ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
Published: 26th, November 2025 GMT
শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।
কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।
এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।
গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’
এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।
তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।
কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।
আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র স বজনদ র সন ধ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সম–অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চাইলে স্বাগত জানাই: মামুনুল হক
খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমাদের অনেকে অফার করেছিল যে তোমরা লভ্যাংশ নিয়ে যাও; মালিকানা দাবি কইরো না। আমরা বলেছি, লভ্যাংশ নয়; আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের মালিকানা চাই। তারা আমাদের লভ্যাংশ দিতে চায়। আমরা বলেছি, ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ চাই না; ১০ শতাংশের মালিকানা চাই।’
ময়মনসিংহ নগরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে দলটির ময়মনসিংহ মহানগর ও সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে নির্বাচনী গণসমাবেশে এ কথা বলেন মামুনুল হক।
ভিক্ষার নয়, অংশীদারত্ব ও মালিকানার রাজনীতি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘অনেকেই মনে করেছিলেন, আমরা হয়তো বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, সংসদ সদস্যপদ বা রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তি নিশ্চিত করব। আমরা সে পথে না হাঁটায় অনেকে মর্মাহত ও বিস্মিত হয়েছেন। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা অন্যের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করতে চায় না।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমরা চাই নিজের পায়ে স্বাধীন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মালিকানাসূত্রে রাজনীতি করব। যদি কেউ সম–অধিকারের ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে, রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চায়, তাহলে স্বাগত জানাই। ভিক্ষার থলি ধরে কেউ আমাদের দিকে হাত বাড়ালে ধিক্কার জানাই, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।’
শেখ হাসিনার পরিণাম থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাগিদ জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি কেউ ফ্যাসিবাদের মতো চলতে চেষ্টা করে, তাঁর পরিণাম শেখ হাসিনার থেকেও ভয়াবহ হবে ইনশা আল্লাহ। সবাইকে হুঁশিয়ার করি, বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদী সাজতে যাইয়েন না। মানুষ যদি একবার ক্ষিপ্ত হয়, তাহলে খুব খতরনাক হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন যে কেউ দেখতে পারেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদী হওয়ার চিন্তাও করবেন না, স্বপ্নও দেখবেন না, খবরদার!’
মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক পক্ষকে আহ্বান জানাই, যারা বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে নিগৃহীত হয়েছেন, জুলুমের শিকার হয়েছেন, জুলাই বিপ্লবের অংশীজন, আসুন এক টেবিলে বসি; অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে পরিচালিত করি। অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে যদি শুধু একদলীয় কায়দায় আবার বাকশালি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলে, তাহলে আবার জুলাই হবে, শাপলা চত্বর হবে।’
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি আবদুস সালাম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে দলটির প্রার্থী মুফতি কাজী মোশতাক আহমাদ ফারুকী, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল আজিজ, কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল্লাহ হাদী, কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক ফজলুর রহমান প্রমুখ। এর আগে জেলার নান্দাইল ও গৌরীপুরের নির্বাচনী গণসমাবেশে বক্তব্য দেন মামুনুল হক।