Risingbd:
2025-12-06@01:41:06 GMT

চুম্বকে বাঁধা শেফালীর জীবন

Published: 4th, February 2025 GMT

চুম্বকে বাঁধা শেফালীর জীবন

একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা। যাতায়াতের রাস্তায় চুম্বকটি ফেলে হাতের রশি টেনে হেঁটে চলেন শেফালী বেগম। চুম্বকের আকষর্ণে সড়কে পড়ে থাকা লোহার টুকরো, পুরাতন ব্লেডসহ বিভিন্ন ধরনের লৌহজাত বস্তু আটকে যায় সেই চুম্বকে। পরে ওইসব বস্তু চুম্বক থেকে আলাদা করে বিক্রি করেন ৭০ বছর বয়সী এই নারী। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে শেফালীর একাকী জীবন। এটি শেফালীর বেঁচে থাকার পেশা।

সাদা-কালো চুলের শ্যামলা বর্ণের এই নারীকে অপরিচিতরা পাগল ভাবেন। তবে পরিচিতরা জানেন তিনি পাগল নন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বৃদ্ধ বয়সে তার পাশে নেই কেউ। পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তরপাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে শেফালী থাকেন। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কেউ না থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে তার।

কয়েকদিন আগে চাটমোহর পৌর সদরে কথা হয় শেফালী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার পৈত্রিক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। বাবা মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিক। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই, দুই বোন। বড় পরিবার পরিচালনা করতে হিমশিম খেতেন শেফালীর মৎসজীবী বাবা আব্দুর রহমান। শেফালী যখন ছোট তখন তার বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার।

এক পর্যায়ে কাজের সন্ধানে শেফালী চলে যান পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকতেন তিনি। যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। জিআরপি থানার তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা তার অসহায়ের কথা ভেবে আলম হোসেন নামে রংপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন শেফালীকে।

অন্ধকার জীবনে নতুন সংসার হয় শেফালীর। স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে সুখে-দুঃখে ভালোই দিন কাটছিল তাদের। প্রায় ১৫ বছর সংসার করার পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে পালিয়ে যান আলম। অনেক খুঁজেও স্বামীকে ফিরে পাননি তিনি। পরে শুনেছেন, অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসার করছেন আলম।

নদীপাড়ের ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শেফালী বেগম 

কী করবেন, কিভাবে চলবেন ভেবে না পেয়ে অভিমানে ঈশ্বরদী ছেড়ে জন্মভূমি চাটমোহরে ফিরে আসেন শেফালী। পৌর সদরে সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় তার জায়াগায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। সেখান থেকে নিমতলা এলাকায় বড়াল নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-এর পাশে সরকারি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় শেফালীর। কয়েক বছর পর সেখান থেকেও সরে যেতে হয় তাকে। সর্বশেষ গত ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট ভাঙা একটি ঝুপড়ি ঘরে।

শেফালী বেগম বলেন, “খেয়ে পরে জীবন চালানোর জন্য কিছু না কিছু তো করতে হবে। ভিক্ষা করে পেট চলে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ।”

তিনি বলেন, “ভোর হলে বেরিয়ে পড়ি যেদিকে মন চায় সেদিকে। মাঝারি আকৃতির একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা থাকে। চুম্বকটি রাস্তায় ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে চুম্বকটিকে টেনে হেঁটে চলি। চলার সময় চুম্বকের সঙ্গে আটকে যায় লোহার টুকরো, পুরাতন ব্লেড ও অন্য লোহার বস্তু। বিক্রি হয় না বলে ধারালো ব্লেডগুলো চুম্বক থেকে টেনে খুলে দেই। লোহার টুকরোগুলো বিক্রি করে যে টাকা পাই, তাতেই চলে আমার জীবিকা।”

তিনি আরো বলেন, “শুধু লোহা নয়, প্লাস্টিকও সংগ্রহ করতে হয়। প্রায় সারাদিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। লোহা-প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়েই জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। সংগ্রহ করা লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের বারান্দায় জমাই। কিছুদিন পরপর বিক্রি করি। যে টাকা পাই তা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।”

কুড়িয়ে আনা লোহার বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে শেফালী বেগম

শেফালী বলেন, “বাড়িঘর, ছেলে-মেয়ে কেউ নেই। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। অসুখ লেগেই থাকে। পেটের ভাত-কাপড়ের পাশাপাশি লাগে ওষুধ। তাই জীবন চালাতে কাজ করতে হচ্ছে। ভাঙা ঘরে শেয়াল কুকুর ঢোকে। রান্না করা ভাত কুকুরে খেয়ে যায়। বৃষ্টির সময় পানি পরে ঘরের চাল দিয়ে। একটা ঘর থাকলে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম। সরকারিভাবে একটা ঘরের ব্যবস্থা হলে শান্তিতে মরতে পারতাম।”

চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, “শেফালীর ব্যাপারটি আমি জানলাম। তিনি যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকেন সমাজসেবা অফিস থেকে বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।”

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, “তার (শেফালী বেগম) বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সরকারি প্রকল্পের ঘর খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না সেটি দেখা হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের শর্তে বদলাচ্ছে আইন, আয় কমবে রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থার

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অপ্রকাশযোগ্য চুক্তির শর্তের কারণে বিমা করপোরেশন আইন থেকে পুনর্বিমা (রি-ইনস্যুরেন্স) বিষয়ক ধারা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ধারাটি বাতিল হলে ব্যবসা কমবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনের। এ কারণে তারা উদ্বিগ্ন।

একটি বিমা কোম্পানি যখন দাবি পরিশোধে নিজের ঝুঁকি কমাতে অন্য একটি সংস্থা বা পুনর্বিমা কোম্পানির কাছে প্রিমিয়াম দেওয়ার ভিত্তিতে ঝুঁকির অংশবিশেষ বিক্রি করে, সেটাই হচ্ছে পুনর্বিমা।

বর্তমানে দেশের ৪৫টি বেসরকারি সাধারণ বিমা (নন-লাইফ) কোম্পানিকে ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় একমাত্র পুনর্বিমাকারী সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশনে করতে হয়।

বাকি ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা সাধারণ বীমা করপোরেশন অথবা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে করার সুযোগ রয়েছে।

বাধ্যতামূলকভাবে পুনর্বিমার সুবিধা পাওয়ার মাধ্যমে সাধারণ বীমা করপোরেশন যে আয় করে, তার অর্ধেক দেশের ৪৫টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে ভাগ করে দিতে হয়। ফলে লাভবান হয় সাধারণ বীমা করপোরেশন ও দেশের সব বেসরকারি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি।

আমরা বলেছি যে আইন সংশোধন করা হলে চূড়ান্ত অর্থে ক্ষতির মুখে পড়বে সরকার।মো. হারুন-অর-রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাধারণ বীমা করপোরেশন

এর বাইরে সাধারণ বীমা করপোরেশনের আয় কমার আরেকটি আশঙ্কার দিক রয়েছে। সেটি হলো, বর্তমানে সরকারি সম্পত্তি বা বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বাধ্যতামূলক পুনর্বিমা করতে হয় সাধারণ বীমা করপোরেশনে। সেটাও উন্মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়।

উন্মুক্ত হলে বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা বাড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসার সুযোগ বাড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি উন্মুক্ত করার শর্ত দিয়েছে।

নতুন আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগের কথা সরকারকে জানিয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তারা গত ১১ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পুনর্বিমাবিষয়ক ধারাটি বাতিল হলে দেশি কোম্পানিগুলো বিদেশে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পুনর্বিমা করতে পারবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাবে। পুনর্বিমা প্রিমিয়াম পরিশোধে বেড়ে যাবে মানি লন্ডারিংয়ের (অর্থ পাচার) ঝুঁকিও।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আইন সংশোধন করা হলে চূড়ান্ত অর্থে ক্ষতির মুখে পড়বে সরকার।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এনডিএতে (অপ্রকাশযোগ্য চুক্তি বা নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) বিমা করপোরেশন আইন সংশোধনের বিষয়টি আছে। তবে যতটুকু জানি, এ আইন সংশোধনের উদ্যোগ এনডিএ হওয়ার আগে থেকেই ছিল। ফলে এনডিএর শর্তের সঙ্গে সাম্প্রতিক উদ্যোগকে মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না।বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানযুক্তরাষ্ট্রের শর্ত

বিমার ধরন দুটি। একটি জীবনবিমা, অন্যটি সাধারণ বিমা। পণ্য, স্থাপনা, ব্যবসা ইত্যাদির ঝুঁকি কমাতে সাধারণ বিমা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিমা করা বাধ্যতামূলক, কিছু ক্ষেত্রে তা ঐচ্ছিক। সাধারণ বীমা করপোরেশন ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বিমা করপোরেশন আইনের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান বিমা করপোরেশন আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিমা করপোরেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ করার উদ্যোগ নিয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে দিতে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম স্বাক্ষরিত এ খসড়ার ওপর এরই মধ্যে মতামতও নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। মতামত ও খসড়াটি আবার পাঠানো হয়েছে আইডিআরএর কাছে। এখন চলছে খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ।

এনডিএর ‘সেবা’ অংশে উল্লেখ রয়েছে, বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক পুনর্বিমা ব্যবস্থা বাতিল করবে। সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে বিমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা ব্যবসা করার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হবে।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এনডিএতে (অপ্রকাশযোগ্য চুক্তি বা নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) বিমা করপোরেশন আইন সংশোধনের বিষয়টি আছে। তবে যতটুকু জানি, এ আইন সংশোধনের উদ্যোগ এনডিএ হওয়ার আগে থেকেই ছিল। ফলে এনডিএর শর্তের সঙ্গে সাম্প্রতিক উদ্যোগকে মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার কমানোর আলোচনার অংশ হিসেবে গত ১৩ জুন দুই দেশের মধ্যে এ এনডিএ হয়।

বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হারের ঘোষণা গত এপ্রিলে ছিল প্রথমে ৩৭ শতাংশ। তিন মাস পর জুলাইয়ে তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করে যুক্তরাষ্ট্র। দর-কষাকষি করে গত ১ আগস্ট তা ২০ শতাংশে চূড়ান্ত হয়। এনডিএর ‘সেবা’ অংশে উল্লেখ রয়েছে, বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক পুনর্বিমা ব্যবস্থা বাতিল করবে। সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে বিমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা ব্যবসা করার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হবে।

পুনর্বিমা থেকে আয় কত

সাধারণ বীমা করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সংস্থাটি ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা পুনর্বিমা প্রিমিয়াম আয় করেছে। পাঁচ বছর ধরে সংস্থাটি গড়ে প্রতিবছর কর–পূর্ববর্তী মুনাফা করে আসছে ৪০০ কোটি টাকা।

করপোরেশনটি বলছে, বর্তমানে নিজস্ব আয়ে কর্মরতদের বেতন-ভাতা ও অবসরভোগীদের পেনশন দিয়ে আসছে তারা। পুনর্বিমাবিষয়ক ধারাটি বাতিল হলে তাদের আয় ও মুনাফা কমে যাবে। পেনশন চালু রাখতে দরকার পড়বে সরকারের ভর্তুকি।

আইনে কী সংশোধন

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, সরকারি সম্পত্তি বা সরকারি সম্পত্তি সম্পর্কিত কোনো ঝুঁকি বা দায় সম্পর্কিত সব ধরনের নন–লাইফ বিমা ব্যবসায়ের অবলিখন (আন্ডাররাইট) এবং সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত বৈদেশিক ঋণ বা আর্থিক সাহায্যে পরিচালিত যেকোনো প্রকল্পের অবলিখনও ১০০ শতাংশ করবে সাধারণ বীমা করপোরেশন। ব্যবসায়ের ৫০ শতাংশ নিজের কাছে রেখে ৫০ শতাংশ সব বেসরকারি কোম্পানিকে সমহারে ভাগ করে দেবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, করপোরেশনের ১০০ শতাংশ অবলিখনের বাধ্যবাধকতা সরকার শিথিল করতে পারবে। নির্দিষ্ট অর্থ প্রাপ্তির বিপরীতে ঝুঁকি গ্রহণের কাজটিকে অবলিখন বলা হয়। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি কোনো সম্পত্তিতে বিদেশি অর্থায়ন জড়িত থাকলে সেসব সম্পত্তির বিমা করবে যে সংস্থা, তার আন্তর্জাতিক মান (রেটিং) থাকতে হবে। এ ছাড়া সরকার বা সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা থাকাকেই সরকারি মালিকানা বোঝানোর কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।

সাধারণ বীমা করপোরেশন বলেছে, তারা শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা। ফলে আন্তর্জাতিক মানের চেয়েও বেশি, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা পেয়ে থাকেন গ্রাহকেরা। এখন পর্যন্ত বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের বিমা ঝুঁকি গ্রহণে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রেটিং থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ অপ্রয়োজনীয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশি অর্থায়নের সব প্রকল্পের বিমা প্রিমিয়াম দেশের বাইরে চলে যাবে।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়া অনুযায়ী ৫০ শতাংশের কম মালিকানা থাকলেই তা বেসরকারি হিসেবে গণ্য হবে, যার অর্থ হচ্ছে এগুলোর পুনর্বিমা করার কোনো বিধানই আর থাকছে না।

সাধারণ বীমা করপোরেশন বিমা দাবি পরিশোধ করে না, আর পুনর্বিমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করে না বিমা কোম্পানিগুলো—এমন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলছে বছরের পর বছর ধরে। করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর কাছে সংস্থাটির পুনর্বিমা প্রিমিয়াম পাওনা আছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। আর সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে কোম্পানিগুলোর দাবি ৯৩০ কোটি টাকা (জরিপ প্রতিবেদনসহ), যদিও প্রাথমিক দাবি অনুযায়ী তা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

দেশের অন্যতম নন-লাইফ কোম্পানি গ্রিনডেল্টা ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা তারিক উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারণ ছাড়াই পুনর্বিমা দাবির টাকা বছরের পর বছর আটকে রাখছে করপোরেশন। যে সংস্থা দাবির অঙ্ক সময়মতো পরিশোধ করতে পারে না, আইন করে সেই সংস্থায় পুনর্বিমা করতে বাধ্য করা অন্যায়। তিনি বলেন, ‘আইন সংশোধনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পুনর্বিমা করার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। কেউ চাইলে শতভাগ পুনর্বিমা করপোরেশনে করবে, কেউ চাইলে সংস্থাটিতে তা আংশিক করবে অথবা কেউ চাইলে শতভাগ করবে বিদেশে।’

‘ঠিক হবে না’

দেশের বিমা খাত দুর্বল। এ খাতের প্রতি আস্থাহীনতা রয়েছে। বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ শতভাগ পুনর্বিমাও করে করপোরেশনের সঙ্গে। কেউ আবার শতভাগ পুনর্বিমা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে করতে চায়। পুনর্বিমা করার সুযোগ উন্মুক্ত হয়ে গেলে সাধারণ বীমা করপোরেশন আরও সংকটে পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাইন উদ্দিন পুনর্বিমা–সংক্রান্ত ধারা সংশোধনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি সংস্থার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা তুলনামূলক বেশি। আর দাবি উত্থাপিত হলে বেশির ভাগ বেসরকারি কোম্পানির তা পরিশোধের সক্ষমতা কতটুকু আছে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ হুবহু পাস করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি পুনর্বিমার একাংশ এখনো বাধ্যতামূলক থাকা উচিত। কত শতাংশ, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এখনই তা উন্মুক্ত করে দেওয়া ঠিক হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনডিএর শর্ত প্রসঙ্গে মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এটাই তো সমস্যা। তবে আমাদের বোঝা উচিত যে দুই দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা সমান নয়। আইন সংশোধন করার আগে বাংলাদেশকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ