কিশোরগঞ্জে নার্সের ভুলে ২ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
Published: 15th, January 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সের ভুলে দুই রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নার্সকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে দুই রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ডা.
অভিযোগ উঠেছে, অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশন অপারেশনের জন্য ওয়ার্ডের বেডে থাকা দুই রোগীকে পুশ করেন নার্স।
আরো পড়ুন:
‘খালেদা জিয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশ গেছেন, আর হাসিনা পালিয়ে’
ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল
তত্ত্বাবধায়ককে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অ্যাম্বুলেন্সচালক আটক
মারা যাওয়া রোগীরা হলেন- জেলার কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া গ্রামের ফালু মিয়ার ছেলে মো. মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২) ও নিকলী উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম (২২)।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মনিরুজ্জামান হার্নিয়ার অপারেশনের জন্য গত ৭ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন। খাদ্য নালিতে ছিদ্র থাকায় পেটে ব্যথা নিয়ে জহিরুল ইসলাম গত ১২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ বুধবার তাদের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
মারা যাওয়া রোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের আগে প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা বেগম ওয়ার্ডের বেডে দুই রোগীকে ইনজেকশন পুশ করেন। এর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই দুজন ব্যথায় কাতরাতে শুরু করেন। পরে তাদের মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, ‘নরকিউ’ নামে অ্যানেসথেসিয়ার ইনজেকশনটি অপারেশন থিয়েটারে পুশ করার কথা ছিল, কিন্তু নার্স ওই ইনজেকশনটি ওয়ার্ডের দুই রোগীকে পুশ করেন। মারাত্মক এই ভুলের কারণে দুই রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে বিক্ষোভ-মিছিল হয় হাসপাতালে। এতে স্থানীয় লোকজনও অংশ নেন। বিক্ষুব্ধরা হাসপাতালে ভাঙচুর করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মারা যাওয়া মনিরুজ্জামানের ভাই আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন, “নার্স ক্ষমার অযোগ্য ভুল করেছেন। তার কারণেই আমার ভাই মারা গেছেন। যে ইনজেকশন অপারেশন থিয়েটারে দেওয়ার কথা, সেটি ওয়ার্ডেই পুশ করেন নার্স। একই ভুল করা হয় আরেক রোগীর ক্ষেত্রেও। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না।”
মারা যাওয়া জহিরুলের চাচাতো ভাই মো. মোজাফ্ফর বলেন, “আমার ভাই আর্থিক সমস্যার কারণে প্রাইভেট হাসপাতালে না গিয়ে সরকারি হাসপতালে ভর্তি হয়।ভুল চিকিৎসার কারণে আমার ভাইকে হারিয়েছি। আমি ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। যেন এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।”
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ইতোমধ্যে অভিযুক্ত নার্সকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সের শাস্তির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।”
তিনি আরো বলেন, “অপারেশন থিয়েটারে রোগীদের চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়ার কথা ছিল। নার্স নাদিরা বেগম সার্জারি ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়েই রোগীদের ভুল ইনজেকশন পুশ করেন। যার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগীদের মৃত্যু হয়। তিনি যা করেছেন, সেটা ভুল করে করলেও অন্যায় করেছেন।”
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনাটি জানতে পেরে হাসপাতালে যাই। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করি। আমরা মারা যাওয়া দুিই রোগীর পরিবারকে আশ্বস্ত করেছি অভিযোগ দিলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প শ কর ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আল্লাহকে ডাকো বিনয় ও গোপনে’
দোয়া বা প্রার্থনা হল মুমিনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় এবং আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এটি শুধু একটি চাওয়া বা আবদার নয়, বরং এটি হল ইবাদতের নির্যাস ও মূল ভিত্তি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের দোয়া করার বিশেষ পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন, যা আমাদের ইবাদতের আদব ও আচরণকে নির্দেশ করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো বিনয় ও গোপনে; নিশ্চয় তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না। আর পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না এবং তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৫–৫৬)
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো বিনয় ও গোপনে; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।কোরআন, সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৫–৫৬এই দুটি আয়াতে দোয়ার পদ্ধতি, আদব ও এর প্রতিপালকদের গুণাবলি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়াতদ্বয়কে কেন্দ্র করে ইসলামের মনীষীগণ দোয়ার দুটি মৌলিক প্রকারভেদের আলোচনা করেছেন, যা আমাদের ধর্মীয় জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
দোয়া: ইবাদত ও প্রার্থনার যুগল বন্ধনইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, এই দুটি আয়াত দোয়ার দুই প্রকারের আদবকে অন্তর্ভুক্ত করে: দুয়া আল-ইবাদাহ (ইবাদতের দোয়া) এবং দুয়া আল-মাসআলাহ (প্রার্থনার দোয়া)। (মাজমূ’উল ফাতাওয়া, ১৫/৭, মাওকিয়ু আশ-শামিলা, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২৪ হি.)
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, কোরআনে দোয়া শব্দটি কখনো একটি অর্থে, কখনো অন্যটিতে, আবার কখনো বা উভয়ের সমষ্টিতে ব্যবহৃত হয়।
প্রার্থনার দোয়া হল, এমন কিছু চাওয়া যা দোয়াকারীর জন্য কল্যাণকর অথবা যা তার থেকে ক্ষতি দূর করে। আর যাকে ডাকা হয়, সেই সত্তাকে অবশ্যই ক্ষতি ও লাভের মালিক হতে হবে।
একারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন যা ক্ষতি বা উপকারের মালিক নয়। কোরআন মাজিদে বারবার এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না যা তোমার উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬)
ইবনে তাইমিয়ার মতে, এই দুই প্রকার দোয়া পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। প্রতিটি ইবাদতের দোয়া (যেমন নামাজ, রোজা) প্রার্থনার দোয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে, কেননা ইবাদতকারী ইবাদতের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর পুরস্কার ও কল্যাণ কামনা করে।
একইভাবে, প্রতিটি প্রার্থনার দোয়াও ইবাদতের দোয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ যে সত্তার কাছে চাওয়া হয়, তাঁকে মহিমান্বিত করা হয় এবং তাঁর প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুনজ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মহানবী (সা.) যে দুটি দোয়া শিখিয়েছেন২৬ নভেম্বর ২০২৫দোয়ার এই ব্যাপক ধারণাটি আরও স্পষ্ট হয় যখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন (তাদের বল) আমি তো নিকটেই। যে ডাকে, তার ডাকে আমি সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
এই আয়াতেও দোয়ার উভয় প্রকার অর্থই শামিল: বান্দা যখন কিছু চায়, তখন আল্লাহ–তায়ালা তাকে দেন (দুয়া আল-মাসআলাহ) এবং যখন সে ইবাদত করে, তখন আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেন (দুয়া আল-ইবাদাহ)।
কেউ কেউ দোয়ার সময় অহংকারের সঙ্গে এমনভাবে ডাকে, যেন সে তার প্রতিপালকের ওপর কোনো অনুগ্রহ করছে। এটি গুরুতর সীমালঙ্ঘন, যা আল্লাহর অপছন্দ।দোয়ার আদব: বিনয় ও গোপনীয়তাআরাফ-এর ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ–তায়ালা দোয়া কবুলের দুটি প্রধান শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন: তাদাররু’ (বিনয় ও কাকুতি-মিনতি) এবং খুফিয়াহ (গোপনীয়তা)।
১. বিনয় ও কাকুতি-মিনতি: দোয়ার সময় বান্দার মনকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। এটি আল্লাহর প্রতি চরম নির্ভরতা, দুর্বলতা ও ফকিরির বহিঃপ্রকাশ। যে ব্যক্তি বিনয়ী হয়ে দোয়া করে, সে আল্লাহর প্রতি নিজের বশ্যতা স্বীকার করে।
এর বিপরীত হল দাম্ভিকতা ও অহংকার। কেউ কেউ দোয়ার সময় অহংকারের সঙ্গে এমনভাবে ডাকে, যেন সে তার প্রতিপালকের ওপর কোনো অনুগ্রহ করছে। এটি গুরুতর সীমালঙ্ঘন, যা আল্লাহর অপছন্দ।
২. গোপনীয়তা: আল্লাহ তায়ালা দোয়াকে গোপনে করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর কারণ বহুবিধ:
ইখলাস বা একনিষ্ঠতা রক্ষা: গোপনে দোয়া করলে লোক দেখানোর বা রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়। এতে ইবাদতের ইখলাস পূর্ণতা পায়।
আল্লাহর নৈকট্য: আল্লাহ–তায়ালা তাঁর কাছে গোপনে ও নিঃশব্দে ফিসফিস করে চাওয়াকে পছন্দ করেন।
মনের উপস্থিতি: গোপনীয়তা মনের একাগ্রতা ও মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
দোয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করাকে ইবনে জুবাইর (রহ.) সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। (মা’হার ইবনে আবদুল হামিদ ইবনে মুকাদ্দাম, শারহুদ দোয়া মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ২০৩)
কোরআনের নির্দেশনায় গোপনীয়তা অবলম্বন করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সেরা উপায়।
সীমালঙ্ঘন থেকে সাবধানসুরা আরাফ-এর ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ–তায়ালা কঠোরভাবে সীমা লঙ্ঘনকারীদের প্রতি তাঁর অপছন্দ প্রকাশ করেছেন যে ‘নিশ্চয় তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ দোয়ার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন (আল-ই’তিদা) একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়:
১. প্রার্থনায় সীমা লঙ্ঘন: দোয়ায় এমন কিছু চাওয়া যা চাওয়া উচিত নয়, তা সীমা লঙ্ঘন। যেমন:
হারাম বা অবৈধ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা।
এমন কিছু চাওয়া যা আল্লাহর প্রজ্ঞা, প্রকৃতি বা শরীয়তের পরিপন্থী। যেমন: কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার দোয়া করা, নবুয়তের স্থান চাওয়া, বা মানবিক চাহিদা (খাদ্য, পানীয়) থেকে মুক্ত থাকার দোয়া করা।
আল্লাহর বিশেষ জ্ঞান বা ‘গায়েব’ প্রকাশের জন্য আবদার করা।
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা.) তাঁর ছেলেকে দোয়ায় জান্নাতের মধ্যে ‘সাদা প্রাসাদ’ চাওয়া শুনে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় এই উম্মতের মধ্যে এমন একদল লোক আসবে যারা পবিত্রতা অর্জন ও দোয়ার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৯৬)
আরও পড়ুনসুস্বাস্থ্য ফিরে পেতে নবীজিকে ফেরেশতা জিবরাইলের দোয়া ও উপদেশ১৭ অক্টোবর ২০২৫২. ইবাদতে সীমা লঙ্ঘন: দোয়াতে সীমা লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা বা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা।
ইবনে তাইমিয়া একে সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ শিরক হল ইবাদতকে তার সঠিক স্থান থেকে সরিয়ে ভুল স্থানে স্থাপন করা। (মাজমূ’উল ফাতাওয়া, ১৫/২৫, মওকিয়ু আশ-শামেলা, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২৪ হি.)
এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য স্থানেও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন, ‘আর তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো না; নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯০)
৩. দোয়ার ধরনে সীমা লঙ্ঘন: যেমন: অহংকার ও দাম্ভিকতা সহকারে দোয়া করা, যা বিনয় ও দীনতার পরিপন্থী। যে ব্যক্তি নিজেকে দুর্বল ও অভাবী মনে করে না, সেও সীমা লঙ্ঘনকারী।
কেবল ভয় বা কেবল আশা নিয়ে দোয়া করলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহর শাস্তির ভয় যেমন তাকে পাপ থেকে বিরত রাখে, তেমনি তাঁর করুণা লাভের আশা তাকে সৎকর্মে উদ্দীপিত করে। এই ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতাই দোয়াকারীকে সরল পথে পরিচালিত করে।দোয়া: ভয় ও আশাআরাফ-এর ৫৬ নং আয়াতে দোয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অবস্থার কথা বলা হয়েছে: ভয় ও আশা। ‘এবং তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) ব্যাখ্যা করেন, দোয়ার সময় মুমিনের অবস্থা এমন হওয়া উচিত যেন তার মধ্যে ভয় ও আশা পাখির দুটি ডানার মতো কাজ করে। (আল-জামে’ লিআহকামিল কুরআন, ৭/ ২২৪, মুআসসাসাতুর রিসালাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪২৭ হি., বৈরুত)
কেবল ভয় বা কেবল আশা নিয়ে দোয়া করলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহর শাস্তির ভয় যেমন তাকে পাপ থেকে বিরত রাখে, তেমনি তাঁর করুণা লাভের আশা তাকে সৎকর্মে উদ্দীপিত করে। এই ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতাই দোয়াকারীকে সরল পথে পরিচালিত করে।
দোয়াকে ইবাদতের মূল হিসেবে উল্লেখ করে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় দোয়াই ইবাদত।’ এরপর তিনি কোরআনের আয়াত পাঠ করেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৯৯)
এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, দোয়া এবং ইবাদত মূলত এক ও অভিন্ন। বিনয় ও গোপনীয়তার সঙ্গে দোয়া করাই আল্লাহর প্রকৃত ইবাদত, আর একে অস্বীকার করা বা এতে সীমালঙ্ঘন করাই হল অহংকার।
মোট কথা, পবিত্র কোরআন আমাদের দোয়া করার যে পদ্ধতি শিখিয়েছে, তা কেবল কিছু শব্দ উচ্চারণ নয়, বরং তা হল আত্মিক ও চারিত্রিক পরিশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া। দোয়া হতে হবে বিনয়ী, গোপনীয়, ভয় ও আশার সমন্বয়ে। এই নিয়মের বাইরে গেলেই তা সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত হয়, যা আল্লাহর অপছন্দ।
প্রতিটি মুমিনের উচিত, আল্লাহর এই নির্দেশ মেনে একনিষ্ঠভাবে ও বিনয়ের সঙ্গে তাঁর কাছে দোয়া করে তাঁর নৈকট্য ও করুণা অর্জন করা, কারণ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)
আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫