খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য ড. শেখ শরীফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। গতকাল বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ২২ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা ড.
রাত ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. তানজীম উদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। পরে তারা নিজ নিজ হলে ফিরে যান।
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে কুয়েটের সার্বিক ঘটনায় তদন্ত কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তিন সদস্যের কমিটি। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অন্যদিকে সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া অনশনরত চার শিক্ষার্থীকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরম এবং ক্ষুধায় শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েন ২২ শিক্ষার্থী। তখন পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প খোলে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। অনশনরত ২২ শিক্ষার্থী সেখানে যান।
গতকাল দুপুরে কুয়েট সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই আদেশ গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেল থেকে ছাত্রদের ৬টি ও ছাত্রীদের একটি হল খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে কুয়েট শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুপুর ১টায় ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন কুয়েটের কর্মচারীরা।
আরও ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন
প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুয়েটের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা গতকাল অনশন শুরু করেছেন। এ ছাড়া শহরের জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ–দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালি নারী–পুরুষ। পরে বিকেল চারটার দিকে কয়েকজনকে শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙান আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এ কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, ফারুক কবীর, সাঁওতাল নেতা স্বপন শেখ, প্রিসিলা মুর্মু, তৃষ্ণা মুর্মু, বিটিশ সরেন, গৌড় পাহাড়ি, রাফায়েল হাসদা, অলিভিয়া হেমব্রম, বার্নাবাস টুডু, লুইস মুর্মু, খিলন রবিদাস প্রমুখ। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
গণ–অনশনে বক্তারা বলেন, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ করার মতো সরকারের অনেক জমি পতিত আছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতেই কেন ইপিজেড করতে হবে? এ আন্দোলন ইপিজেডের বিরুদ্ধে নয়; বরং বাপ–দাদার জমি উদ্ধারের জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন। এসব জমি উদ্ধার করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোষী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি।
বক্তারা বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ, তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল–বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পৈতৃক জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নামে তিন সাঁওতাল নিহত হন। সেই সঙ্গে অন্তত ২০ জন আহত হন।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।