিরা এমনকি পশ্চিম তীরের নাম বদলে বাইবেলের কল্পিত নাম অনুসারে ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ রাখে, এভাবে শহর ও সড়কের নাম পাল্টে দেয়।
এ পথ ধরেই চলমান জেনোসাইড ঘটানো হচ্ছে ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলের পশ্চিমা সমর্থক ও তহবিলদাতারা এগুলোকে হয় প্রশংসা করেছে, না হয় এদের ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে।
এভাবে ইসরায়েল যতই তার শিকারদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে ততই যেন পশ্চিমা সমর্থন তার প্রতি বাড়ছে। আশ্চর্যের কিছু নেই– ইসরায়েলের সর্বশেষ ইরান হামলার পরই শুধু নয়; গাজায় গণহত্যামূলক অভিযান, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর সময়েও তার পশ্চিমা মিত্ররা সমর্থনের এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দৃষ্টিতে ইসরায়েল শুধু আত্মরক্ষাই করছে না, বরং পশ্চিমাদের প্রক্সি হিসেবেও কাজ করছে। ইসরায়েলের এই চলমান ধ্বংসযজ্ঞ আবারও স্পষ্টভাবে দেখায়– পশ্চিমারা কীভাবে ‘শিকার’ হিসেবে ভান করে; অ-পশ্চিমা শিকারদের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালায় এবং তার পক্ষে সম্মতি আদায় করে।
জোসেফ মাসাদ: অধ্যাপক, মডার্ন আরব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টেলেকচুয়াল হিস্টোরি, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক