রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অভিযুক্ত করে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগর।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.

আব্দুল্লাহ আল মামুন বরাবর তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

পদত্যাগপত্রে ওই অধ্যাপক উল্লেখ করেন, “সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার রাবির প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল) থেকে মনোনীত উপাচার্য হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ লঙ্ঘনসহ হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করে। ফলে বৈষম্যমূলকভাবে আমাকে রাবি ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “তারা এ বিশাল অনিয়মের বিরুদ্ধে রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নিষ্ক্রিয় ছিল। সম্প্রতি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার সমিতির অর্ডিন্যান্স ও প্র্যাকটিস পরিপন্থীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে থাকায় আমি রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নিবন্ধন সদস্য ত্যাগ করলাম।”

এ বিষয়ে ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম আল বাকি বারকাতুল্লাহ বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না। তবে তার এ বিষয়টি অধ্যাপক আবদুস সোবহান স্যারের সময় থেকেই। সিন্ডিকেট কমিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় সোবহান স্যার তাকে না দিয়ে আবুল কালাম আজাদ স্যারকে চেয়ারম্যান করেছিল। আমার জানা মতে, তার বিরুদ্ধে পরীক্ষাসংক্রান্ত অনিয়মসহ বেশকিছু অভিযোগ ছিল।”

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, “আমরা এর সঙ্গে কীভাবে অভিযুক্ত হতে পারি? তিনি চেয়ারম্যান হবেন কি হবেন না, সেটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এখানে শিক্ষক সমিতির কোন সম্পর্ক নেই।”

অভিযোগকারী অধ্যাপক ড. মু. আলী আসগরকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি।

সেখানে তিনি লিখেছেন, “রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ফ্যাসিস্টদের প্রভাবে বড় ফ্যাসিস্ট ছিলেন। তার প্রমাণ হচ্ছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করে অধ্যাপক আল বাকী বরকতুল্লাকে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন। গোলাম সাব্বির সাত্তার ফ্যাসিজমের মাধ্যমে অন্য বিভাগ থেকে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিক্ষককে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে।”

তিনি আরো লিখেছেন, “আমার জীবনের ভোগান্তির কারণ ছিল ফ্যাসিস্ট উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। এ ফ্যাসিস্ট শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সব গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে এখনো শক্তিশালী।”

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে তিনি লিখেছেন, “সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান তার সন্তানের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা নাতিপুতির কোটার পূর্ণ সুযোগ অতীতে নিয়েছেন, যদিও তিনি পিছিয়ে পড়া মানুষ না। তার প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি ও রাজশাহী শহরে বেশকিছু জায়গা রয়েছে। তিনি ৫ আগস্টের আগে কোটা সংস্কারবিরোধী অবস্থানে নেতৃত্বে ছিলেন।”

“রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকারের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বিষয়ে অভিযোগ এনে এক ছাত্রী ফেসবুকে পোস্ট করেছে। আরো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে। আমি বিস্তারিত পরে ফেসবুক পেজে লিখব।”

এ বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তার পদত্যাগ নিয়ে আমার সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে আমি তার পদত্যাগপত্রটি ই-মেইলের মাধ্যমে পেয়েছি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদত য গ

এছাড়াও পড়ুন:

গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’

একাত্তরের পর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়নি। গত ১৫ বছর ছিল মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময় এবং ’২৪–এর গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও তা পুরোপুরি বদলায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত করা হয়েছিল। সেখান থেকে পরিবর্তনের এই পথে নারীদের উপস্থিতি অপরিহার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটরিয়ামে ডাকসুর উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, পূর্বে ছাত্রসংগঠনগুলোর নির্যাতনের ফলে ছাত্রদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে; এসব ঘটনা পরিবর্তন করাই ডাকসুর দায়িত্ব। তিনি বলেন, অতীতে বহু মানুষ র‌্যাব তুলে নেওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন। বহু পরিবার ভয়ে পথ চলতে পারেনি; অনেকে চোখের সামনে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, গুমের ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না, কমিশন প্রতিটি ঘটনার সত্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে।

গুম কমিশনের সদস্য ও বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত নাবিলা ইদ্রীস গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অনেককে ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাবিলা ইদ্রীস ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট টর্চার ও গেস্টরুম সংস্কৃতির প্রতিটি ঘটনা নথিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের পথে নারীদের উপস্থিতি অপরিহার্য।’

গুমের শিকার ব্যারিস্টার আহমেদ বিন মীর কাশিম (আরমান) বলেন, শত শত পরিবার এখনো জানে না তাদের প্রিয়জন জীবিত না মৃত, রাষ্ট্র তাদের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, গুম একটি জাতীয় ক্ষত, যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথম শর্ত হলো কঠোর জবাবদিহি।

গুমের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পুনর্বাসনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন আহমেদ বিন মীর কাশিম। তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প করা সম্ভব হলেও গুম পূর্ববর্তী পরিবারগুলোর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মিশনপ্রধান (ভারপ্রাপ্ত) হুমা খান বলেন, মানবাধিকার কোনো কঠিন বা জটিল বিষয় নয়। এটি খুব সহজভাবে বলা যায়, মানুষ হিসেবে সবাই সমান অধিকার পাবে, তাদের ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, রং বা শ্রেণি যা–ই হোক না কেন।

হুমা খান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা, কারণ জনগণের ট্যাক্সের অর্থেই তাদের বেতন চলে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও জনগণের সেবক—শাসক নন। আমাদের এই মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মই এ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার গভীর প্রত্যাশা, আপনারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলবেন, যা ন্যায়বিচার, সমতা ও পারস্পরিক সম্মান এই তিন মূলনীতির ওপর দাঁড়াবে।’

ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘যাঁরা মানবাধিকারকর্মীর নামে গুম–খুন এবং দমননীতিকে বৈধতা দিয়েছিলেন, তাঁরা “জাতির শত্রু”। তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশেও কিছু দল পুরোনো দমন নীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ হবে সব মানুষের অধিকার ও ইনসাফের দেশ, যেখানে গুম–টর্চার থাকবে না।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, ৭১-এর পর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়নি। গত ১৫ বছর ছিল মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময় এবং ২০২৪–পরবর্তী সময়েও তা পুরোপুরি বদলায়নি। তিনি বলেন, শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়—ব্যক্তি পর্যায় থেকে অন্যের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ