শুধু সংসদ সদস্য নয়, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচক মণ্ডলী’ এর (ইলেক্টোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি। এ সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। 

কমিশন প্রস্তাব করেছে, আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্য প্রতি একটি করে ভোট; জেলা সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট এবং  প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট দেবে। 

আইনসভার মেয়াদ পূরণের আগে যদি প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে স্পষ্ট হয়, নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্যের সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয়কক্ষ ভেঙে দেবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র ষ ট রপত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রজননস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দারিদ্র্য বাড়ছে। টিকে থাকার কৌশল হিসেবে পরিবারগুলো মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার হারও বেশি। স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি, মাসিক স্বাস্থ্য সরঞ্জামের ঘাটতি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কৈশোর প্রজননস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুইডেন সিডার সহযোগিতায় আরএইচ স্টেপ ও প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।

‘কৈশোর প্রজননস্বাস্থ্যে জলবায়ুর প্রভাব’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে। বৈঠকে জলবায়ুঝুঁকি মোকাবিলায় সঠিক তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে পরিকল্পনা ও কার্যক্রম নেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাজেট বাড়ানো, সরকারি–বেসরকারি ও আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় বাড়ানো এবং পরিবারে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা।

বৈঠকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশুস্বাস্থ্য–এমসিএইচ সেবা) নাছির আহমদ বলেন, মা ও শিশুস্বাস্থ্যের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবাও এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। কৈশোর স্বাস্থ্যের বিষয় আরও পরে এসেছে। মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জনবলকাঠামো অনুসারে জনবল নিয়োগ দেওয়া দরকার। আশির দশকের মা ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব কেন্দ্র নতুন করে নির্মাণ করা দরকার। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মতো করে কেন্দ্রগুলো করা গেলে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য কার্যকর হবে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে সংকট মোকাবিলায় সীমিত সম্পদ ও জনবলের মধ্যেও পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ইকবাল কবির বলেন, কৈশোরকালীন প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয় কিশোর–কিশোরীরা ঠিকভাবে বোঝে না। এটা অভিভাবকেরা বোঝেন। তাই একটি ছেলে বা মেয়েকে কৈশোর অবস্থায় কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে, সে তথ্য তাঁদের জানানো উচিত। অভিভাবকদের উচিত সে তথ্য পরিবারের কিশোর–কিশোরীদের জানানো। তিনি ভোলার চরফ্যাশনের একটি মডেল প্রকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু সহনশীল পরিবার ও স্কুল গড়ে তুললে প্রজননস্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (জন্মনিরোধকসামগ্রী সরবরাহ সেবা) রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বছরে প্রতি হাজারে ৯২ কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছে। এটা ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। পরিবার পরিকল্পনা মানে শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী নয়, এটা একটা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। জীবন বাঁচাতে, জীবন সাজাতে ও জীবন রাঙাতে পরিবার পরিকল্পনা প্রয়োজন। পরিবার পরিকল্পনায় ১ ডলার বিনিয়োগে ১৪ ডলারের সুফল পাওয়া যায়। পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ কমে ৬৬ শতাংশ, অনিরাপদ গর্ভধারণ কমে ৪৫ শতাংশ।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (এমসিএইচ) মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কী কী করা প্রয়োজন, সেই চাহিদাগুলো তুলে আনতে হবে। যেসব এলাকায় সমস্যা বেশি সেসব এলাকার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।

ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কিশোর–কিশোরী। এই জনগোষ্ঠীকে যথাযথ সেবা দিতে না পারলে দেশ জনমিতিক লভ্যাংশ পাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেশের নিজস্ব তহবিল বাড়াতে হবে।

দুর্যোগের কারণে বছরে ৬৩ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এমসিএইচ) মো. মনজুর হোসেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির কারণে স্থানচ্যুতি, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট–সংকট, খাদ্যসংকট, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, স্বাস্থ্যসেবা সংকট, বাল্যবিবাহ বাড়ে। নারী ও কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ৬০ শতাংশ কিশোরী মাসিক স্বাস্থ্য সরঞ্জামের ঘাটতিতে থাকে। মাত্র ৩ শতাংশ পরিবার যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে পারে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে ৮১ শতাংশ, দুর্যোগপ্রবণ নয় এমন এলাকায় এ হার ৬৮ শতাংশ। ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫ (জলবায়ুঝুঁকি সূচক) প্রতিবেদন অনুসারে, বন্যা, অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড় ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে বছরে ৬৩ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়। বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩০০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারিহা হাসিন বলেন, জলবায়ুঝুঁকির কারণে স্থানচ্যুত মানুষেরা শহরে বস্তিতে চলে আসে। এ মানুষগুলোও যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য–ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। স্থানচ্যুতির কারণে এই মানুষদের জীবনমানে কী প্রভাব পড়ল, দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সেসব তথ্য তুলে আনা দরকার। গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে যদি পরিকল্পনা করা হয়, তবে তা কার্যকর হবে।

যথাযথ তথ্য–উপাত্তের জন্য গবেষণার ওপর জোর দেন আরএইচ স্টেপের উপপরিচালক এলভিনা মোস্তারী। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকারের কথা বলি, তখন স্বাভাবিক ও অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাতের কথা কারও মাথায় থাকে না। দুর্যোগের সময় যদি কোনো নারীর গর্ভপাত হয়, তখন তিনি কোথায় যাবেন, সে প্রশ্ন ওঠে। অথচ আগে থেকে সচেতন থাকলে এ ধরনের গর্ভপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন আরএইচ স্টেপের ব্যবস্থাপক (পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরামর্শ বিভাগ) তৌফিকুল করিম চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এমসিএইচ) মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক (এমসিইএইচ) শরীফ ওয়াসিমা পারভীন ও সহকারী পরিচালক (এমসিএইচ) বেলাল উদ্দিন আহমেদ, চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমসিএইচ সেবা) নিশাত তাসনিম ও চিকিৎসা কর্মকর্তা এঞ্জেলিকা দিবা পিউরিফিকেশন, পাথফাইন্ডারের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহবুবুল আলম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের উপদেষ্টা (যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার) সৈয়দ মো. নুরউদ্দিন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের পরামর্শক (বয়ঃসন্ধি স্বাস্থ্য) এহতেশাম কবির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা (প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য) মো. নুরুল ইসলাম খান, ব্র্যাকের জাতীয় সমন্বয়কারী (রাইট হেয়ার রাইট নাও–আরএইচআরএন–২) মো. মাসুদুর রহমান, নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক (নারী স্বাস্থ্য ও অধিকার) সামিয়া আফরিন, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) উপপরিচালক আবুল বরকত।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ