কার্জন হল এলাকায় ‘ছবি তুলে দেওয়ার কথা’ বলে মোটরসাইকেল চুরি, বরিশাল থেকে উদ্ধার
Published: 20th, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় ছবি তুলে দেওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম মো. সজীব খান (২৪)। শনিবার বরিশাল বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সজীব খানের কাছ থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে অবস্থান করছিলেন মো.
পুলিশ জানায়, শামীম ছবি তোলার এবং ভিডিও করার সময় সজীব কৌশলে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় শামীমের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সজীবের অবস্থান শনাক্ত করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার সজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি একজন পেশাদার চোর। আগেও একাধিকবার চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি বিরোধেই আটকা পাহাড়ের শান্তি
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক সরকার ৬ বার, বিএনপি সরকার ১৩ বার এবং আওয়ামী লীগ সরকার ৭ বার অর্থাৎ পরপর তিনটি সরকার ২৬টি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির পর ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। কিন্তু, সেই কমিশন ২৬ বছরে একটি আবেদনও নিষ্পত্তি করতে পারেনি। এতে হতাশা বেড়েছে পাহাড়ি জনগণের। অন্যদিকে, বাঙালি নেতাদের দাবি, সংশোধিত ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাঙালিদেরকে ভূমি থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মূলেই রয়েছে ভূমি নিয়ে বিরোধ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগ ধরে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সংঘাত চলে। সে সময় তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়িদের অনেকে ভারতে শরণার্থী হন। অনেকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। ১৯৭৯ সাল থেকে দুই-তিন বছরে সরকার ৩ থেকে ৪ লাখ ভূমিহীন এবং নদীভাঙনের শিকার বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। সরকার তাদের জমি দেয়।
পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে জেএসএসের শান্তি আলোচনার পথ ধরে পাহাড়ি মানুষ নিজ ঘরে ফেরা শুরু করেন। এরপর জমির মালিকানা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি তোলে বাঙালি ও পাহাড়ি মানুষ। এই অবস্থায় ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষর হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। ২০০১ সালে এই সংক্রান্ত আইন হয়। পরবর্তীতে পাহাড়িদের দাবির মুখে ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। এতে কমিশনে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা এবং কমিশনের কোরামসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ওই আইনের বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়, যা অদ্যাবধি চূড়ান্ত করা হয়নি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে বিচারপতি আনোয়ার উল হককে দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। এ সময় তিনি নিষ্পত্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করলে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৯৭০টি (খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ৯০৮, রাঙামাটিতে ৯ হাজার ৯২৪ ও বান্দরবানে ৫ হাজার ১৫৮) আবেদন জমা পড়ে। আবেদনকারীদের মধ্যে ৫৭৪ জন বাঙালি এবং ২২ হাজার ৩৯৬ জন পাহাড়ি। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল হাফিজকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার।
ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের পর কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ কমিশনে পাহাড়িদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ তোলে বাঙালিদের সংগঠনগুলো। পার্বত্য বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি না রাখায় আট দফা দাবিতে তারা বিভিন্ন সময় হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করেন। চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর রাঙামাটিতে ভূমি কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বাঙালি সংগঠনগুলো হরতালের ডাক দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত হয়। এর আগেও একাধিকবার তিন জেলায় বৈঠক ডাকা হলেও হরতাল, অবরোধের কারণে কমিশন সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
বাঙালি নেতাদের অভিযোগ, ২০০১ সালের প্রণীত আইনে উল্লিখিত ‘চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ২০১৬ এর সংশোধনীতে ‘চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়। এর ফলে চেয়ারম্যানের বিচারিক ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তকে অবদমিত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাহাড়ি সদস্যের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হওয়ায় বাঙালি সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছে। তাদের দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে নয় সদস্যের মধ্যে সাতজন পাহাড়ি এবং দুজন সম্ভাব্য বাঙালি। কমিশনে পার্বত্য জেলায় বসবাসরত বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। সংশোধনী অনুযায়ী চেয়ারম্যানসহ কমিশনের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত হবে বিধায় পাহাড়ি সদস্যদের মতামতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে বাঙালি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ভূমি জরিপ, ভূমি কমিশন সংশোধন আইন-২০১৬ এর ধারা বাতিল, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসহ কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০০১ সালের ভূমি কমিশন আইন অনুযায়ী বলবৎ রাখার দাবি জানান বাঙালি সংগঠনের নেতারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলার সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেছেন, সংশোধিত ভূমি কমিশন সম্পূর্ণ একপাক্ষিক। নয় সদস্যের মধ্যে সাতজনই পাহাড়ি। তাহলে সেখানে স্বাভাবিকভাবে বাঙালিদের অধিকার খর্ব হবে বলে আশঙ্কা করছি। সংশোধনীর পূর্বে যে অবস্থাতে আইনটি ছিল, সেটি পুনরায় বলবৎ রাখার দাবি জানাচ্ছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে ৫৪ ভাগ বাঙালি বসবাস করে। তাই, সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন আবারো সংশোধন করে তিন পার্বত্য জেলা থেকে কমপক্ষে ছয়জন বাঙালিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে রাখতে হবে। এছাড়া, আইনে বলা হয়েছে, এই কমিশন যে রায় দেবে, সেটা চূড়ান্ত, সে বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে না, এটা কোনোভাবে হতে পারে না। এটা অবশ্যই বাতিল করে আপিলের সুযোগ দিতে হবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আগে ভূমি জরিপ করতে হবে।
রাঙামাটি আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার বলেছেন, বিভিন্ন উপায়ে কমিশনের কার্যক্রমে বিলম্ব করা হচ্ছে। কমিশনকে কার্যকর করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা এখনো কমিশনের কার্যক্রমের কোনো রোডম্যাপও দেখতে পারছি না। দ্রুত ভূমি কমিশনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাঙামাটি জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেছেন, চুক্তির ২৮ বছর পর এখনো ভূমি কমিশন তাদের মূল কাজই শুরু করতে পারেনি। চুক্তির আলোকে যদি ভূমি কমিশন কাজ করত এবং গত সরকার চুক্তির মৌলিক ধারা অনুযায়ী ভূমি সমস্যার সমাধান না করেও চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে, এই ধরনের অপপ্রচার না চালিয়ে ঠিকমতো কাজ করলে এতদিনে এই অঞ্চলের ভূমি সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন বলেছেন, সকলের স্বার্থ সমুন্নত রেখে, কাউকে বঞ্চিত না করে ভূমি সমস্যার সমাধান চায় বিএনপি। আমিও মনে করি, ভূমি সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে এই এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেকটাই এগিয়ে যাবে। সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, উদার মন-মানসিকতা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ভূমি কমিশনের সচিব মো. শাহাবুদ্দিন বলেছেন, কমিশনের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে চেয়ারম্যান মহোদয় যখনই নির্দেশনা দেবেন, তখন সভা ডাকা হবে। বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক