বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে পান্তা ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় এ উৎসবের আয়োজন করেন ডুজার সদস্যরা।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডুজার সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

টিএসসিতে ‘ভালো কাজের হালখাতায়’ মনের যত কথা

রাত পোহালেই আনন্দ শোভাযাত্রা, প্রস্তুতি প্রায় শেষ

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান ডুজার সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “সাংবাদিকদের সহযোগিতায় খুব ভালোভাবে আমরা আয়োজন (আনন্দ শোভাযাত্রা) শেষ করতে পেরেছি। এতো বড় আয়োজন, আমরা আগে কোন সময় করিনি।”

তিনি বলেন, “ডুজা শুরু থেকে এ আয়োজনে আমাদের সঙ্গে ছিল। এ রকম সুন্দর একটা আয়োজনের জন্য ডুজাকে ধন্যবাদ জানাই।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব

পলাশীর যুদ্ধের আড়ালে ব্রিটিশরা ভারতের বুকে, বিশেষ করে গঙ্গা অববাহিকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে নোঙর ফেলে। এর পরপরই গ্রেট ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটে যায়। তার প্রভাব ঔপনিবেশিক সক্রিয়তায় সুদূর গাঙ্গেয় অববাহিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল।

গঙ্গাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ছোট থেকে মাঝারি নানা শিল্পের কারবার। ধীরে ধীরে ভারী শিল্পের কারখানাও তৈরি হয় এখানে। শস্য-শ্যামল কৃষিকেন্দ্রিক বঙ্গভূমিতে এরপর শিল্পের জোয়ার আসে। সভ্যতার বুকে যখনই এমন বিকাশ ঘটেছে, মানুষের মধ্যেও নতুন নতুন পূজা–পার্বণ উপাচারের প্রবৃত্তি জন্মাতে দেখা গেছে।

গাঙ্গেয় অববাহিকায় তাই শিল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেকালে ঠিক এমন একটি পূজার চল শুরু হতে দেখা যায়। এ পূজার চল বাংলার বাইরে প্রায় চলেই না। বিশ্বকর্মাপূজা হলো এমন একটি হিন্দু উৎসব।

তবে মহাভারতে উল্লেখ আছে, বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা। হাজার রকমের কারুকার্যের সৃষ্টিকর্তা। দেবতাদের ছুতার মিস্ত্রি, দক্ষ কারিগর ও সব অলংকারের রূপকার।

আধুনিককালে এর আগে বিশ্বকর্মাপূজার উৎসের কথা প্রমাণসহ জানা যায়নি। ভারতের উৎসব নিয়ে ব্রিটিশ গবেষক এম এম ডানহিল জানিয়েছেন, বিশ্বকর্মাকে একটি ঘটরূপে পূজা করা হয় এবং ঘটের সামনে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখা হতো।

তবে মহাভারতে উল্লেখ আছে, বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা। হাজার রকমের কারুকার্যের সৃষ্টিকর্তা। দেবতাদের ছুতার মিস্ত্রি, দক্ষ কারিগর ও সব অলংকারের রূপকার।

এ কারণে বঙ্গভূমির ছুতার, কামার, স্বর্ণকার, ধাতুশিল্পের কারিগর ও রাজমিস্ত্রি—এই পাঁচ পেশার শ্রমজীবীরাই প্রধানত বিশ্বকর্মাপূজার প্রচলন শুরু করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকরাও বিশ্বকর্মাপূজায় নিজেদের নৈবেদ্য নিবেদন করতে থাকেন।

আরও পড়ুনজন্মাষ্টমী: মানবমুক্তির এক ঐশ্বরিক আবির্ভাব১৬ আগস্ট ২০২৫

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে বিশ্বকর্মা হলেন স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা। তিনিই বিভিন্ন হিন্দু স্থাপত্য গড়ে তুলেছিলেন বলে মনে করা হয়। কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা তাঁর হাতেই গড়া। এ ছাড়া রামায়ণের লঙ্কা নগরী, ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, দেবতাদের স্বর্গপুরী, তাঁদের হাতের বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, যেমন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্রসহ মহাভারতে পাণ্ডবদের মায়া সভা, হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ তাঁরই পরিকল্পনায় তৈরি।

এ ছাড়া মৎস্যপুরাণের মতে, কূপ ও জলাশয় খনন, প্রতিমা নির্মাণ, বাড়ি ও বাগানের পরিকল্পনা—এসবও বিশ্বকর্মার মাধ্যমে নির্মিত বলে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন। কিংবদন্তি আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথদেবের তিন ভাই–বোনের মূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেছিলেন।

বিশ্বকর্মাপূজা বিষয়ে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো প্রতিবছর গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের ১৭ সেপ্টেম্বরই (প্রায় প্রতিবছরেই) পালিত হয়ে থাকে এই পূজা। হিন্দুদের অন্যান্য পূজার সময় চাঁদের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ধারিত হলেও বিশ্বকর্মার পূজার সময় সূর্যের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

এ নিয়ম অনুসারে সূর্য যখন সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে, তখন উত্তরায়ণের শুরু। এ সময়ে দেবতারা স্বর্গে নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং বিশ্বকর্মার পূজার আয়োজন শুরু করে দেন।

১৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে থাকে এই পূজা। হিন্দুদের অন্যান্য পূজার সময় চাঁদের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ধারিত হলেও বিশ্বকর্মার পূজার সময় সূর্যের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

হিন্দু পঞ্জিকা বলে, বিশ্বকর্মাপূজার দিনটি ‘কন্যা সংক্রান্তি’তে পড়ে। দিনটি ভারতীয় সৌর বর্ষপঞ্জি এবং বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ সৌর ক্যালেন্ডারে ভারতীয় ভাদ্র মাসের শেষ দিন। হিন্দু পঞ্জিকার দুটি প্রধান শাখা—সূর্যসিদ্ধান্ত ও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত। উভয় পঞ্জিকার এই বিষয়ে মত অভিন্ন। সূর্য যেহেতু প্রতি রাশিতে মোটামুটি এক মাস করে অবস্থান করে, তাই বিভিন্ন রাশিতে সূর্যের গমনের দিন স্থির।

প্রায় প্রতিবছরই সূর্য ১৭ সেপ্টেম্বর কন্যা রাশিতে গমন করে আর সেদিনই পালিত হয় বিশ্বকর্মাপূজা। তবে এর পেছনে অন্য কোনো ঐতিহাসিক তথ্য বা কারণ আছে কি না, তা জানা যায় না। এটি এখন প্রথায় পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুনগণেশ চতুর্থী: মঙ্গলের দেবতার আরাধনা২৭ আগস্ট ২০২৫

বিশ্বকর্মার জন্ম নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনি আছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার জন্ম। আবার ভবিষ্যপুরাণ মতে, অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাসের ঔরসে এবং বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম। আবার স্কন্দপুরাণ মতে, বিশ্বকর্মার ৫টি মুখ ও ১০টি হাত।

বিশ্বকর্মার মূর্তি নিয়েও জনমানসে মতভেদ আছে। কখনো তাঁকে দেখা গেছে ব্রহ্মার রূপে, মুখে সাদা দাড়ি। এমনটি ঋগ্‌বেদের বর্ণনায় পাওয়া যায়। আবার তাঁকে কখনো তিনটি বা চারটি মাথাতেও দেখা যায়।

কারণ হিসেবে বলা হয়, চতুর্দিকের সব সৃষ্টিকে অনায়াসে দেখতে পাবেন বলেই এমনটা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর হাতের সংখ্যা অধিকাংশ সময়েই চারটে কিংবা তার বেশি। বাহন হিসেবে দেখা যায় পাঁচটি সাদা হাতি।

পরবর্তী সময়ে একটিমাত্র কালো হাতিই থাকে বাহন হিসেবে। এখনকার বিশ্বকর্মার রূপে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন এখন তাঁর বাহন হিসেবে হাতি থাকে, চারটি হাত আর একটি মাথা দেখা যায় প্রতিমায়। মুখমণ্ডল দাড়িবিহীন। তবে সরু করে ছাঁটা গোঁফের রেখা থাকে।

এই পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘুড়ি উত্‍সবও। এদিন বাড়ির ছাদে বা বড় খোলা মাঠের প্রাঙ্গণে আবালবৃদ্ধবণিতাকে রংবেরঙের নানা আকারের, নানা নামের ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যায়।

বিশ্বকর্মা সম্পর্কে বেদে এমন বর্ণনা আছে, ‘তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের পিতা, যিনি সমস্ত স্থান ও প্রাণের তদারককর্তা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা।’

বিশ্বকর্মাপূজার চল সাধারণত বেশির ভাগ কলকারখানায় থাকলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘুড়ি উত্‍সবও। এদিন বাড়ির ছাদে বা বড় খোলা মাঠের প্রাঙ্গণে আবালবৃদ্ধবণিতাকে রংবেরঙের নানা আকারের, নানা নামের ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যায়। এক পক্ষ অপর পক্ষের ঘুড়ি কেটে দিলে সেই পক্ষ ভোঁ-কাট্টা বলে দুয়ো দিতে থাকে। সে এক আনন্দমুখর খেলা বটে!

বিশ্বকর্মাপূজার দিন হিন্দু বাঙালি পরিবারে আবার রান্না পূজার চল আছে। রান্না পূজা আসলে একধরনের প্রাচীন শস্যোৎসব। একে অরন্ধন পূজাও বলা হয়ে থাকে। আগের দিনের রান্না করা খাবার খাওয়া হয় এই দিনে। নবান্নের মতোই বাংলার আরও একটি শস্য উৎসবের নাম রান্না পূজা।

বিশ্বকর্মাকে কিন্তু কৃষিরও দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়। সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে, যার সঙ্গে কৃষিকাজ জড়িত। আর সেই উপলক্ষেই শস্য উৎসব উদ্‌যাপিত হয় এই রান্না পূজার মধ্য দিয়েই।

দীপান্বিতা দে: শিশুতোষ গ্রন্থপ্রণেতা ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুনরাখিবন্ধন: ভেদাভেদ ভুলে মানবতার উৎসব০৯ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি