রবিবার রাতে আর্মেনিয়াকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল পর্তুগাল। স্কোরলাইন বলছে সব; ৯-১! আর এই দাপুটে জয়ের নায়ক পর্তুগালের দুই মিডফিল্ড জাদুকর ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও হোয়াও নেভেজ। দুজনই করেছেন দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক।

আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর পর্তুগাল ছিল চাপে। সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখে ছিটকে যান অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাই আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক। আর জিতে তারা জানিয়ে দিল- চাপ তাদের আরো ভয়ঙ্কর করে তোলে।

ম্যাচের শুরুতেই মানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করেন রেনাতো ভেইগা। তবে ১৮ মিনিটেই দারুণ এক সুযোগে গোল করে আর্মেনিয়াকে সমতায় ফেরান এদুয়ার্দ স্পারৎসিয়ান।

এরপরই যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠে পর্তুগাল। ২৮ মিনিটে গোল করে দলকে আবার এগিয়ে নেন গনসালো রামোস। এর কিছুক্ষণ পর বক্সের সামনে থেকে নিখুঁত শটে স্কোরশিটে নাম তোলেন হোয়াও নেভেজ। পরে তার ফ্রি-কিকও পর্তুগালকে আরও এগিয়ে নেয় (৪-১)।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে বক্সে ফাউলের শিকার হন ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস। পেনাল্টি থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজ শান্তভাবে বল জালে পাঠিয়ে পর্তুগালকে এগিয়ে নেন ৫-১।

দ্বিতীয়ার্ধে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেন ব্রুনো। নীচু শটে তার আরেকটি গোল হয়। এরপর কার্লোস ফর্বস ফাউল করায় পাওয়া পেনাল্টিতেও নিখুঁত সংযোজন। এর মধ্যেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি।

নেভেজও থামার পাত্র নন। বক্সের মাঝখানে সুযোগ তৈরি করে নিজের তৃতীয় গোলটি করেন এই তরুণ। ব্যবধান তখন ৮-১। আর ম্যাচ তখন একতরফা। শেষদিকে ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও দারুণ এক শটে গোল করে ব্যবধান দাঁড় করান ৯-১ এ। পর্তুগালের গোল উৎসব শেষ হয় তাতেই।

এই দাপুটে জয়ে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে স্বাভাবিকভাবেই পর্তুগালের নিশ্চিত হয়ে গেল আগামী বছরের বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ডের কারণে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে রোনালদোকে মাঠে নাও দেখা যেতে পারে। আপাতত এটাই এখন একমাত্র দুঃসংবাদ পর্তুগীজদের জন্য।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আর ম ন য় পর ত গ ল গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও

ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।

অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।

বাধা পেরিয়ে

তারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।

গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন

সম্পর্কিত নিবন্ধ