আমরণ অনশন কর্মসূচির ৩য় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২৭ জন ছাত্র। তবুও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছেন তারা। 

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির ৩ সদস্যের দল আজ বুধবার কুয়েটে আসার কথা রয়েছে।

স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তোষকের উপর শুয়ে-বসে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ২৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের তিন পাশে রয়েছে ১০/১২টি স্ট্যান্ড ফ্যান। এছাড়া কুয়েটের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অনশনস্থলের পাশে চেয়ারে বসে আছেন। সেন্টারের সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪টি অ্যাম্বুলেন্স। পাশের কক্ষে অবস্থান করছে কুয়েটের মেডিকেল টিমের সদস্যরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে গত সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ৩২ জন ছাত্র আমরণ অনশন শুরু করেন। সোমবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২ জন ছাত্র বাড়িতে চলে যান এবং ১ জনের মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনিও বাড়িতে যান। মঙ্গলবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী সাদিক সিদ্দিক ফারিব বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও আজিজুল হক সিয়াম কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা শংকামুক্ত বলে জানা গেছে।

তারা বলেন, ৩ দিন ধরে তারা অনশন করলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ এখনও কুয়েটে আসেনি। উপাচার্যকেও অপসারণ করা হয়নি। আবার উপাচার্য নিজেও পদত্যাগ করেননি। শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে কি উপাচার্যের চেয়ার বড় এমন প্রশ্ন করেন তারা।

অনশনরত শিক্ষার্থী গালিব, তৌফিক, সৈকত, রাহাত ও মহিবুজ্জামান উপল বলেন, উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে জীবন দেবেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা হামলা করলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

তারা বলেন, কিছুদিন আগে বহিরাগত একজন বাদী হয়ে ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কুয়েট কর্তৃপক্ষ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ২ রাত তারা খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড.

মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা রাজি হননি। আমরা তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখছি।

আসছে ইউজিসির টিম
এদিকে কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ইউজিসি ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান, সদস্য সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান। কমিটির সদস্যদের আজ বুধবার কুয়েট ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা রয়েছে।

খুলনার ২ স্থানে ব্লকেড আজ
উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার সকাল ১০টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই স্থানে সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার কর্মসূচি রয়েছে দি রেড জুলাই খুলনা জেলা শাখা। একই স্থানে মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ খুলনা মহানগর শাখা।

এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন এবং দুপুর ২টায় জিরো পয়েন্ট এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমরণ অনশন উপ চ র য র র সদস য কম ট র ইউজ স

এছাড়াও পড়ুন:

পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের অনশন তীব্র আন্দোলনের মুখে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় পিএসসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। তবে দেশের একটি গণমধ্যমের প্রতিবেদনে পিএসসির এমন সিদ্ধান্তে ‘উপদেষ্টা আসিফের বলপ্রয়োগ রয়েছে’ বলে অভিযোগ করা হয়। 

এ অভিযোগের বিষয়ে এবার নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ওই রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা।

মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি একথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা বলেন, পিএসসি সংস্কারের দাবিতে প্রায় ৮০ ঘণ্টা অনশন করে চার জন চাকরিপ্রার্থী ঝুকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থায় পৌঁছালে পিএসসি এবং তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিই। রাজু ভাস্কর্যে বসেও বারবার বলেছি- পিএসসি সাংবিধানিক, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আমি পিএসসি এবং আপনাদের মধ্যে ব্রিজ হতে পারি, সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই’। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সুরাহা না করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন আন্দোলনকারীরা।

তিনি বলেন, পিএসসি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে রাজুতে বসেই ফোনে কথা বলেছি। পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম স্যার তিনজন সদস্য পাঠান আলোচনার জন্য। টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং পিএসসির সদস্যদের মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনার পর পিএসসি লিখিত পরীক্ষা আপাত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ঘোষণা করেন পিএসসির একজন সদস্য। এই প্রক্রিয়ার কোনো অংশেই পিএসসিকে আমি কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। পিএসসি এবং ছাত্রদের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে সমস্যার সমাধান করাই ছিল আমার লক্ষ্য। তাছাড়া অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল দ্রুত।

ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা। গণ-অভ্যুত্থানের একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে দায়িত্ব পালন করছি। ফলে শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক দাবি কিংবা সমস্যায় এগিয়ে যাওয়াটা আমার দায়িত্ব। আমি সে দায়িত্ব পালন করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত করার দাবিতে অনশনে
  • পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ