রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪
Published: 4th, February 2025 GMT
রাজশাহীতে অটোরিকশাকে একটি বাস চাপা দেওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়। এর আগে একইদিন সন্ধ্যায় মারা যান দুইজন। ওই ঘটনায় হাসপাতালে আরো তিনজন চিকিৎসাধীন।
রাতে হাসপাতালে মারা যাওয়া দুইজন হলেন- তানভীর ফেরদৌস ও সাব্বির রহমান। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় তাদের বাড়ি।
আরো পড়ুন: রাজশাহীতে অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে গেল বাস, নিহত ২
আরো পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে বাসচাপায় স্বামী-স্ত্রীসহ নিহত ৩
গুলিতে আহত অন্তঃস্বত্ত্বা জন্ম দিলেন ছেলে সন্তান
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, “নিহত আটোরিকশা চালক ইবরাহিমের ভাই ইসরাফিল বাদী হয়ে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে নাম না জানা বাস চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পলাতক।”
পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস গ্রামীণ ট্রাভেলস পবা উপজেলার নতুন কসবা এলাকার মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশা উল্টে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা সাতজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মধ্যরাতে আরো দুইজন মারা যান। মধ্যরাতে মারা যাওয়া দুইজন নির্মাণ শ্রমিক। তারা রাজশাহীতে কাজ শেষে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন দ ইজন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ লাখে শুরু, তিন বছরে মুনাফা আড়াই কোটি টাকা
করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে অনলাইন তথা ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল গ্রাহকদের। তখন থেকে দেশের প্রচলিত পণ্য পরিবহনের পদ্ধতি ও খরচ কমানোর কথা ভাবতে থাকেন উদ্যোক্তা রেজওয়ানুল হক জামি। ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি দিয়ে ২০২২ সালে বাসার গ্যারেজে কাঠ দিয়ে একটি ডিজিটাল লকার তৈরি করেন তিনি। এতে সফলতা পান। ব্যস, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
সে সময় গুলশানের এক চায়ের দোকানে হঠাৎ ১০ বছর পর দেখা হয় পুরোনো সহকর্মী মোরশেদুল আলমের সঙ্গে। গল্প ও আড্ডায় লজিস্টিক খাত নিয়ে বন্ধুকে কিছু করার পরিকল্পনা শোনান জামি। তাঁকে এর আগে ডিজিটাল লকারে সফলতা পাওয়ার কথা বলেন। এই স্টার্টআপ ধারণায় একমত হন দুই বন্ধু। কার্যত সেদিনই যাত্রা শুরু হয় ডিজিবক্স নামের নতুন স্টার্টআপের।
প্রথম দফায় এই উদ্যোগে বিনিয়োগ ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিজেরাই এসব অর্থ সংগ্রহ করেন। পাঁচটি ডিজিটাল লকার স্টেশন দিয়ে ব্যবসা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে আড়াই কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে লাভের অর্থ ভাগাভাগি না করে পুরোটাই তাঁরা অফিস পরিচালনা ও নতুন ডিজিটাল লকার স্টেশন তৈরিতে ব্যয় করেন।
যেখান থেকে শুরু
মোরশেদুল আলম ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক ভয়েস গেটওয়ে মসফাইভটেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সে সময় তুসুকা টেকনোট্রেড নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন রেজওয়ানুল হক। তখনই তাঁদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে রেজওয়ানুল হক অংশীদার হিসেবে জড়িত হন মসফাইভটেলে। এর পাশাপাশি তাঁরা আলাদা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। মোরশেদুল আলম বিমান ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে তাস লজিস্টিক ও সামসা নামের দুটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রেজওয়ানুল হক গড়ে তোলেন বিডিটিকেটস ডটকম ও ওএলএক্স ডটকম ডট বিডি।
২০২৩ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটিতে ডিজিবক্সের জন্য চার হাজার বর্গফুটের একটি অফিস নেওয়া হয়। পাশেই ছিল ডিজিটাল লকার তৈরির কারখানা। তখন মাসে গড়ে দুটি করে লকার তৈরি করা হতো। এখন মোট ৩১ জনবলে চলছে ডিজিবক্সের কার্যক্রম।
ভবিষ্যতে আমরা নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকায়ও ডিজিটাল লকার সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আগামী মাসে বক্স টু বক্স সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে “ডিজি প্লাজা” চালু করা হবে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরা ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নেওয়া যাবে।রেজওয়ানুল হক, সিইও, ডিজিবক্স।বর্তমানে দেশের ৫৫টি স্থানে এই ডিজিটাল লকার স্টেশন রয়েছে। এসব লকারে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বক্স রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ৩৬টি স্থানে এই ডিজিটাল লকার স্টেশন রয়েছে। অন্য লকার স্টেশনগুলো রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর সব কটি মেট্রো স্টেশনে তাদের এই ডিজিটাল লকার–সুবিধা আছে। একেকটি পয়েন্ট থেকে দিনে গড়ে প্রায় ৩০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া যায়।
ডিজিবক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকায়ও ডিজিটাল লকার সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আগামী মাসে বক্স টু বক্স সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে “ডিজি প্লাজা” চালু করা হবে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরা ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নেওয়া যাবে।’
বাংলাদেশের ই-কমার্স ও অনলাইন বাজারের আকার প্রায় ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ডেলিভারির বাজার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। প্রতিদিন সব মিলিয়ে এই খাতে পাঁচ লাখ ডেলিভারি হয়। আমাদের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ডেলিভারি করতে চাই।মোরশেদুল আলম, চেয়ারম্যান, ডিজিবক্স।যেভাবে সেবা দেয় ডিজিবক্স
ঢাকায় সব মেট্রো স্টেশন ও বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ে কমলা রঙের ডিজিটাল লকার। এসব ডিজিটাল লকারে থাকা পণ্য সংগ্রহে একজন গ্রাহক ৭২ ঘণ্টা সময় পান। এতে ডেলিভারির খরচ পড়ে ২২ থেকে ৪৫ টাকা। তবে এ জন্য অর্ডার করতে হবে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ বাংলাদেশে। সে ক্ষেত্রে অর্ডারের সময় গ্রাহককে ডিজিবক্স ডেলিভারি অপশন সিলেক্ট করতে হবে। তারপর ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে ডেলিভারিম্যান পণ্য ওই গ্রাহকের পছন্দমতো নিকটস্থ ডিজিবক্সে রেখে যাবেন। গ্রাহক তখন একটি এসএমএস পাবেন।
ডিজিবক্সে প্রায় এটিএম বুথের স্ক্রিনের মতোই একটি স্ক্রিন রয়েছে। সেখানে ‘রাইডার’ ও ‘কাস্টমার’ নামে দুটি অপশন আছে। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য রাখতে যাবেন, তখন রাইডার অপশন ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে গ্রাহকের জন্য রয়েছে কাস্টমার অপশন। সেখানে ই–মেইল বা মুঠোফোন নম্বর দিলে একটি ওটিপি কোড আসবে মেইলে বা মুঠোফোন নম্বরে। সেই কোড দিলে গ্রাহকের রাখা পণ্যের বক্সটি খুলে যাবে। এরপর গ্রাহক পণ্য সংগ্রহ করবেন।
যেকোনো ই–কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য ডিজিবক্সে নিবন্ধন করতে পারবে। এ জন্য সেই প্রতিষ্ঠানকে শুরুতে কোনো অর্থ দিতে হবে না। বর্তমানে দারাজ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, থাউজেন্ড ফিক্স ও অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এই ডিজিটাল লকার সেবা ব্যবহার করছে।
ডিজিবক্সের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ই–কমার্স ও অনলাইন বাজারের আকার প্রায় ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ডেলিভারির বাজার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। প্রতিদিন সব মিলিয়ে এই খাতে পাঁচ লাখ ডেলিভারি হয়। আমাদের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ডেলিভারি করতে চাই।’