Samakal:
2025-05-01@09:46:47 GMT

মৌশিল্প

Published: 15th, February 2025 GMT

মৌশিল্প

যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন প্রাণী কৃষিক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখছে? উত্তরে নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র প্রাণী মৌমাছির কথা খুব কম মানুষই বলবে। এটিই বাস্তবতা। এক দশক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর পোকামাকড় বিশেষ করে মৌমাছি পরাগায়নের ক্ষেত্রে যে সেবা দেয়, তার আর্থিক মূল্য ১৩১ বিলিয়ন পাউন্ড; যা বিশ্ব কৃষির প্রায় এক-দশমাংশ। আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক গবেষণামতে, এই সেবার আর্থিক মূল্য বর্তমানে প্রায় ৪১০ বিলিয়ন পাউন্ড। মৌমাছি আমাদের অস্তিত্বের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে জাতিসংঘ ২০ মে তারিখকে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘পৃথিবী থেকে মৌমাছি যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তাহলে মানুষ বড়জোর চার বছর বাঁচবে।’  

অন্য অনেক ফসলের মতো মধু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০০-১৫০ টন মধু আহরণ করা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার টন মধু উৎপাদন হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা ১ থেকে দেড় লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। 
দেশে মধু বিপণন ও বাজারজাতকরণে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আস্থা প্রতিষ্ঠিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই দেশি মধুর ওপর আস্থা রাখতে পারেন না বলে বিদেশি ব্র্যান্ডকে গুরুত্ব দেন। অনেক ছোট চাষি এখন নিজস্ব ব্র্যান্ডে মধু বাজারজাত করে থাকেন। তার পরিমাণ খুবই কম। 

মধুর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কমোডিটি মার্কেট ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের মার্কেট আমাদের দেশে নতুন বা স্বল্প পরিচিত হলেও উন্নত বিশ্বে এটি অত্যন্ত পরিচিত এবং ব্যাপকভাবে চর্চিত। কৃষিপণ্যের দাম সাধারণত প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় স্টক মার্কেটগুলোতে নির্ধারিত হয়। আমাদের দেশে মধুসহ বিভিন্ন পণ্যের যথাযথ ভ্যালু চেইন স্টাডি করা হয় না। ফলে মুনাফার সঠিক বণ্টন সম্ভব হয় না এবং এর সিংহভাগ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে। কমোডিটি মার্কেটের একটি ভালো দিক হলো, মধ্যস্বত্বভোগীরা এখানে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে না। 
অনেকে খাঁটি ভেবে বিদেশি মধু বেশি পছন্দ করেন। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশের মধুই উত্তম। কারণ, নিজ এলাকার মধু সে এলাকার মানুষের জন্য ওষুধ এবং তাতে সে এলাকার রোগ-
জীবাণুর প্রতিষেধক রয়েছে। যেমন– সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকে। এ কারণে এই মধু জমে যায়। 

সমন্বয়হীনতা, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং বাজারজাত করার অনিশ্চয়তার কারণে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদিত মধুর নিরাপদ ও যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সম্ভাবনাময় মধুর বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন ক্ষুদ্র মৌচাষিরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ক্রমান্বয়ে মৌ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। 
সম্ভাবনাময় মৌশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে গবেষণা, নিরাপদ উৎপাদন, বিনিয়োগ, মান নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়সাধনের জন্য ‘মৌ নীতি’ প্রয়োজন। মৌমাছির কোনো ব্রিডিং সেন্টার না থাকার কারণে মৌচাষিরা নিজেরাই ব্রিডিং করে রানী উৎপাদন এবং ব্যবহার করছেন। দেশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌমাছির ব্যবস্থাপনা মোটামুটি ঠিক থাকলেও বাকি সময় যখন ফুল থাকে না, প্রাকৃতিক খাদ্য থাকে না, তখন ফিডিংয়ের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলে কালক্রমে নানা সমস্যায় মৌমাছির জাত দুর্বল হচ্ছে। উন্নত জাত সংরক্ষণে বছরব্যাপী মৌমাছি এবং রানীর পরিচর্যা এবং মৌশিল্প রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘ব্রিডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। 

সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ: প্রধান উপদেষ্টা, উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতি ও নির্বাহী পরিচালক, শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম-শিসউক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’

ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্‌রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ