৩৮ কেজি ওজনের ৫ ফুট লম্বা কোরাল, ধরা পড়ল বড়শিতে
Published: 20th, April 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে বড়শিতে ধরা পড়ল ৫ ফুট লম্বা ও ৩৮ কেজি ১৫০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ। ধরা পড়া মাছটি বাজারে আনার পর ৪৭ হাজার টাকায় কিনে নেন এক ব্যবসায়ী। আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাফ নদীর ট্রানজিট জেটিঘাট এলাকায় মাছটি ধরা পড়ে।
টেকনাফ পৌরসভার ট্রানজিট জেটিঘাটের ইজারাদার আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা নুর কবির নামের এক ব্যক্তির বড়শিতে এ মাছটি ধরা পড়েছে। তিনি আজ বিকেলের দিকে বড়শি ফেলেও কোনো মাছ পাননি। ঘরে ফিরে যাওয়ার আগমুহূর্তে আবার বড়শি ফেললে বড় একটি কোরাল মাছ ধরা পড়ে। বড়শি টেনে জেটিতে তোলা হলে স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকেরা মাছটি একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন।
টেকনাফ বাসস্টেশন মাছ বাজারের সভাপতি মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, আজ সন্ধ্যার পরে নুর কবির একটি বড় কোরাল মাছ নিয়ে বাজারে আসেন। তিনি মাছটির দাম হাঁকেন ৪৭ হাজার টাকা।
বড়শির মালিক নুর কবির বলেন, ধরা পড়া মাছটি ৪৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন তিনি। টেকনাফ পৌরসভার পুরোনো পল্লানপাড়ার বাসিন্দা মো.
মাছ ব্যবসায়ী আমির হামজা বলেন, তিনি প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা দামে মাছটি আগামীকাল সোমবার বাজারে বিক্রি করবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখন সাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে নাফ নদী এর আওতাভুক্ত নয়। পাশের দেশ মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তৎপরতার কারণে বাংলাদেশি জেলেদের অনেকে জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। তাই তাঁরা বড়শিতে মাছ ধরছেন। নাফ নদীতে এখন প্রায় সময় কোরাল মাছ ধরা পড়ছে। এখানকার কোরালের স্বাদও বেশ ভালো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৪৭ হ জ র ন ফ নদ বড়শ ত
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কে আসলে নেতানিয়াহুকে কীভাবে গ্রেপ্তার করবেন জোহরান
নিউইয়র্ক নগরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বারবার বলে আসছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে পা রাখলেই তিনি তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে (এনওয়াইপিডি) নির্দেশ দেবেন। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আইসিসি। এর মধ্যে ক্ষুধাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা ও বেসামরিক নাগরিকদের হামলার নিশানা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ সত্ত্বেও নেতানিয়াহু ৩ ডিসেম্বর ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি শিগগিরই নিউইয়র্ক সফরের পরিকল্পনা করছেন। তিনি আইসিসির পরোয়ানা কার্যকর করার বিষয়ে জোহরান মামদানির বক্তব্যকে উড়িয়ে দেন।
জোহরানের গ্রেপ্তারের আর নেতানিয়াহুর নিউইয়র্ক সফরের ঘোষণা আসার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে—আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একজন বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা কি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নগরের মেয়রের আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে প্রথমে আইসিসির বিষয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বুঝতে হবে। আইসিসি প্রতিষ্ঠার চুক্তি ‘রোম স্ট্যাটিউট’-এর (রোম সংবিধি) স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কেউ–ই নেই।
ইসরায়েল প্রথমে চুক্তিটিতে সই করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তার নাগরিক ও মিত্রদের ওপর আইসিসির বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের বিরোধিতা করে আসছে।
ফিলিস্তিন ২০১৫ সালে ‘রোম স্ট্যাটিউট’-এ যোগ দেয়। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসির প্রাক্-বিচারিক চেম্বার নিশ্চিত করেছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের ওপর আদালতের বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে।রোম স্ট্যাটিউটের ১২ থেকে ১৫ ধারা অনুযায়ী, আইসিসি যেসব পরিস্থিতিতে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে সেগুলো হচ্ছে—অপরাধী কোনো স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের নাগরিক হলে বা অপরাধটি কোনো স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ঘটলে; কোনো স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র আদালতকে কোনো পরিস্থিতি বিচারের জন্য পাঠালে; নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায় অনুযায়ী কোনো পরিস্থিতি বিচারের জন্য পাঠালে; কোনো অ-সদস্যরাষ্ট্র আদালতের কাছে অ্যাডহক ঘোষণার মাধ্যমে তার বিচারিক ক্ষমতা গ্রহণ করলে অথবা প্রসিকিউটর যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে নিজে থেকেই তদন্ত শুরু করলে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
ফিলিস্তিন ২০১৫ সালে ‘রোম স্ট্যাটিউট’-এ যোগ দেয়। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসির প্রাক্-বিচারিক চেম্বার নিশ্চিত করেছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের ওপর আদালতের বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গাজায় অনাহারের পরিস্থিতি সৃষ্টি ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
মার্কিন রাজনীতিকে কি নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন জোহরান
আইসিসির নিজস্ব কোনো গ্রেপ্তারি বা প্রয়োগকারী ব্যবস্থা নেই। এটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করে। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে সম্পদ জব্দ করা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল। আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের তদন্তে বাধা দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আইসিসির আদেশ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হলে আন্তর্জাতিক আইন বিকল্প হিসেবে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’–এর বিধান দেয়। এই নীতি অনুযায়ী, যেকোনো রাষ্ট্র গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের—যেমন গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ, তা যেখানেই ঘটুক বা অপরাধীর জাতীয়তা যা–ই হোক—অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে।
সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বেশ কয়েকটি দেশ সফলভাবে বিদেশি কর্মকর্তাদের বিচার করতে এই নীতি ব্যবহার করেছে। যেমন—২০১৪ সালে গাম্বিয়ার সাবেক মন্ত্রী উসমান সোনকোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা ও ফ্রান্সের একটি আদালতের মাধ্যমে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বেশ কয়েকটি দেশ সফলভাবে বিদেশি কর্মকর্তাদের বিচার করতে এই নীতি ব্যবহার করেছে। যেমন—২০১৪ সালে গাম্বিয়ার সাবেক মন্ত্রী উসমান সোনকোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা ও ফ্রান্সের একটি আদালতের মাধ্যমে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েলও ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ নীতির সুযোগ নিয়েছিল
আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নির্দেশ করছে, ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’র নীতিটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনি যুক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, অ্যাডলফ ইচম্যান-এর বহুল পরিচিত মামলা, যিনি ‘হলোকাস্টের স্থপতি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ওই ঘটনায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ১৯৬০ সালের মে মাসে ইচম্যানকে আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে জেরুজালেমে নিয়ে আসে। সেখানে তাঁর বিচার হয়। আদালত ইচম্যানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৯৬২ সালের ১ জুন তাঁকে রামলার আয়ালন কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
ইসরায়েল আর্জেন্টিনা থেকে ইচম্যানকে অপহরণের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ প্রয়োগ করেছিল। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল, ইচম্যানের বিরুদ্ধে জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ ছিল। ১৫ বছর আগে নুরেমবার্গের আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে অপরাধী ঘোষিত একটি সংস্থার সদস্য ছিলেন তিনি।
ইসরায়েলের দাবি ছিল, ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ রাষ্ট্রকে অপরাধীরা যে দেশের হোক বা যে দেশেই বসবাস করুক না কেন—তাদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়। ইচম্যানের ক্ষেত্রে, অপরাধী ছিল জার্মান নাগরিক, নির্যাতিতরা ছিলেন জার্মান ইহুদি। অপরাধ জার্মানির মাটিতে সংঘটিত হয়েছিল, অপরাধীকে অপহরণ করা হয়েছিল আর্জেন্টিনা থেকে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ১৯৬০ সালের মে মাসে ইচম্যানকে আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে জেরুজালেমে নিয়ে আসে। সেখানে তাঁর বিচার হয়। আদালত ইচম্যানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৯৬২ সালের ১ জুন তাঁকে রামলার আয়ালন কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, অপরাধের উপাদানগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই এ ঘটনায় ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো তার বিরুদ্ধেই একটি শক্তিশালী আইনি নজির তৈরি করেছে। এখন যেকোনো রাষ্ট্র, তার ভৌগোলিক অবস্থান বা আইসিসিরর সদস্যপদ যাই হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
‘ট্রায়াল ইন্টারন্যাশনাল’ জোর দিয়ে বলছে, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে সুরক্ষা পেতে পারেন না। কারণ, এমন অপরাধ সংঘটিত হলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি হয়, যার কারণে তারা এই সুরক্ষা লাভের যোগ্যতা হারান।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সুবিধা ভোগ করছেন, তা ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ কাঠামোর আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দেবে না। যেমনটা হয়েছিল চিলির সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল অগাস্টো পিনোশের ক্ষেত্রে। গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে স্পেনের আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে পিনোশে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে লন্ডনে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’র আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উসমান সোনকো। সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেন। সোনকোকে ২০১৭ সালে বার্নে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২০২৪ সালে সুইস ফেডারেল ফৌজদারি আদালত তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন।
এখন ইচম্যানের গ্রেপ্তারের সঙ্গে নিউইয়র্কের স্থানীয় প্রশাসনের নেতানিয়াহুকে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের ঘোষণার সাদৃশ্য টানি, তাহলে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নিউইয়র্কে ঢোকার পর নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের জন্য ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রকে আইসিসির সদস্যরাষ্ট্র হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ ধরনের ব্যক্তির জন্য এটিই যথেষ্ট যে অপরাধীরা এমন জঘন্য অপরাধ করেছেন, যা সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ঠিক এটাই প্রযোজ্য।
কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন, নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার আইনি ক্ষমতা নেই এনওয়াইপিডির। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ প্রয়োগ ‘যুদ্ধাপরাধ আইন’–এর আওতায় পড়ে। এই আইন কার্যকর করার জন্য ফেডারেল অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। এনওয়াইপিডির পক্ষে যা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
অন্যরা অবশ্য মনে করেন, ‘লেহি আইন’ বা ১৮ ইউএস কোড ১০৯১—জাতিগত নিধনের অধীনে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করা যেতে পারে। এমন বিশ্বাস করা হয়, ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ প্রয়োগের জন্য পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় না। কারণ, এটি আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন থেকে বৈধতা পেয়ে থাকে।
এই আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার আইন অপরিবর্তনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাতিল বা লঙ্ঘন করা যায় না।
আইসিসির বর্ণিত ধারা ও আইনগতভাবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ রয়েছে। সদস্যরাষ্ট্রগুলো আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক আইনে বিকল্প প্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে। ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ এমনই একটি প্রক্রিয়া।
ইসরায়েল আর্জেন্টিনা থেকে ইচম্যানকে অপহরণের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ প্রয়োগ করেছিল। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল, ইচম্যানের বিরুদ্ধে জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ ছিল। ১৫ বছর আগে নুরেমবার্গের আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে অপরাধী ঘোষিত একটি সংস্থার সদস্য ছিলেন তিনি।চিলির সামরিক নেতা অগাস্টো পিনোশের গ্রেপ্তার, হলোকাস্টের স্থপতি ইচম্যানকে আটক ও গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ এবং তাঁর গোয়েন্দা প্রধানদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিশ্চিত করছে, রাজনৈতিক বা সামরিক অবস্থান নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তিই জবাবদিহি ও আন্তর্জাতিক বিচার থেকে মুক্ত নন।
অপরাধী ব্যক্তিদের তাঁদের জাতীয়তা বা অবস্থান নির্বিশেষে আটক করতে ‘সর্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ আইসিসির অপরিহার্য ও পরিপূরক উপায়। নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরানের ঘোষণা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারকে শক্তিশালী করার এবং দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের রাজনৈতিক ও আর্থিক চাপের মুখে আইসিসিকে ক্ষমতায়িত করার জন্যও জোহরানের ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।
আরও পড়ুননেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলেই গ্রেপ্তার হবে: মামদানি১৯ নভেম্বর ২০২৫