হিজবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমান্ডে
Published: 10th, May 2025 GMT
নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম মিজানুর রহমান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার আদালতে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক মো. শাহিনুর রহমান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
৭ মে রাতে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকার একটি মেস থেকে সাদাপোশাকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ মিজানুর রহমানকে আটক করে বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপরই পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশপাশের থানায় খোঁজ নিয়েও তাঁর সন্ধান পাননি। পরে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ কয়েকটি সূত্র থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।
মামলার কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২১ মার্চ ধানমন্ডি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহ্রীরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং সংগঠনটির পক্ষে প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, পুলিশ মিজানুরের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হিজবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, আসামি মুক্তি পেলে চিরতরে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, ‘প্রথমে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলাম। পরে জানতে পারি, তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’
অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের বড় ভাই সাজু রহমান বলেন, ‘মিজানকে ৭ মে রাত ১১টার দিকে নারিন্দার মেস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিন তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি। পরে জানতে পারি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা তাঁর ন্যায়বিচার চাই।’
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাশৈনু বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের আগে মামলাটি হয়েছে। মামলাটি ধানমন্ডি থানায় নথিভুক্ত হলেও এর তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন ধ নমন ড তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত গত বছরই নেন নেতানিয়াহু, গোপন বৈঠকে হয় হত্যার তালিকা
গত বছরের শরৎ। ডোনাল্ড ট্রাম্প তখনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেননি। আর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও তখন কূটনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নেননি তিনি।
অথচ তখনই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ইসরায়েলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা আরও জানান, গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে। ইরানের প্রধান মিত্র লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে। পরে নেতানিয়াহু সামগ্রিকভাবে ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর হবে ১ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গোপন বৈঠক করেন। তাঁরা ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী ও সামরিক নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করতে থাকেন, যাঁদের ভবিষ্যতে হত্যার লক্ষ্যে নিশানা করা হতে পারে।
একই সময়ে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী নিয়মিতভাবে লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে থাকে। উদ্দেশ্য—ভবিষ্যতে ইরানবিরোধী হামলার জন্য আকাশপথ পরিষ্কার করা।
এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুদ্ধের প্রস্তুতির আরেকটি কৌশলগত দিক নিয়ে কাজ করছিলেন। আর তা হলো ওয়াশিংটনের সমর্থন অর্জন করা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে সামরিক অভিযান চালানো হলে তা এককভাবে ইসরায়েলের অভিযান থেকে অনেক বেশি কার্যকর হবে।
শেষ পর্যন্ত গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করেন। তাঁর নির্দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়হামলা চালায়।
আরও পড়ুনইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেয়নি, ট্রাম্প আবারও মিথ্যা বলছেন: তেহরান টাইমস৪৭ মিনিট আগেগত শরৎকালজুড়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জো বাইডেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। আলোচনার বিষয় ছিল উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গ্রীষ্মকালে সংগৃহীত তথ্য। এ তথ্যে দেখা যায়, ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীরা আবার অস্ত্রীকরণের তাত্ত্বিক গবেষণা শুরুর জন্য একত্র হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন তিনজন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা মনে করেননি, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ মূল্যায়ন বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনামলের বসন্তকালজুড়ে একাধিকবার পর্যালোচনা করা হয়।
ইরানে ইসরায়েলের হামলা চালানোর সময় পর্যন্ত এ অবস্থানেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে ব্যক্তিগত আলোচনায় ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মার্চ মাসেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করুক বা না-ই করুক, সর্বোচ্চ জুন মাসের মধ্যে ইরানে হামলা চালানো হবে। আর এ সিদ্ধান্ত হয় নেতানিয়াহুর গত ৭ এপ্রিল ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই।
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ইরান তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন করে ফেলত। একটি সূত্র এমনটা জানিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত যখন নেতানিয়াহু ১৩ জুন ভোরে ইরানে আকস্মিক হামলা চালান। আর সে সময় ট্রাম্পের কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল।
আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে সংঘাত শেষ করতে চায় ইসরায়েল, তবে তা নির্ভর করছে তেহরানের ওপর৮ ঘণ্টা আগেহামলার সিদ্ধান্তটি নতুন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়নি। বরং ইসরায়েল একে একটি ‘অন্যতম সুযোগ’ হিসেবে দেখে আগেই তৈরি করে রাখা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় হিসেবে বেছে নেয়।
পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে ইরানের অগ্রগতির যথেষ্ট প্রমাণ নেতানিয়াহুর কাছে ছিল কি না, এ প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এ হামলার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের ভেতরে টানাপোড়েন তৈরি করেছে বলে মনে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার গত মার্চ মাসে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের দেওয়া মূল্যায়নটি উড়িয়ে দিয়েছেন। তুলসী গ্যাবার্ডের মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
আরও পড়ুনএবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা ৭ ঘণ্টা আগেনেতানিয়াহু বহু বছর ধরে বলে আসছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। আর সামরিক হামলার মাধ্যমেই ইরানতে থামাতে হবে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায় থেকে ইরান এখনো কয়েক মাস কিংবা এক বছর দূরে রয়েছে।
তবে যে বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, তা হলো ইরান বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা বেসামরিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয় মাত্রার অনেক গুণ বেশি। একই সঙ্গে ইরান বিপজ্জনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের জন্য সুযোগ ও প্রয়োজন—এই দুই বিবেচনার একটি সমন্বয়।
আরও পড়ুনইরানের সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প কী বোঝাতে চাইছেন, রিপাবলিকানরা কী বলছেন১৫ ঘণ্টা আগেওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, সত্যি কথা বলতে, হামলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর ছিল না। ইসরায়েলি বাহিনী কখনো এতটা প্রস্তুত ছিল না। আর ইরান ও তার মিত্রশক্তিগুলোও কখনো এতটা দুর্বল ছিল না। কিন্তু শুধু এ কারণেই তাঁরা অভিযান চালায়নি। তাঁরা অভিযান চালিয়েছেন প্রয়োজনীয়তার তাগিদে। আর এই উপলব্ধি থেকে যে আর কোনো বিকল্প ইসরায়েলের নেই। যদি ইরান হঠাৎ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, আর তাঁরা তা টের না পান? কোনো নিরাপত্তাবলয় আর ইসরায়েলের জন্য অবশিষ্ট ছিল না।
ইসরায়েলের সরকারপন্থী টিভি চ্যানেল-১৪-এর এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে হামলার নির্দিষ্ট সময় তিনি দুই সপ্তাহ আগে ঠিক করেন। তবে এ অভিযান চালানোর ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ তিনি কয়েক মাস আগেই নিয়ে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুনতেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি, তাহলে ইরানের ইউরেনিয়াম গেল কোথায়১৫ ঘণ্টা আগে