বিয়ের আসরে বসার আগেই প্রাণ গেলো বরের
Published: 6th, March 2025 GMT
ঢাক ঢোল পিটিয়ে বরযাত্রীকে সাথে নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি আর যাওয়া হরো না বর মুন্না গৌড় (২২)-এর। বিয়ে করতে শ্বশুড়বাড়ি যাওয়ার আগেই পথিমধ্যে গাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে তার।
গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মুন্না গৌড় জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রাজকী চা বাগানের গৌড় লাইন এলাকার আসুক গৌড়ের ছেলে।
বরের সাথে আসা বরযাত্রী অভিনাশ গৌড় জানান, বুধবার বিকাল ৫টায় জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রাজকী চা বাগানের গৌড় লাইনে পাত্রের বাড়ি থেকে ৭০ জন বরযাত্রী নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের নতুন লাইন এলাকার সম্পদ রাজগৌড়ের মেয়ে সুমি রাজগৌড়কে বিয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন মুন্না গৌড়। রাত সাড়ে ৯টায় কনের বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে পৌঁছার পর বরের গাড়িসহ বরযাত্রী বহনকারী গাড়িগুলো দাঁড় করানো হয়। এসময় সবাই গাড়ি থেকে নেমে কেনাকাটা করেন।
তিনি আরো জানান, এসময় বর মুন্না সবার সাথে হাসিখুশিভাবে কথাবার্তাও বলেন। প্রায় বিশ মিনিট যাত্রাবিরতির পর যখন সবাই গাড়িতে উঠে বিয়েবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন, তখনই বর মুন্না চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। সাথে সাথে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তার জ্ঞান না ফেরায় তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্নাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হবু বরের এমন মৃত্যুর সংবাদ পাত্রখোলা চা বাগানে কনের পিত্রালয়ে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সাজেদুল কবীর বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আনার পর ছেলেটির পালস, শ্বাস-প্রশ্বাস সব বন্ধ পাই। তারপরও আমরা আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠাই।”
ঢাকা/আজিজ/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কমলগঞ জ উপজ ল বরয ত র উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস