বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার মানুষ
Published: 3rd, May 2025 GMT
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। দুই পাশেই মানুষ আতঙ্ক থেকে বাঙ্কার সংস্কার করছেন।
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন।
তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়ত এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি বিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন এর কাছে বসবাসকারী মানুষ। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখনো পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা এহসান-উল-হক শামি জানান, নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তার বাড়ি। তিনি জানান, ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই আইন অনুশীলন করেন। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ে ২০১৯ সালে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার বাড়ি।
পেশায় আইনজীবী শামি বলেন, ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্রবার ও শনিবার পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাতে সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় চলে। এরপর শনিবার রাতে ফের গুলি বিনিময় শুরু হয়। ওইদিন রাত ১০টায় গুলি বিনিময় শুরু হয়ে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে কিন্তু নিশানা হতে হয়নি।
প্রসঙ্গত, ভারত শাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
কুপওয়ারায় এখনও পর্যন্ত সীমান্তে গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
পহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ।
তিনি বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।
কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা বলেন, 'অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা' এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণ রেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়েছিল এবং তার মৃত্যু হয়। কিন্তু ২০২১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে সিজ ফায়ার মেনে চলতে রাজি হয়। তারপর গত চার বছর ধরে জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে যে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়ত ফিরে আসতে পারে।
এহসান-উল-হক শামি বলেন, যখনই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, তখনই নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে বসবাসকারী মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় যে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলতে পারে। এতে সাধারণত নিশানা হতে হয় সাধারণ মানুষকে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরও প্রতি রাতেই আমরা ভাবতাম, এই হয়ত গোলাগুলি শুরু হবে। যেমনটা শুক্রবার ও শনিবার রাতে দেখা গেছে।
সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এহসান-উল-হক শামি বলেন, শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাতে শুরু হওয়া গোলাগুলিকে আমরা আকস্মিকই বলতে পারি। তখন তার বারোটা বেজে গেছে, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে ছিল। প্রথমে আমি আমার বৃদ্ধ মাকে বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়ে যাই। তার বয়স হয়েছে এবং তিনি হাঁটাচলা করতে অক্ষম।ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাঙ্কার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর আমি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বাঙ্কার পরিষ্কার করেছি যাতে গোলাগুলি চললে এটা (বাঙ্কার) ব্যবহারের উপযোগী থাকে।
এহসান-উল-হক শামি জানান, এই বাঙ্কারগুলো এমনিতে মজবুত কিন্তু সমস্ত ধরনের বিপদ এড়াতে তা সক্ষম নয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে এটা বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাঙ্কারে পড়লে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটা ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আছি। এই কারণে আশঙ্কা থেকে যায় যে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।
উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টা বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জলের ব্যবস্থা নেই।
ভাটগ্রানের বাসিন্দা মহম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষরা যাবে কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করব। আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে নিয়ন্ত্রণ রেখায় সিজফায়ার সংক্রান্ত একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু দুই পক্ষের সেনাবাহিনী তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা সরিয়ে লাদাখে স্থানান্তরিত করে ভারত। এর কয়েক মাস পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্ব সম্মত সিজ ফায়ার সংক্রান্ত চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য আরও একটা চুক্তি হয়। পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সেই চুক্তি আবার ভাঙ্গা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঝিলাম জেলা পরিষদের সদস্য বশির আলম আওয়ান জানিয়েছেন, ওই সেক্টরে ভাল কৃষিকাজ হওয়ার কারণে সেখানে শস্য মজুত রয়েছে এবং বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যোগানও রয়েছে। তাই চূড়ান্ত খারাপ পরিস্থিতিতেও তাদের খাদ্যশস্যের অভাব দেখা যায়নি।
তার দাবি, অতীতে গোলাগুলি চলার কারণে লিপা সেক্টরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ গুলি চলেছিল ২০১৯ সালে। সেই সময় ব্যাপক গোলাগুলি চলেছিল, বেসামরিক নাগরিকরা নিশানা হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে দুই রাতে যে গুলি বিনিময় হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ নিশানা হয়নি।
তিনি বলেন, লিপা উপত্যকায় সরকারি প্রকল্পের আওতায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতে বা দু-তিনটি বাড়ি মিলিয়ে একটা বাঙ্কার বানানো হয়েছে। লিপা ভ্যালির বাসিন্দাদের অনেকেরই আত্মীয় ভারত শাসিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরে বাস করেন। লিপা ভ্যালির রাস্তা আগে ভাল ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালে রাস্তা মেরামতের পর ওই এলাকায় পর্যটনের প্রবণতা দেখা গেছে। বহু মানুষ পর্যটনকে তাদের কর্মসংস্থানের উৎস বানিয়েছে। এখন এসব গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় পর্যটকরা ওই এলাকায় বেড়াতে যাবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থানের উপর এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ঘটন র আশঙ ক বর বর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার সিকিউরিটি প্রোগ্রাম, আবেদন শেষ ২৬ আগস্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জুলাই ২০২৫ সেমিস্টারে প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন ইনফরমেশন অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি (PMICS) প্রোগ্রামে ভর্তিতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রোগ্রামের বৈশিষ্ট্য১. এটি ৩৬ ক্রেডিট ঘণ্টা।
২. ক্লাসের সময়: শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা এবং অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাস।
৩. এটি তিন সেমিস্টারের প্রোগ্রাম।
ভর্তির যোগ্যতা১. সিএসই/সিএস/আইটি/এসই/সিআইটি/আইসিটি/ইসিই/ইটিই/ইইই ইত্যাদি আইটি/আইসিটি-সম্পর্কিত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন থাকতে হবে।
২. সিজিপিএ কমপক্ষে ২.৫০ সহ স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। সিজিপিএ–২.৫০ নিচে থাকলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
৩. চাকরিজীবীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
৪. দেশি–বিদেশি সব শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবেন। বিদেশি ডিগ্রির ক্ষেত্রে এ অনুষদের অফিস থেকে সমতা নিরূপণ করতে হবে।
৫. তথ্য যাচাই শেষ হলে ভর্তি পরীক্ষার ফি তিন হাজার টাকা দিয়ে অনলাইনে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনজাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স, ভর্তি ফি মাত্র এক হাজার টাকা০৯ আগস্ট ২০২৫ভর্তির বিস্তারিত তথ্য১. আবেদনপত্র জমার শেষ তারিখ: ২৬ আগস্ট ২০২৫।
২. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২৯ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার, সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট।
আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম, জিপিএ–২.৫ হলেই আবেদন০৯ আগস্ট ২০২৫৩. পরীক্ষার ফল প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দুপুর ১২ টায়।
৪. ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
* অনলাইনে আবেদনের জন্য ভিজিট করুন: https://pmics.cse.du.ac.bd/
* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট: www.pmics.cse.du.ac.bd
আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যের চেভেনিং বৃত্তি, ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে পড়তে চাইলে করুন আবেদন১০ আগস্ট ২০২৫