নূর হোসেনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় মামলা
Published: 15th, January 2025 GMT
বন্দরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সহ-সভাপতি মোঃ নূর হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্য কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে আহতের ভাগ্নিা রাকিবুল ইসলাম বাদী হয়ে হামলাকারি শেখ সিফাত ও তার পিতা রিং শাহীন ও দাদাী রাশিদা বেগমসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে ও আরো ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৮(১)২৫ ধারা- ১৪৩/ ৩২৩/ ৩২৫/৩২৬/৩০৭/ ৫০৬ (২) পেনাল কোড। এর আগে গত রোববার (১২ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১০টায় বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
মামলা ও এলাকাবাসী তথ্য সূত্রে জানা গেছে আওয়ামীলীগের শাসনামলে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার শেখ শাহিন ওরফে রিং শাহীন ও তার ছেলে সিফাত ওরফে কাটা সিফাত একই এলাকার মামুন ড্রাইভারের ছেলে ব্লাক জুম্মান ও একরামপুর ইস্পাহানী এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে হোয়াইট জুম্মানসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা আওয়ামী সরকার শাঁসন আমলে বন্দর শাহীমসজিদ, খালপাড়, রাজবাড়ী,দত্তবাড়ী,হাফেজীবাগ,সালেহনগর ও রেল লাইনসহ আশ পাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ মাদক ব্যবসা করে আসছিল। ভিকটিম নূর হোসেন উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এলাকায় শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি র্তীব্র প্রতিবাদসহ থানা পুলিশের কাছে নালিশ দিলে এ ঘটনায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
এর জের ধরে শেখ সিফাতগং গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় নূর হোসেনকে খালপাড় মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে একা পেয়ে এলোপাথাড়িভাবে কোপায়। নূর হোসেনের ডাক চিৎকারে আশ পাশের লোকজন জড়ো হতে থাকলে অবস্থা বেগতিক বুঝে হামলাকারী সিফাত বাহিনী সটকে পড়ে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, নূর হোসেন জখমের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সুপারিগাছের ফেলনা খোলে থালা–বাটি, তৈজস, বদলাচ্ছে গ্রামটি
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার নিভৃত গ্রাম নাঙ্গুলি। একসময় সেখানে সুপারিগাছের খোল ফেলনা হিসেবে পোড়ানো হতো। এখন সেই খোলই জীবিকার ভরসা হয়ে উঠেছে।
ফেলনা বস্তুটি থেকে তৈরি হচ্ছে একবার ব্যবহারযোগ্য থালা, বাটি, পিরিচসহ নানা তৈজস। পরিবেশবান্ধব এ উদ্যোগ বদলে দিচ্ছে গ্রামের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।
প্রাচীন ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে কাউখালী উপজেলার একসময় সুখ্যাতি ছিল দূরদূরান্তে। বিশেষ করে এখানকার শীতলপাটি আজও দেশজুড়ে প্রশংসিত। কাউখালী শহরে যাওয়ার আগে মূল সড়ক থেকে পূর্ব দিকে প্রশস্ত খালপাড় ধরে একটি সরু রাস্তা চলে গেছে। রাস্তা ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এগোলেই নাঙ্গুলি গ্রাম।
খালপাড়েই বড় একটি টিনশেড ঘর। সামনে ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ন্যাচারাল বিউটি’। এটিই সেই কারখানা। ২০২৩ সালের শেষ দিকে গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা ইয়াসমিন ও তাঁর মামা ফরিদুল ইসলাম মিলে ছোট্ট কারখানাটি তৈরি করেন।
সম্প্রতি কারখানার ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এক পাশে স্তূপ করে রাখা সুপারির খোল। অন্য পাশে সারিবদ্ধভাবে মোড়কজাত করে রাখা হয়েছে উৎপাদিত পণ্য। ঘরের এক পাশে সারিবদ্ধ কয়েকটি আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (সেমি-অটো হাইড্রোলিক মেশিন)।
খালপাড়েই বড় একটি টিনশেড ঘর। সামনে ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ন্যাচারাল বিউটি’। এটিই সেই কারখানা। ২০২৩ সালের শেষ দিকে গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা ইয়াসমিন ও তাঁর মামা ফরিদুল ইসলাম মিলে ছোট্ট কারখানাটি তৈরি করেন।এই যন্ত্রে কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হলেও কিছু কাজ হাতেই করতে হয়। যন্ত্রের বিভিন্ন ছাঁচ (ডাইস) দিয়ে উচ্চ তাপে তৈরি হচ্ছে নানা সামগ্রী।
উদ্যোগের শুরু যেভাবেনিলুফা ইয়াসমিন থাকেন বরিশাল শহরে। তাঁর স্বামী রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বছর পাঁচেক আগে নিলুফা স্বামীকে নিয়ে কাউখালীতে মামা ফরিদুল ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন প্রচুর সুপারিগাছ দেখে খোল দিয়ে কিছু বানানোর ভাবনা মাথায় আসে তাঁর। ফরিদুল ইসলামকে জানালে তিনি সম্মতি দেন। সেই অনুযায়ী নিলুফা তাঁর স্বামীর মাধ্যমে যন্ত্রপাতির খোঁজখবর নেন। ভারতে তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির খোঁজ পান। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আনতে পারেননি। পরে তাঁরা গাজীপুরের একটি ওয়ার্কশপে ভারতের ওই যন্ত্রের আদলে যন্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেন। এক বছরের মাথায় তাঁদের উদ্যোগ সফল হয়।
বছর পাঁচেক আগে নিলুফা স্বামীকে নিয়ে কাউখালীতে মামা ফরিদুল ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন প্রচুর সুপারিগাছ দেখে খোল দিয়ে কিছু বানানোর ভাবনা মাথায় আসে তাঁর।উদ্যোক্তারা জানান, ২০২৩ সালের শেষ দিকে দুটি যন্ত্র সংযোজন করে কারখানাটি চালু করেন। শুরুতে খুব একটা সাড়া না পাওয়ায় মামা-ভাগনি কিছুটা হতাশ হন। স্থানীয় বাজারে পণ্যের চাহিদা না থাকায় প্রায় এক বছর লোকসান গুনতে হয়। এরপর তাঁরা অনলাইনে পণ্য বিক্রির চেষ্টা চালাতে থাকেন। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ঢাকার একজন অনলাইন উদ্যোক্তা অল্প কিছু ফরমাশ দেন এবং ভালো সাড়া পেয়ে চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহর থেকে ফরমাশ আসতে থাকে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ফরমাশের বিপরীতে পণ্য উৎপাদন করা যায় না। পরে আরও দুটি যন্ত্র সংযোজন করেন।
বর্তমানে মাসে ৬০ হাজার পণ্য উৎপাদনে সক্ষম কারখানাটি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আকারের থালা, বাটি, পিরিচ, খাবারের বাক্স ইত্যাদি। প্রতিটি ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়, যা হোটেল, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজক ও ক্যাটারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো কিনে থাকে।বর্তমানে মাসে ৬০ হাজার পণ্য উৎপাদনে সক্ষম কারখানাটি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আকারের থালা, বাটি, পিরিচ, খাবারের বাক্স ইত্যাদি। প্রতিটি ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়, যা হোটেল, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজক ও ক্যাটারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো কিনে থাকে।
পরিবেশবান্ধব এ পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে ভাবিনি এত সাড়া পাব। আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা বাড়ছে, তাতে কারখানার পরিধি বাড়াতে হবে। কিন্তু সেই পরিমাণ পুঁজি আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, অনেকেই এই কারখানা কীভাবে করতে হয় শিখতে আসছেন। এতে ব্যক্তি যেমন লাভবান হয়, তেমনি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরিবেশেরও উপকার করা সম্ভব। প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ গড়তে হলে এর বিকল্প নেই।
প্রথমে ভাবিনি এত সাড়া পাব। আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা বাড়ছে, তাতে কারখানার পরিধি বাড়াতে হবে। কিন্তু সেই পরিমাণ পুঁজি আমাদের নেই।ফরিদুল ইসলামফেলনা থেকে সম্ভাবনামামা-ভাগনির কারখানাটিতে বর্তমানে ছয়জন কর্মচারীর একটি ছোট দল কাজ করেন। মাসিক ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতনে তাঁরা কাজ করছেন। প্রতি মাসে কারখানায় প্রক্রিয়াজাত হয় প্রায় ২০ হাজার সুপারির খোল, যা স্থানীয় বাগানমালিকদের কাছ থেকে প্রতি ১০০টি ১৫০ টাকা দরে কেনা হয়।