আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ, প্রশাসন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বড় ধরনের বদলি ও পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার এক দিনে সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি ও নতুন কর্মস্থলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অধস্তন আদালতের তিন স্তরের বিচারকেরা রয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারি করে ৬৪ জেলায় এসপি চূড়ান্ত করা হয়। আজ তাঁদের বদলি ও পদায়ন করা হয়। এর মধ্যে ৫০ জন বর্তমান এসপিকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে। আর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে জেলার এসপি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী পুলিশ কমিশনার পদে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল পুলিশের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সম্প্রতি একাধিক প্রজ্ঞাপনে ৫০ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয় সরকার। আর গতকাল ইউএনও পর্যায়েও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৬৬ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়।

জাতীয় নির্বাচনে ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওদের অনেকেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও এবার এখনো রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন, সে সিদ্ধান্ত জানায়নি নির্বাচন কমিশন।

বিচারকদের পদোন্নতি-বদলি

জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও যুগ্ম জেলা জজ পদে গতকাল ৮২৬ জনকে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ ২৫০ জন, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ ২৯৪ জন ও সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২৮২ জন।

কোন জেলায় কারা হলেন এসপি

ঢাকার এসপি মো.

আনিসুজ্জামানকে কুমিল্লায়, নারায়ণগঞ্জের এসপি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে কুষ্টিয়ায়, মুন্সিগঞ্জের এসপি মুহম্মদ শামসুল আলম সরকারকে টাঙ্গাইলে, গাজীপুরের এসপি চৌধুরী মো. যাবের সাদেককে জামালপুরে, নরসিংদীর এসপি মো. মেনহাজুল আলমকে মুন্সিগঞ্জে, মানিকগঞ্জের এসপি মোছা. ইয়াছমিন খাতুনকে হবিগঞ্জে, চট্টগ্রামের এসপি মো. সাইফুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ফেনীতে, রাঙামাটির এসপি এস এম ফরহাদ হোসেনকে কিশোরগঞ্জে, খাগড়াছড়ির এসপি মো. আরেফিন জুয়েলীকে সাতক্ষীরায়, বান্দরবানের এসপি মো. শহিদুল্লাহ কাওছারকে বান্দরবানে, নোয়াখালীর এসপি মো. আবদুল্লাহ আল ফারুককে নরসিংদীতে, ডিএমপির উপকমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীর এসপি মো. হাবিবুর রহমানকে মাগুরায়, কুমিল্লার এসপি নাজির আহমেদ খাঁনকে চট্টগ্রামে, চাঁদপুরের এসপি মুহম্মদ আব্দুর রকিবকে রাঙামাটির এসপি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি এহতেশামুল হককে মাদারীপুরে, সিলেটের এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে খুলনায়, গোপালগঞ্জের এসপি মো. মিজানুর রহমানকে ঝালকাঠিতে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসপি মো. মাহফুজ আফজালকে ঝিনইদহে, হবিগঞ্জে বদলির আদেশপ্রাপ্ত গৌতম কুমার বিশ্বাসকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে, খুলনার এসপি টি এম মোশাররফ হোসেনকে নোয়াখালীতে, ঝিনাইদহের এসপি মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদকে রাজবাড়ীতে, সাতক্ষীরার এসপি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামকে চুয়াডাঙ্গায়, বাগেরহাটের এসপি মো. আসাদুজ্জামানকে লালমনিরহাটে, যশোরের এসপি রওনক জাহানকে শরীয়তপুরে, মাগুরার এসপি মিনা মাহমুদাকে জয়পুরহাটে, নড়াইলের এসপি মো. রবিউল ইসলামকে পঞ্চগড়ে, পটুয়াখালীর এসপি মো. আনোয়ার জাহিদকে পাবনায়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি আবু বসার মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সুনামগঞ্জে, মেহেরপুরের এসপি মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকীকে পিরোজপুরে, বরিশালের এসপি মো. শরিফ উদ্দীনকে গাজীপুরে, বগুড়ার ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট মো. বেলাল হোসেনকে ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের এসপি মো. আবদুর রহমানকে বান্দরবানে, ঝালকাঠির এসপি উজ্জ্বল কুমার রায়কে মেহেরপুরে, বরগুনার এসপি মোহাম্মদ আল মামুন শিকদারকে নড়াইলে, পিবিআইয়ের এসপি মো. আবু ইউসুফকে পটুয়াখালীতে, রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলামকে বরিশালে, স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) এসপি মো. জসিম উদ্দীনকে গাইবান্ধায়, ডিএমপির খন্দকার ফজলে রাব্বিকে কুড়িগ্রামে, নাটোরের এসপি মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামকে নওগাঁয়, বগুড়ার এসপি মো. জেদান আল মুসাকে দিনাজপুরে, জয়পুরহাটের এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবকে নাটোরে, পুলিশ সদর দপ্তরের এসপি মো. হাবীবুল্লাহকে গোপালগঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত এসপি এ এন এম সাজেদুর রহমানকে কক্সবাজারে, ময়মনসিংহের এসপি কাজী আখতার উল আলমকে সিলেটে, দিনাজপুরের এসপি হিসেবে বদলির আদেশপ্রাপ্ত মো. মিজানুর রহমানকে ঢাকা জেলায়, ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি শেখ জাহিদুল ইসলামকে নীলফামারীতে, সিআইডির এসপি মো. আবু তারেককে লক্ষ্মীপুরে, গাইবান্ধায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত এসপি মোহাম্মদ সারওয়ার আলমকে মানিকগঞ্জে, নীলফামারীতে বদলির আদেশপ্রাপ্ত এসপি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে মৌলভীবাজারে, পিবিআইয়ের এসপি মো. কুদরত ই খুদাকে বরগুনায় ও লালমনিরহাটের এসপি মো. তরিকুল ইসলামকে নেত্রকোনা জেলায় বদলি করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ক ম হ ম মদ ম প র র এসপ য় র এসপ ট র এসপ ন র এসপ ল র এসপ ব চ রক য় বদল

এছাড়াও পড়ুন:

সুপার ওভারে কোনো দলই অভ্যস্ত নয়, দেশে ফিরে আকবর আলী

জিশান আলমকে কি ওই শট খেলতেই হতো? প্রথম ২ বলে ৬ রান পাওয়া বাংলাদেশ কি শেষ ৪ বলে আরও ৬ রান তুলতে পারত না? ৪ বলে ৬ রান তুলতে তো প্রতি বলে বড় শটের দরকার হয় না!

গত পরশু কাতারে রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষ সুপার ওভারে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া আকবর আলী এ নিয়ে কী বলছেন?

আজ সকালে কাতার থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আকবর বলেছেন, কোনো দল সুপার ওভার খেলতে অভ্যস্ত নয়। ভারতের বিপক্ষে করা তাঁর শিশুতোষ ভুল নিয়েও কথা বলেন আকবর।

সেদিন সুপার ওভারে ৬ রান তুলেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম বলে হাবিবুর রহমান ১ রান নেন। দ্বিতীয় বলে আবদুল গাফফার ফিরতি ক্যাচ দেন পাকিস্তানি পেসার আহমেদ দানিয়ালকে। পরের বলে ওয়াইড থেকে আসে ৫ রান। বৈধ তৃতীয় বলে জিশান আলমকে বোল্ড করে দেন দানিয়াল। সুপার ওভারে বাকি ৩টি বল খেলতে পারলে ১০ রানের বেশি তোলার সম্ভাবনা থাকত বাংলাদেশের। এই টুর্নামেন্টে ইয়র্কার স্পেশালিস্ট হয়ে ওঠা রিপন মণ্ডলের বিপক্ষে ১০ থেকে ১২ রান তোলা সহজ হতো না পাকিস্তান ‘এ’ দলের। কিন্তু সংগ্রহ কম হওয়ায় পাকিস্তান ‘এ’ দলে সহজেই ম্যাচটি জিতে নেয়।

সুপার ওভারের পারফরম্যান্স নিয়ে আকবর বলেছেন, ‘সুপার ওভারে কোনো দলই অভ্যস্ত নয়, সুপার ওভার হয়ই কালেভদ্রে। টানা দুইটা ম্যাচে সুপার ওভার খেলার ঘটনা কমই ঘটে। সুপার ওভারে হাইরিস্ক শটই খেলতে হয়, অনেক সময় ক্লিক করে, অনেক সময় করে না। আমি এভাবেই দেখছি ব্যাপারটাকে।’

সেদিন সুপার ওভারের ব্যাটসম্যানদের সমন্বয় নিয়ে আকবর বলেন, ‘সুপার ওভারে সোহানকে (হাবিবুর) পাঠানো কারণ হলো পুরো টুর্নামেন্টে ও আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান ছিল। আর সাকলাইন আবদুল গাফফার) ওই ম্যাচে অনেক ভালো টাচে ছিল।’

ফাইনাল জিততে না পেরে হতাশাও প্রকাশ করেছেন আকবর, ‘প্লেয়ার, কোচিং স্টাফ থেকে সবাই একটু হতাশ, যেখান থেকে আমরা ফিরে এসেছি, এরপর সুভার ওভারে হারা সবার জন্য হতাশাজনক। চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটা দেওয়ার, শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। সব মিলিয়ে বলতে হবে আমরা বেশির ভাগ জায়গায় ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ফাইনাল জিততে পারলে, কোনো কোনো ম্যাচে ভুল কম করলে বলতাম আমরা পারফেক্ট টুর্নামেন্ট খেলে ফিরেছি।’

এর আগে সেমিফাইনালেও ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সুপার ওভার খেলে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সেদিন ম্যাচ সুপার ওভারে যায় আকবরের বোকামিতে। সেমিফাইনালে শেষ বলে ভারত ‘এ’ দলের লাগত ৪ রান। হার্শ দুবে বাউন্ডারি মারা চেষ্টা করলেও বল যায় লং অনে জিশানের হাতে। তিনি উইকেটকিপার আকবরের দিকে থ্রো করলেও ২ রান নেয় ভারত ‘এ’ দল।

এরপর হার্শকে রানআউট করতে আকবর বল স্টাম্পে মারলেও স্টাম্প না ভাঙায় কোনো ফিল্ডারও কাছে না থাকায় ভারত ‘এ’ দল সুযোগ পেয়ে তৃতীয় রান নিয়ে ম্যাচ টাই করে। অথচ বল হাতে রেখে দিলেও বা হেঁটে গিয়ে স্টাম্প ভাঙলেও ১ রানে জিততে পারত বাংলাদেশ। এ নিয়ে আকবর বলেছেন, ‘ওই মোমেন্টে কী হয়েছে, আমি নিজেও জানি না। আমি কেন করেছি, এটার কোনো ব্যাখ্যাও নেই। তবে যে ভুলটা আমি করেছি, ওটা অনূর্ধ্ব–১২–এর খেলোয়াড়েরাও করবে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপার ওভারে কোনো দলই অভ্যস্ত নয়, দেশে ফিরে আকবর আলী