রাজশাহীর চারঘাটে দেড় হাজার নারীর অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক সমিতি লাপাত্তা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতি নামে এ ভুয়া সমিতির দায়িত্বে ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সাহানা খান সাথী। তাঁর বিচার চেয়ে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 
মুক্তারপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নাজিরা বেগম বলেন, ‘গ্রামের শত শত মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের দেখে আমিও রেজিস্ট্রেশন করেছি। দুটি প্রশিক্ষণ নিতে ৬০০ ও ১১০০ টাকা দলনেতাকে দিয়েছি। এখন প্রশিক্ষণও নাই টাকাও নাই।’ 
প্রতারণার শুরুটা যেভাবে
গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে চারঘাটের মুক্তারপুর গ্রামে লিফলেট বিতরণ করা হয়। তিন দিনের নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০ জনকে তিন ধাপে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ খবর দ্রুত আশপাশের গ্রামের নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 
বেশ কিছুদিন বিরতির পর গত ডিসেম্বর মাসে শাহানা খান মুক্তারপুরে আসেন। রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতির নামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের লিফলেট বিতরণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিন হাজার তিনশ টাকা দেওয়া হবে জানানো হয়। পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে ১০ থেকে ১২ জনকে প্রধান করে আলাদা আলাদা দল গঠন করেন। প্রতিটি দলে ৩৫ জন সদস্য রাখা হয়। এভাবে চারঘাটের খোর্দগোবিন্দপুর, থানাপাড়া, নন্দনগাছী, মুক্তারপুর, ইউসুফ ও চৌমুহনী এলাকায় ৩০টিরও বেশি দল গঠন করা হয়। সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি সভা করে হস্তশিল্প, জরিপ ও বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখানো হয়। পরে সদস্যদের কাছ থেকে ১১শ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যোগাযোগ কমিয়ে দেন শাহানা খান। এক পর্যায়ে ফোনও বন্ধ রাখেন। 
গ্রাহক সামলাতে হিমশিম অবস্থা দলনেতাদের 
ইউসুফপুর এলাকার রিমা খাতুন দুটি হস্তশিল্প ও একটি জরিপ প্রশিক্ষণের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। হস্তশিল্পে ছয়শ ও জরিপ প্রশিক্ষণের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফিবাবদ ১০৫ জনের কাছে থেকে ৭৪ হাজার টাকা তুলে আরেক দলনেতা রুবিনার মাধ্যমে শাহানা খানকে দিয়েছেন। 
শাহানা খাতুনের দূরসম্পর্কের আত্মীয় মুক্তারপুর এলাকার দলনেতা রুবিনা খাতুন ১৭৫ সদস্যের পাঁচটি দলের নেতৃত্ব ছিলেন। কয়েক ধাপে সদস্যদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে শাহানাকে দিয়েছেন। এরকম ৮ থেকে ১০টি দলের নেতাদের আওতায় ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য রয়েছে বলে জানান রুবিনা। তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। 
থানাপাড়া গ্রামের টিম লিডার জুলিয়া খাতুন ছয়টি টিমের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর এক টিমের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছিল। তাদের সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তাঁর ছয়টি টিম থেকে চার লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। 
রিমা, রুবিনা ও জুলিয়ার মতো দলনেতারা এখন সদস্যদের চাপে দিশেহারা। শাহানা খানের বাসায় গেলেও তাঁকে পাননি তারা। ফোন করলেও সাড়া দেন না। বাধ্য হয়ে শাহানা খানের বিরুদ্ধে মহানগরের মতিহার থানায় অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার দলনেতা মুরশিদা বেগম। 
এদিকে গোপন তথ্যে শাহানা খান বাড়িতে আছেন জানতে পেরে সাংবাদিকদের নিয়ে বুধবার ভুক্তভোগীরা সেখানে যান। এ সময় শাহানা খান সাথী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক ফ্রি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলাম। আর কোনো প্রশিক্ষণের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। মিথ্যা অভিযোগে লোকজন বাড়িতে এসে আমাকে হেনস্থা করছে।’
তবে সমকালের অনুসন্ধানে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণ শেষে শাহানা খান নিজ হাতে প্রশিক্ষনার্থীদের কয়েকজনকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন– এ সংক্রান্ত ছবিও পাওয়া গেছে। এসব সেলাই মেশিন পরিচিতজনদের মধ্যে বিতরণ করে সদস্যদের আস্থায় আনার চেষ্টা করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। 
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দলন ত সদস য ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘সংঘাত বাড়িয়ে পরস্পরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান’

কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের এই সংঘাতের খবর গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে। পরিস্থিতি এখন কোন দিকে মোড় নেয়, সে বিষয়ে নজর গোটা বিশ্বের।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান। ভারত বলছে, পাকিস্তান তাদের সীমান্তে ড্রোন ও অন্যান্য গোলাবারুদ ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার রাতভর হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার দ্বন্দ্ব বাড়ার পর থেকে বারবার একে অপরকে আক্রমণের জন্য অভিযুক্ত করছে দেশ দুটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সও বলছে, সংঘাত বাড়তে থাকায় একে অপরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ‘উত্তেজনা চরমে ওঠায় ভারতীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বেশ কয়েক শহরের লাখ লাখ ভারতীয় বৃহস্পতিবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ‘২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিছু পাকিস্তানি কর্মকর্তার দাবি, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোলে গুলি বিনিময়ের সময় তাদের বাহিনী ডজনখানেক ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, বুধবার থেকে প্রায় ২৫ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে তাঁর ধারণা।

এদিকে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতকে ‘কাশ্মীর সংকট’ বলে উল্লেখ করছে। ‘ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে হস্তক্ষেপ করবে না যুক্তরাষ্ট্র’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের নিজেদের মধ্যকার উত্তেজনা নামিয়ে আনা উচিত। তাদের মধ্যে সংঘাত মোটেও আমাদের দেখার বিষয় নয়।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের তৈরি পাকিস্তানের রাডার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারত।

এদিকে পাকিস্তান ও ভারতের সংবাদমাধ্যম সংঘাতের বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন করার অভিযোগ আছে। এ কারণে দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ