SunBD 24:
2025-12-09@03:37:27 GMT

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Published: 4th, February 2025 GMT

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতারআগরতলা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভিসা সেবা চালু হচ্ছে কালফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিতরমজানে দুর্নীতিমুক্ত ত্রাণ প্যাকেজ চালু করবে পাকিস্তানরিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানজেনিথ ইসলামী লাইফের সব সূচকেই প্রবৃদ্ধি১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই নির্বাচন হতে হবে: গোলাম পরওয়াররমজানে কম লাভ করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারগুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.

৯৪ শতাংশ

উৎস: SunBD 24

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তঃসত্ত্বার আস্থার নাম হোসনেয়ারা 

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চন্দ্রশেখরদী গ্রামে থাকেন হোসনেয়ারা বেগম। ১৯৯০ সালে তিনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করানোর বিষয়ে সরকারি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। টানা ৩৬ মাস চলে সেই প্রশিক্ষণ। তখন থেকে উপজেলার নানা গ্রামে গিয়ে কাজ করেন তিনি। 

৩৫ বছর ধরে হোসনেয়ারা বেগম বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করান। এই কাজের উৎসাহ পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি জয়বাহার আক্তারের কাছ থেকে। তিনি বিনা মূল্যে প্রসব করানোর কাজ করতেন। মা ও নবজাতকের হাসি দেখে আনন্দ পান, তাই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানালেন হোসনেয়ারা। 

বিপদের বন্ধু হোসনেয়ারা

২০০২ সালের আগস্ট মাসের কথা। এক রাতে দাউদকান্দির এক অন্তঃসত্ত্বা রহিমা আক্তারের প্রসবব্যথা ওঠে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুর্ঘটনায় তাঁকে বহন করা নৌকার সামনের অংশ ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় হোসনেয়ারা বেগমকে।

খবর পেয়ে হোসনেয়ারা অন্তঃসত্ত্বা রহিমা বেগমের বাড়িতে যান। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যমজ সন্তান প্রসব করান। তাদের শারীরিক অবস্থা নাজুক ছিল। নবজাতকদের মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করেন। তাদের নাম রাখা হয় সালমা আক্তার ও আমেনা আক্তার। জন্মের ছয় মাস পর আমেনার মৃত্যু হয়। আর সালমা বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন।

সেই ঘটনা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে নিজের গ্রাম ও আশাপাশের গ্রামে হোসনেয়ারার কাজ বেড়ে যায়। সবাইকে তিনি হাসিমুখে সেবা দেন। নিজের আন্তরিক চেষ্টা ও কর্মগুণে অল্প দিনেই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বিপদের বন্ধু হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আস্থা ও ভরসা বাড়তে থাকে।

৩৫ বছর ধরে হোসনেয়ারা বেগম বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করান। এই কাজের উৎসাহ পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি জয়বাহার আক্তারের কাছ থেকে। তিনি বিনা মূল্যে প্রসব করানোর কাজ করতেন।

মাতৃমৃত্যুর ঘটনা নেই

হোসনেয়ারা বেগম একা কৃতিত্ব নিতে চান না। তিনি তাঁর শাশুড়ি ও পরিবারকল্যাণ সহায়িকা রৌশনারা আক্তারের কৃতিত্বের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, টানা ৩৫ বছরে তাঁর হাতে কমপক্ষে ১১ হাজার নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। একটি মাতৃমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। 

নিজে অসুস্থ থাকলেও খবর পেলে অন্তঃসত্ত্বার কাছ ছুটে যান। এমন একটি ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ঝড়বৃষ্টির রাতে তিনি অসুস্থ ছিলেন। খবর পান, তাঁর গ্রামের সুলতান মিয়ার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা জোসনা আক্তারের ভীষণ প্রসবব্যথা। ঝড়বৃষ্টির কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তখন তিনি অসুস্থ শরীরে ওই বাড়িতে যান। সুস্থভাবে প্রসব করান। 

আরেকটি ঘটনা ২০১৮ সালের ঈদুল আজহার দিনের। হোসনেয়ারা সকাল থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় খবর আসে পাশের মাইথারদিয়া গ্রামের ইউনুস মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শান্তি আক্তার প্রসবব্যথায় ছটফট করছেন। খবর পেয়ে  তিনি সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করান। সেখান থেকে পাশের পাঁচভিটা গ্রামে মনি নামের আরেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব করাতে যান। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে যায়। 

হোসনেয়ারা বেগমের ভাষ্য, মানবসেবার মধ্যেই তিনি ঈদের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন। স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য তিনি এখন পর্যন্ত কোনো পুরস্কার পাননি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মা। তাঁর স্বামী হযরত আলী ২০২৪ সালের ৬ মার্চ মারা যান। যত দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকবেন, তত দিন আনন্দ নিয়ে কাজটি করে যেতে চান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ