প্রশিক্ষণের নামে সহস্রাধিক নারীর অর্থ আত্মসাৎ
Published: 9th, May 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে দেড় হাজার নারীর অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক সমিতি লাপাত্তা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতি নামে এ ভুয়া সমিতির দায়িত্বে ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সাহানা খান সাথী। তাঁর বিচার চেয়ে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মুক্তারপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নাজিরা বেগম বলেন, ‘গ্রামের শত শত মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের দেখে আমিও রেজিস্ট্রেশন করেছি। দুটি প্রশিক্ষণ নিতে ৬০০ ও ১১০০ টাকা দলনেতাকে দিয়েছি। এখন প্রশিক্ষণও নাই টাকাও নাই।’
প্রতারণার শুরুটা যেভাবে
গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে চারঘাটের মুক্তারপুর গ্রামে লিফলেট বিতরণ করা হয়। তিন দিনের নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০ জনকে তিন ধাপে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ খবর দ্রুত আশপাশের গ্রামের নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
বেশ কিছুদিন বিরতির পর গত ডিসেম্বর মাসে শাহানা খান মুক্তারপুরে আসেন। রাজশাহী মহিলা হস্তশিল্প সমিতির নামে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের লিফলেট বিতরণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিন হাজার তিনশ টাকা দেওয়া হবে জানানো হয়। পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে ১০ থেকে ১২ জনকে প্রধান করে আলাদা আলাদা দল গঠন করেন। প্রতিটি দলে ৩৫ জন সদস্য রাখা হয়। এভাবে চারঘাটের খোর্দগোবিন্দপুর, থানাপাড়া, নন্দনগাছী, মুক্তারপুর, ইউসুফ ও চৌমুহনী এলাকায় ৩০টিরও বেশি দল গঠন করা হয়। সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি সভা করে হস্তশিল্প, জরিপ ও বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখানো হয়। পরে সদস্যদের কাছ থেকে ১১শ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যোগাযোগ কমিয়ে দেন শাহানা খান। এক পর্যায়ে ফোনও বন্ধ রাখেন।
গ্রাহক সামলাতে হিমশিম অবস্থা দলনেতাদের
ইউসুফপুর এলাকার রিমা খাতুন দুটি হস্তশিল্প ও একটি জরিপ প্রশিক্ষণের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। হস্তশিল্পে ছয়শ ও জরিপ প্রশিক্ষণের জন্য দুই হাজার ৫০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফিবাবদ ১০৫ জনের কাছে থেকে ৭৪ হাজার টাকা তুলে আরেক দলনেতা রুবিনার মাধ্যমে শাহানা খানকে দিয়েছেন।
শাহানা খাতুনের দূরসম্পর্কের আত্মীয় মুক্তারপুর এলাকার দলনেতা রুবিনা খাতুন ১৭৫ সদস্যের পাঁচটি দলের নেতৃত্ব ছিলেন। কয়েক ধাপে সদস্যদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা সংগ্রহ করে শাহানাকে দিয়েছেন। এরকম ৮ থেকে ১০টি দলের নেতাদের আওতায় ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য রয়েছে বলে জানান রুবিনা। তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
থানাপাড়া গ্রামের টিম লিডার জুলিয়া খাতুন ছয়টি টিমের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর এক টিমের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছিল। তাদের সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তাঁর ছয়টি টিম থেকে চার লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।
রিমা, রুবিনা ও জুলিয়ার মতো দলনেতারা এখন সদস্যদের চাপে দিশেহারা। শাহানা খানের বাসায় গেলেও তাঁকে পাননি তারা। ফোন করলেও সাড়া দেন না। বাধ্য হয়ে শাহানা খানের বিরুদ্ধে মহানগরের মতিহার থানায় অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার দলনেতা মুরশিদা বেগম।
এদিকে গোপন তথ্যে শাহানা খান বাড়িতে আছেন জানতে পেরে সাংবাদিকদের নিয়ে বুধবার ভুক্তভোগীরা সেখানে যান। এ সময় শাহানা খান সাথী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক ফ্রি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলাম। আর কোনো প্রশিক্ষণের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। মিথ্যা অভিযোগে লোকজন বাড়িতে এসে আমাকে হেনস্থা করছে।’
তবে সমকালের অনুসন্ধানে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণ শেষে শাহানা খান নিজ হাতে প্রশিক্ষনার্থীদের কয়েকজনকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন– এ সংক্রান্ত ছবিও পাওয়া গেছে। এসব সেলাই মেশিন পরিচিতজনদের মধ্যে বিতরণ করে সদস্যদের আস্থায় আনার চেষ্টা করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।
প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।