সাবেক উপাচার্যকে অভিযুক্ত করে সংগঠন থেকে অধ্যাপকের পদত্যাগ
Published: 15th, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অভিযুক্ত করে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগর।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
পদত্যাগপত্রে ওই অধ্যাপক উল্লেখ করেন, “সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার রাবির প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল) থেকে মনোনীত উপাচার্য হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ লঙ্ঘনসহ হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করে। ফলে বৈষম্যমূলকভাবে আমাকে রাবি ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “তারা এ বিশাল অনিয়মের বিরুদ্ধে রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নিষ্ক্রিয় ছিল। সম্প্রতি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার সমিতির অর্ডিন্যান্স ও প্র্যাকটিস পরিপন্থীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে থাকায় আমি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নিবন্ধন সদস্য ত্যাগ করলাম।”
এ বিষয়ে ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম আল বাকি বারকাতুল্লাহ বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না। তবে তার এ বিষয়টি অধ্যাপক আবদুস সোবহান স্যারের সময় থেকেই। সিন্ডিকেট কমিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় সোবহান স্যার তাকে না দিয়ে আবুল কালাম আজাদ স্যারকে চেয়ারম্যান করেছিল। আমার জানা মতে, তার বিরুদ্ধে পরীক্ষাসংক্রান্ত অনিয়মসহ বেশকিছু অভিযোগ ছিল।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, “আমরা এর সঙ্গে কীভাবে অভিযুক্ত হতে পারি? তিনি চেয়ারম্যান হবেন কি হবেন না, সেটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এখানে শিক্ষক সমিতির কোন সম্পর্ক নেই।”
অভিযোগকারী অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগরকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি।
সেখানে তিনি লিখেছেন, “রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ফ্যাসিস্টদের প্রভাবে বড় ফ্যাসিস্ট ছিলেন। তার প্রমাণ হচ্ছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করে অধ্যাপক আল বাকী বরকতুল্লাকে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন। গোলাম সাব্বির সাত্তার ফ্যাসিজমের মাধ্যমে অন্য বিভাগ থেকে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিক্ষককে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে।”
তিনি আরো লিখেছেন, “আমার জীবনের ভোগান্তির কারণ ছিল ফ্যাসিস্ট উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। এ ফ্যাসিস্ট শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সব গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে এখনো শক্তিশালী।”
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে তিনি লিখেছেন, “সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান তার সন্তানের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা নাতিপুতির কোটার পূর্ণ সুযোগ অতীতে নিয়েছেন, যদিও তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষ না। তার প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি ও রাজশাহী শহরে বেশকিছু জায়গা রয়েছে। তিনি ৫ আগস্টের আগে কোটা সংস্কারবিরোধী অবস্থানে নেতৃত্বে ছিলেন।”
“রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকারের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বিষয়ে অভিযোগ এনে এক ছাত্রী ফেসবুকে পোস্ট করেছে। আরো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে। আমি বিস্তারিত পরে ফেসবুক পেজে লিখব।”
এ বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তার পদত্যাগ নিয়ে আমার সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে আমি তার পদত্যাগপত্রটি ই-মেইলের মাধ্যমে পেয়েছি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে
বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ করার মোট হিসাব কিছুটা কমলে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে বেড়েছে।
দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সেবা ও পণ্য কিনে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৮৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা জুনের চেয়ে ৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা কম। জুনে এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯৫৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
একসময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি খরচ করতেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রবণতা ক্রমেই নিম্মমুখী হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে, যেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে বেশি খরচ করে। এর মধ্যে জুলাইয়ে শীর্ষে রয়েছে ক্রমান্বয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর। বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচের ৫০ শতাংশের বেশি এই কয়েকটি দেশে হয়েছে। তবে জুনের চেয়ে জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে বেশি খরচ করেছে বাংলাদেশিরা। বিপরীত দিকে আমেরিকায় খরচ কমিয়েছে।
বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য যেতেন। ভিসা কড়াকড়ির কারণে ভারতে খরচ কমেছে। বিপরীতে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বেড়েছে; ফলে ভারতের চেয়ে খরচও বেড়েছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ১৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা মোট খরচের ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে খরচের এ অঙ্ক জুনে ছিল ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একইভাবে জুলাইয়ে আমেরিকায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ১২১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা মোট খরচের ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আমেরিকায় খরচের এ অঙ্ক জুনে ছিল ১২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জুলাইয়ে থাইল্যান্ড গিয়ে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট খরচের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ভারতে ৬০ কোটি এবং মালয়েশিয়ায় ৫৯ কোটি এবং সিঙ্গাপুর ৫৪ কোটি টাকা কার্ডে খরচ করেছেন বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে গিয়ে প্রতি বছর ১২ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে পারেন। এই অর্থ কার্ডের মাধ্যমে খরচ করতে পারেন, আবার বিদেশে যাওয়ার সময় নগদ ডলারও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন। তবে কার্ডের মাধ্যমে ডলার পেমেন্ট করতে গেলে একবারে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত খরচ করার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা/নাজমুল/রাসেল