সোমবার একই দিবসে দেশের দুইটি জিলা– শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরে যেইভাবে আট সাংবাদিকের উপর হামলার অঘটন ঘটিয়াছে, উহা ন্যক্কারজনক। ইহাদের মধ্যে শরীয়তপুরে সমকালের জিলা প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনকে ছুরিকাঘাত করিবার কারণে গুরুতর অবস্থায় জিলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। লক্ষ্মীপুরেও হামলার শিকার সাংবাদিকগণ হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন। আমরা মনে করি, কেবল স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বার্থেই হামলাকারীরা কোনো প্রকারেই ছাড় পাইতে পারে না। উপরন্তু আহতদের ন্যায়বিচার পাইবার প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ। 

সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীয়তপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারণে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান শেখ ও তাহার ভ্রাতার নেতৃত্বে সমকালের প্রতিনিধির উপর ছুরি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়া হামলা চালানো হয়। তাঁহাকে উদ্ধারে আগত অন্যান্য সাংবাদিকও হামলার শিকার হইয়াছেন। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরে সংবাদ সংগ্রহ করিতে যাইবার পথে সাংবাদিকদের বাধাদানের উদ্দেশ্যে চার সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। উভয় ক্ষেত্রেই স্পষ্টত যেই সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা হইয়াছে; হামলাকারীরা ছিঁচকে অপরাধী হইতে পারে না। আমরা আশঙ্কা করি, তাহারা বৃহৎ কোনো অপরাধী চক্রের সহিত সংশ্লিষ্ট। দুই জিলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই তাহাদের অবিলম্বে আইনি বেষ্টনীতে আনয়ন জরুরি। কিন্তু শরীয়তপুরে হামলার পর মামলা হইলেও পুলিশ এখনও কেন এই ভয়ংকর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করিতে অসমর্থ– উহা গুরুতর প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদিও বলিয়াছেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তাহারা সক্রিয়; অবিলম্বে গ্রেপ্তার ব্যতীত ভরসা পাইব কী প্রকারে? যাহারা প্রকাশ্য দিবালোকে সাংবাদিকের উপর হামলা চালাইতে পারে, তাহাদের খুঁটির জোর লইয়া সন্দেহ থাকিবার অবকাশ নাই। ঐ অভিন্ন কারণেই পুলিশের গদাইলস্করি চাল কিনা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খতাইয়া দেখিতে বলিব। 

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে দেখা গিয়াছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর অপরাধ জনসমক্ষে আনয়নের কারণে সাংবাদিকরা তাহাদের অলিখিত ‘শত্রু’ বলিয়া বিবেচিত হইয়াছিলেন। সাংবাদিকদের উপর হামলা এমনকি হত্যার ঘটনায়ও স্বজনরা বিচার পান নাই। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ শতাধিকবার পিছাইয়াছে। এমনকি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও সাংবাদিকরা লক্ষ্যবস্তু হইয়াছিলেন। তথাপি সাংবাদিকরা ঝুঁকি লইয়া সংবাদ সংগ্রহ করিয়াছেন এবং ইহাতে সংবাদমাধ্যমের পাঁচজন কর্মী শহীদ হইয়াছেন; আরও প্রায় শত সাংবাদিক আহত। সংগত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট সাংবাদিক সমাজের প্রত্যাশা অধিক। আমরা বিশ্বাস করিতে চাহি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল সাংবাদিকতার জন্য সুবর্ণ সময় হইয়া উঠিবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিগণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকার করিলেও সাংবাদিকদের উপর হামলা উহার বিপরীত চিত্রই তুলিয়া ধরিতেছে।

আমাদের বক্তব্য, সাংবাদিকদের উপর এহেন হামলা আর চলিতে পারে না। আমরা চাহিব, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন নির্দেশনা প্রদান করুক, যাহাতে এই সকল বিষয়ে তাহারা তৎপর থাকে। শরীয়তপুরে যেইভাবে সমকালের জিলা প্রতিনিধির উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করিয়াছে, উহা হত্যাচেষ্টা বৈ কিছু নহে। একজন ক্লিনিক ব্যবসায়ী, যে চিকিৎসকের অপরাধের বিরুদ্ধে সংবাদ করিবার কারণে তাঁহার পক্ষ লইয়া এমন হামলায় নেতৃত্ব দিয়াছে, তাহার খুঁটির জোর কোথায়? হামলার ২৪ ঘণ্টারও অধিক সময় অতিক্রান্ত হইবার পরও কেন তাহাকে গ্রেপ্তার করা যায় নাই, তজ্জন্য স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহি করিতে হইবে।

আমরা দেখিয়াছি, সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করিয়াছে। এই কমিশন গণমাধ্যম সংস্কার, তৎসহিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানেও কার্যকর সুপারিশ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। বিগত সময়ে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলি জনসমক্ষে আনয়ন আবশ্যক। সাম্প্রতিক শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিচার হইবার মাধ্যমেই অন্তর্বর্তী সরকারের সেই সদিচ্ছা প্রমাণ হইবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র সমক ল র ব দ কর অপর ধ হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার সাত কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগেই তীব্র সেশনজটে শিক্ষার্থীরা 

ঢাকা কলেজ চত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে শিক্ষার্থীরা ভর্তি-সংক্রান্ত কাগজপত্র পূরণ করছিলেন। তাঁদের কেউ এসেছেন অভিভাবক নিয়ে, কেউ আবার একাই। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজে দেখা মিলল এমন দৃশ্যের। ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির’ অধীনে চলমান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির অংশ হিসেবে এখানে ভর্তি কার্যক্রম চলছে।

কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তির কাজ করছেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় পাঁচ মাস ক্লাস করে ফেলেছেন। এমনকি আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদনও ১৯ নভেম্বর শেষ হয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ২৮ নভেম্বর, আর পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও প্রায় একই।

অথচ ঢাকার সরকারি সাত কলেজে ভর্তির কাজ শেষ করে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। আজ রোববার ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য একটি তারিখ ছিল। কিন্তু নতুন করে ভর্তিসংক্রান্ত কার্যক্রমের সময় ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৩০ নভেম্বর।

ঢাকা কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান আইনসিদ্ধ নয়। ‘কাঠামো কী হবে, আমরা কোন অবস্থানে থাকব—এগুলো এখনো পরিষ্কার নয়। তাই এসব নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত প্রথম বর্ষে ক্লাস নেওয়ার পক্ষে নই,’ বলেন তিনি। 

এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সেশনজটে। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্রুত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রকাশ ও ক্লাস শুরু না হলে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।

এ পরিস্থিতির সমাধান সহজ—কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশিত মডেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। এ কে এম ইলিয়াস, অধ্যক্ষ, ঢাকা কলেজ ও অন্তর্বর্তী প্রশাসক, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিসংকট ও শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা

আগে থেকেই ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। ৭ কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।

আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ২১ অক্টোবর ২০২৪ তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ