শহীদ রাষ্ট্রপ‌তি জিয়াউর রহমান স্মৃ‌তি ব‌্যাড‌মিন্টন টুর্না‌মেন্ট ২০২৫ এর ফাইনাল খেলার পুরষ্কার বিতরণী অনু‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে।

১২ নং ওয়ার্ড যুবদ‌লের আয়োজ‌নে বৃহস্প‌তিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) রা‌তে নগরীর ডন চেম্বা‌রে এই ফাইনাল খেলার পুরষ্কার বিতরণী অনু‌ষ্ঠিত হয়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগ‌র যুবদ‌লের সদস‌্য আশরাফুল হক তান্নার সভাপ‌তি‌ত্বে পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠা‌নে প্রধান অ‌তি‌থি হি‌সে‌বে উপ‌স্থিত ছি‌লেন মহানগর যুবদ‌লের আহ্বায়ক ম‌নিরুল ইসলাম সজল। বি‌শেষ অ‌তি‌থি হি‌সে‌বে উপ‌স্থিত ছি‌লেন মহানগর যুবদ‌লের সদস‌্য স‌চিব সা‌হেদ আহা‌ম্মেদ।

পুরুষ্কার বিতরণের পূ‌র্বে প্রধান অ‌তি‌থির বক্ত‌ব্যে মহানগর যুবদ‌লের আহ্বায়ক ম‌নিরুল ইসলাম সজল ব‌লেন, আজকের যুবসমাজ হবে আগামী বাংলাদেশের কান্ডারি। সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে যুব-সমাজকে প্রস্তুত হতে হবে। যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। যুবক ও কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলার মধ্যে রাখতে হবে। খেলাধুলা করলে যেমন শরীর ভালো থাকে তেমনি মনও ভাল থাকবে।

এসময় মহানগর যুবদ‌লের নেতৃবৃন্দ সহ বি‌ভিন্ন ইউনি‌টের নেতৃবৃন্দরা উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ষ ক র ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

খাবার খেয়ে, গান শুনে গুলি করে হত্যা

আপ্যায়নের কোনো ঘাটতি রাখেননি ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী। সকালবেলায় পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন বোখারির নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সেনাসদস্য তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। ক্যাপ্টেন বীরদর্পে নানা রকম হুকুম চালাচ্ছিলেন। যথাসাধ্য তা তামিল করছিলেন প্রবীণ শিল্পী ভূপতিবাবু। বিস্তর খানাপিনার আয়োজন করলেন। পানাহার শেষে ক্যাপ্টেন আদেশ দিলেন গান শোনানোর।

শিল্পী ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরের গাঙ্গাটিয়া এলাকার জমিদার। বহুগুণের অধিকারী দয়ালু স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেছেন চারুকলা বিষয়ে। গত শতকের চল্লিশের দশকে কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে চারুকলায় শিক্ষা সমাপন করে স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করতেন। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ওয়াস পদ্ধতিতে প্রাচ্যকলা রীতির কাজ করতেন ভূপতিবাবু। কলকাতায় প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর কাজ। শিল্পকলাচর্চার পাশাপাশি উচ্চাঙ্গসংগীতেরও নিয়মিত চর্চা করতেন। খুব ভালো গাইতে ও এসরাজ বাজাতে পারতেন। তাঁর গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায়। সে কারণেই হানাদার ক্যাপ্টেন গান শোনানোর হুকুম করেছিলেন তাঁকে।

ভূপতিনাথের অসম্মত হওয়ার প্রশ্নই ছিল না। প্রাণের ভয় কার না আছে। হানাদার পাকিস্তানি সেনারা তখন সারা বাংলায় মেতে উঠেছে বর্বর গণহত্যায়। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কোনো বাছবিচার ছিল না তাদের। ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন আরও লাখ লাখ ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের মতোই। আশ্রয় নিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী গোবিন্দপুর গ্রামের জ্ঞাতি সুধীর চন্দ্র ভট্টাচার্যের বাড়িতে। রাজাকাররা তা জানত। তারা সেখান থেকে ভূপতিনাথকে আটক করে গাঙ্গুটিয়ার বাড়িতে হানাদার সেনাদের কাছে নিয়ে আসে।

পাকিস্তানি সেনাদের আদর-আপ্যায়ন করে, গানবাজনা শুনিয়ে ভূপতিনাথ চক্রবর্তী ভেবেছিলেন, তাঁর বিপদ কেটে গেছে। খানিকটা স্বস্তি এসেছিল তাঁর মনে। কিন্তু অচিরেই তাঁর সেই ভুল ভেঙেছিল চরম মূল্যে। বিকেল চারটার দিকে ফিরে যাওয়ার সময় হানাদার সেনারা ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী, তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র তপনকুমার চক্রবর্তী ও দুই কর্মচারীর হাত বেঁধে ফেলে। বাড়ির উঠানে মন্দিরের সামনে কদমগাছের তলায় তাঁদের দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ঠান্ডা মাথার এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৭ মে।

শহীদ শিল্পী ভূপতিনাথ চক্রবর্তীর ছবি ও প্রাচ্যকলা পদ্ধতিতে আঁকা তাঁর দুটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিদর্শনের সঙ্গে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে গ্রামের দোকানে কেনাকাটা করছে খদ্দের। অন্য ছবিটি একান্তই ঘরোয়া মুহূর্তের। এক প্রবীণা নানি বা দাদি হতে পারেন, পরম যত্নে চুল বেঁধে দিচ্ছেন এক তরুণীর। ছবি দুটির পাশে শিল্পী ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর হত্যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

শহীদ ভূপতিনাথ চক্রবর্তীর বড় ছেলে মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর সঙ্গে গত শুক্রবার কথা হলো মুঠোফোনে। তিনি গাঙ্গুটিয়ায় তাঁদের বাড়িতেই থাকেন। বয়স প্রায় ৯০ বছর। নিঃসন্তান। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে প্রায় ৭ বছর আগে। এখনো তিনি ও জ্যাঠাতো বড় ভাই তপনকুমার চক্রবর্তীর বিধবা স্ত্রী এই বাড়িতে থাকেন। তিনি জানালেন, ঘটনার দিন ৭ মে মা ও দুই ভাই বাড়িতেই ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন আত্মগোপনে। এরপর তিনি সেদিনের সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণা করেন ও বাবার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেন।

শহীদ ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ