আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট দলের নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত—বাংলাদেশপন্থী আর ফ্যাসিবাদপন্থী। যারা আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চায়, তারা বাংলাদেশপন্থী আর যারা চায় না, তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি।

আজ বেলা তিনটার পর থেকে শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত শুরু হয়েছে। সাড়ে তিনটা থেকে শাহবাগ মোড়ের ডিজিটাল স্ক্রিনের নিচে সিঁড়ির ওপর অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সোয়া তিনটার পর বক্তব্য দেন গণমায়েতের ডাক দেওয়া এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ঐক্য বিনষ্টের জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলন নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়, এটা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাস্তায় অবস্থান করার কথা উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আমি বলতে চাই, কোনো ষড়যন্ত্রে বা চাপে যদি আমার মুখ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে আমি যদি কোনো ঘোষণা নাও দিই, মনে রাখবেন আপনাদের মঞ্জিলে মকসুদ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।’

২০১৩ সালে এই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এখান থেকে ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনির শেষ পেরেকটা মারব। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হব গ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

হবিগঞ্জে অবৈধ ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বায়ু

হবিগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বায়ু। নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। আইনের তোয়াক্কা না করে, নবায়নকৃত লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাগুলো চালু রেখেছেন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে ইটকাটা ও পোড়ানোর কাজ। পরিবেশবাদীরা বলছেন, ভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নিজস্ব আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জে বর্তমানে ৯০টি ইটভাটা সক্রিয়। এর মধ্যে একটিরও নবায়নকৃত লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারপরও এই ইটভাটাগুলো দিন-রাত ধোঁয়া ছড়িয়ে চলছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। পরিবেশ, কৃষি, জীববৈচিত্র্য সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব মারাত্মক।

আরো পড়ুন:

রাবিতে আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন

সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিকে দূষিত সুন্দরবন

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “কোনো ইটভাটাই সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে না। ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী; ইটভাটা স্থাপনের জন্য কেবল অকৃষি জমি ব্যবহার করা যাবে।”

ইট পোড়ানোর নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ (ধারা ৯-এর উপধারা ৫) অনুযায়ী, কোনো ইটভাটা উপজেলা সদর, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা বা ফলজ বাগান থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে থাকতে হবে। হবিগঞ্জের বাস্তবতা উল্টো। বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটা উপজেলা সদর বা জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যেই স্থাপিত। বাহুবলের মিরপুর-ধুলিয়াখাল, মিরপুর-বাহুবল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর-শায়েস্তাগঞ্জ অংশ এবং শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট সড়কের পাশে সারি সারি ইটভাটা দৃশ্যমান। স্কুল, মসজিদ ও বাজারের পাশেও জ্বলছে চুলি। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলায় কোনো ইটভাটারই নবায়ন বৈধ নেই। বাহুবল উপজেলার মেসার্স পলাশ ব্রিকসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ২৩ জুন, মেসার্স সামিন ব্রিকসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালে, মেসার্স পদ্মা ব্রিকসের মেয়াদ শেষ ২০২৩ সালের জুনে। চুনারুঘাটের মেসার্স সামস ব্রিকস ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ।

নবীগঞ্জের মেসার্স মাস্টার ব্রিকস ও গোল্ড ব্রিকসের মেয়াদ শেষ ২০২১ সালে। ব্ল অটো ব্রিকসের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মেসার্স সোনালী ব্রিকসের মেয়াদও শেষ ২০২০ সালে। এসব ইটভাটায় চুলি জ্বলছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইটভাটা মালিক স্বীকার করেছেন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলছে ভাটার কার্যক্রম। হবিগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির কিছু প্রভাবশালী সদস্য প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সরকারি দিবস ও অনুষ্ঠানে অনুদান দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ লাইসেন্স, ডিসি লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও ইট ভাটা বন্ধ হয় না।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, বাহুবল ও চুনারুঘাটের বসিনা, বানিয়াগাঁও, দৌলতপুর, মুগকান্দি, শ্রী রামপুর, শ্রীকুটা, গোগাউড়া প্রভৃতি এলাকার ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট তৈরির জন্য। ফলে ফসল উৎপাদন কমে গেছে, জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

তাদের ভাষ্য, আম-কাঁঠালসহ মৌসুমি ফলের গাছে আর আগের মতো ফল আসে না। ধুলার আস্তরণে গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমান বলেন, “যেসব ইটভাটা পরিবেশ নীতি লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী জানান, অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করে বিভাগীয় অফিসে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলে অভিযান চালানো হবে।

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ