চার দশক ধরে খেজুর গুড় তৈরি করেন গাছি আবদুল গণি (৭০)। শীতের মৌসুমে ব্যস্ততা বেড়ে যায় তার। খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করেই চলে এই গাছির সংসার। গুড়-পাটালি নিয়ে তিনি বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হাজির হয়েছিলেন যশোরের চৌগাছা উপজেলা চত্ত্বরে আয়োজিত গুড়ের মেলায়। সেখানে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে ন্যায্য দামে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে পেরে খুশি তিনি।

অপর গাছি আবদুল কুদ্দুস (৩৫) তিন শতাধিক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় পাটালি বিক্রি করেন। গুড় মেলায় প্রায় ১০০ কেজি গুড়ি ও পাটালি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনিও। ক্রেতাদের সাড়া পেয়েছেন ভালো। 

শুধু আবদুল গণি কিংবা আবদুল কুদ্দস নয়, তাদের মতো প্রায় দুই শতাধিক গাছির খেজুর গুড়-পাটালির পসরায় জমজমাট হয়ে উঠেছে যশোরের চৌগাছার খেজুর গুড়ের মেলা। আজ সকালে উপজেলা চত্ত্বরে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করা হয়। ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলাটির উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

দুই বাঘাইড়ের দাম ৩ লাখ টাকা

পইলের মাছের মেলায় মানুষের ঢল

২০২৩ সালে যশোরের চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন প্রথম খেজুর গুড়ের মেলা চালু করে। তারই ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মতো এবারো মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এবারের মেলায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গাছি অংশ নেন। গাছিরা তাদের উৎপাদিত গুড়, পাটালি নিয়ে স্টল দিয়েছেন। গুড়, পাটালি বিক্রির পাশাপাশি এই শিল্পের সম্প্রসারণে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। গুড় মেলায় গাছিদের পাশাপাশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মানভেদে খেজুর গুড় ও পাটালি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসেন এনজিও কর্মী তৌফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “শীতের মৌসুমে বিকেল বেলায় বাবা রস সংগ্রহের জন্য খেজুরের গাছ কাটতেন। সংগ্রহ করা সেই রস জ্বালিয়ে মায়ের হাতের গুড় খাওয়ার জন্য গোল হয়ে বসে থাকতাম আমরা ভাই-বোনরা। এখন মা-বাবা নেই আর গাছও নেই। আমরা গুড় তৈরি করা দেখলেও আমার সন্তানরা তা দেখেনি। তাই সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছি। ঘুরে ঘুরে ওদের গুড় তৈরি ও গুড় দেখাচ্ছি। ওরা খুব আনন্দ পেয়েছে।”

গুড়ের ক্রেতা শিহাব উদ্দিন বলেন, “যশোরের গুড় স্বাদে মানে অন্যন্য। বাজারে গুড় কিনতে ভয় পায় ভেজালের কারণে। মেলার খবর শুনে চলে এসেছি; ঘুরে ঘুরে গুড় দেখছি; স্বাদ নিচ্ছি। নির্ভেজাল গুড় এখানে।”

মেলায় আগতদের গুড় দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা

মেলায় অংশ নেওয়া হুদা ফতেপুর গ্রামের গাছি নজরুল ইসলাম বলেন, “বিশ বছর ধরে গাছ কাটি। এবছর ৫২টি গাছ কাটছি (রস সংগ্রহ) করছি। খুব বেশি গুড় বানাতে  (তৈরি) পারিনি। গুড় বেশি হবে ফাল্গুন মাসে। এখন শীত বেশি, জিরেন (স্বচ্ছ) রস সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এক ভাড় রস ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি। গুড়ের চেয়ে রস বিক্রিতে বেশি লাভ।”

পাশাপোল গ্রামের গাছি আলম গাজি বলেন, “ত্রিশ বছর ধরে গাছ কাটি (রস সংগ্রহ)। এবারো ২৫টি গাছ কাটছি। গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এজন্য গুড় বেশি তৈরি করতে পারছি না। মেলায় গুড়-পাটালি এনেছি। ভালো দাম পাচ্ছি।”

মেলায় আসা সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিক বলেন, “২০২২ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা চালু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো মেলা হচ্ছে।  ইতোমধ্যে খেজুর গুড় যশোরের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খেজুর গুড়ের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও শিল্পের বিকাশে এই মেলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”

উপজেলা সমবায় অফিসার অহিদুর রহমান বলেন, “গাছিরা আগে সংগঠিত ছিল না। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১১টি ইউনিয়নে একটি করে গাছি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে। গাছিরা এখন সংগঠিত। তাদেরকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।” 

মেলার আয়োজক চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুস্মিতা সাহা বলেন, “খেজুর গুড় যশোরের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খেজুর গুড়ের অর্থনীতি সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে  মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে।”

যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, “খেজুর গুড়ের ঐতিহ্যকে সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। খেজুর গুড় উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই।”

এদিকে মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন গম্ভিরা, লাঠিখেলা, পিঠা উৎসব ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনের এই মেলা শেষ হবে আগামী শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি)।

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল র খবর ম ল র আয় আবদ ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তথ্য ফাঁসের অভিযোগে নাসার মিশন থেকে বাদ রাশিয়ার শীর্ষ নভোচারী

গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে রাশিয়ার এক অভিজ্ঞ নভোচারীকে নিজেদের আসন্ন মহাকাশ মিশন থেকে বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ৫৪ বছর বয়সী রাশিয়ার নভোচারী ওলেগ আর্টেমিয়েভের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নভেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত স্পেসএক্সের একটি স্থাপনার গোপন নথি ও রকেট সরঞ্জামের ছবি তুলেছেন। এরপর সেই ছবি তাঁর ফোনের মাধ্যমে পাচার করেছেন।

২০২৬ সালের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে নাসার স্পেসএক্স ক্রু-১২ মিশনে যাওয়ার কথা ছিল নভোচারী ওলেগ আর্টেমিয়েভের। তার বদলে রাশিয়ার নভোচারী আন্দ্রে ফেদিয়ায়েভকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার সরকারি মহাকাশ সংস্থা রসকসমস জানিয়েছে, আর্টেমিয়েভের চাকরি স্থানান্তরের কারণে এ পরিবর্তন করা হয়েছে।

আর্টেমিয়েভ স্পেসএক্সের যে সব ছবি তুলে ফাঁস করেছেন, তা মারাত্মকভাবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনসের লঙ্ঘন। এই নিয়ম মার্কিন সরকারের সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত নিয়ম। এই আইন অনুসারে প্রযুক্তি, তথ্যসহ মহাকাশযানের উপাদান ও প্রযুক্তিগত নকশা রপ্তানি বা প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

রাশিয়ান অনুসন্ধানী আউটলেট দ্য ইনসাইডার জানিয়েছে, আর্টেমিয়েভের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ঘটেছিল বলে  দাবি করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে প্রমাণিত হলে আর্টেমিয়েভকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হতে পারে।

মহাকাশ শিল্পসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক জর্জী ত্রিশকিন জানান, এই অভিজ্ঞ নভোচারী আইন গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন। যদি তদন্তকারীরা তাঁকে দোষী বলে সাব্যস্ত করে, তবে এর জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের শাস্তি হতে পারে। নাসা বা স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই তাঁকে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেহেতু ক্রু-১২ মিশনের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আর্টেমিয়েভকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ