ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি পাকিস্তানের ওপর ভারতের হামলা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের সামরিক স্থাপনা টার্গেট করার পর, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের কারিগরি স্থাপনা, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, রেডার সাইট এবং অস্ত্র ডিপোগুলোকে বেছে বেছে টার্গেট করা হয়েছে।’

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, ‘রফিকি, মুরিদ, চাকলালা, রহিমইয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ায় অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, পাকিস্তানের পসরুরে অবস্থিত রেডার সাইট এবং শিয়ালকোটের বিমান ঘাঁটি টার্গেটেও ভারত হামলা চালিয়েছে।

এই ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সময় সাধারণ মানুষের অনেক কম ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের সিনেটে বিতর্কিত সংশোধনী বিল তড়িঘড়ি পাসের উদ্যোগ, বিরোধীদের প্রতিবাদ

পাকিস্তান সরকার গতকাল শনিবার বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল সিনেটে উপস্থাপন করেছে। বিরোধীদলগুলো বলেছে, সরকার বিলটি খুব দ্রুত পাস করাতে চাইছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর ব্যাপ্তি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার ২৬ পৃষ্ঠার এ বিল উপস্থাপন করেন। পাস হলে এটি ‘সংবিধান (২৭তম সংশোধনী) আইন, ২০২৫’ নামে পরিচিত হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি সিনেটে তোলা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠক পরিচালনা করেন। সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে নিয়ে আজারবাইজানের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশটিতে গেছেন তিনি।

সিনেটের চেয়ারম্যান ইউসুফ রাজা গিলানি বিলটিকে উচ্চকক্ষের আইন ও বিচারবিষয়ক কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন; যেন তারা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে যৌথ বৈঠক করে আলোচনা করে।

বিলটিতে একটি কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত গঠন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন, প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যার সীমা বৃদ্ধি ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কাঠামোয় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে গিয়ে গতকাল বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে সিনেটের ওই অধিবেশন ডাকা হয়। তবে বিলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত বৈঠক প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বিত হয়।

বিলটিতে একটি কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত গঠন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন, প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যার সীমা বৃদ্ধি ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কাঠামোয় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিনেট অধিবেশন চলাকালেই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির উভয় কক্ষের আইন ও বিচারবিষয়ক কমিটি যৌথভাবে একটি গোপন বৈঠক করে বিলটি পর্যালোচনা করে। বৈঠক বর্জন করেন কমিটির জেইউআই-এফ ও পিটিআইয়ের সদস্যরা।

এদিকে খুবই বিরলভাবে আজ রোববার বিকেলেও সিনেটের অধিবেশন বসছে। একমাত্র আলোচ্য বিষয় হলো, এ সংশোধনী বিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, সরকার বিলটি দ্রুত পাস করাতে ব্যস্ত।

এ বিষয়ে পিটিআইয়ের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নেতা আলী জাফর বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতিতে এ বিল নিয়ে বিতর্ক অনুচিত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ও তার মিত্ররা সংশোধনীটি তাড়াহুড়ো করে পাস করাতে চাইছে। তিনি প্রস্তাব দেন, বিলের খসড়াটি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত করা হোক।

বিলের মূল বৈশিষ্ট্য

বিলের মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের ধারণা প্রথম আসে ২০০৬ সালের গণতন্ত্র সনদে। সনদটি পিপিপি ও পিএমএল–এন যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছিল। প্রস্তাবিত আদালতে দেশের সব প্রদেশের বিচারপতি থাকবেন। এটি শুধু সাংবিধানিক বিষয়ে রায় দেবেন, অন্যদিকে বর্তমান উচ্চ আদালতগুলো অন্যান্য মামলা দেখবেন।

মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী নিয়ে আলাপ–আলোচনার সময় কিছু সদস্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠনের মাধ্যমে এ বিষয়ে পরীক্ষা করা হোক। কিন্তু এসব বেঞ্চ মামলার জট কমাতে পারেনি, কারণ বিচারপতিরা নিয়মিত মামলায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবে দেখা যায়, আদালতের মোট সময়ের ৪০ শতাংশ ব্যয় হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশ মামলায়।’

বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতিতে এ বিল নিয়ে বিতর্ক অনুচিত। সরকার ও তার মিত্ররা সংশোধনীটি তাড়াহুড়ো করে পাস করাতে চাইছে।আলী জাফর, পিটিআইয়ের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নেতা

আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে’। সেখানে কিছু নতুন ধারা যোগ করা হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করেন যে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেওয়া হয়েছে। ‘এটি একটি উপাধি, কোনো নতুন পদ বা নিয়োগ নয়। সেনাপ্রধানের পদ পাঁচ বছরের জন্য নির্ধারিত’, বলেন তিনি।

এ ছাড়া, আগামী ২৭ নভেম্বর বর্তমান চেয়ারম্যান অবসর নেওয়ার পর ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি (সিজেসিএসসি)’ পদটি বিলুপ্ত হবে। এরপর কোনো নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে না। সেনাপ্রধানই প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

নতুন বিল অনুযায়ী, সেনাপ্রধানের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিয়োগ করবেন।

বিল থেকে পড়ে শোনাতে গিয়ে তারার বলেন, ‘যদি কেন্দ্রীয় সরকার কোনো সামরিক কর্মকর্তাকে ফিল্ড মার্শাল, এয়ার মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স বা অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট (পাঁচ তারকা পদ) পদে উন্নীত করে; তবে ওই কর্মকর্তা আজীবন এ পদ ও সুবিধা পাবেন এবং ইউনিফর্ম পরিধান করবেন।’

মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রের স্বার্থে এমন কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব সরকার নির্ধারণ করবে।

বিলটিতে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, ২৪৮ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে রাষ্ট্রপতিকে আজীবন ফৌজদারি মামলা বা গ্রেপ্তার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। তবে গভর্নরদের ক্ষেত্রে এ সুরক্ষা থাকবে শুধু তাঁদের দায়িত্ব পালনকালে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ও গভর্নর দুজনই শুধু মেয়াদকালে এমন সুরক্ষা পান।

মন্ত্রী আরও জানান, প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যার সাংবিধানিক সীমা সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদের মোট সদস্যসংখ্যার ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৩ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মজলিস-ই-ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিনের সিনেটর ও পিটিআই-মনোনীত বিরোধীদলীয় নেতা আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ক্ষমতাবানদের ইচ্ছায় করা এ সংশোধনীর নাটক আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কিন্তু যাঁরা চরম দারিদ্র্যে বাস করছেন, তাঁদের জীবনের উন্নতির জন্য কোনো সংশোধনী আনা হয়েছে কি?’‘সংবিধানের ওপর আক্রমণ’

মজলিস-ই-ওয়াহদাত–ই–মুসলিমিনের সিনেটর ও পিটিআই–মনোনীত বিরোধীদলীয় নেতা আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস প্রশ্ন তোলেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া এত বড় সংশোধনী এত তাড়াহুড়ো করে আনা হচ্ছে কেন?

আব্বাস বিলটিকে ‘সংবিধানের ওপর আক্রমণ’ বলে নিন্দা জানান। তাঁর দাবি, বর্তমান আইনসভা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়; বরং ‘ফর্ম ৪৭–এর ফসল’। অর্থাৎ ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপির ইঙ্গিত দেন তিনি। আরও বলেন, এ সংশোধনীগুলো বিচারব্যবস্থাকে ‘নিষ্ক্রিয় করার’ জন্য আনা হয়েছে।

এই নেতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ক্ষমতাবানদের ইচ্ছায় করা এ সংশোধনীর নাটক আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কিন্তু যাঁরা চরম দারিদ্র্যে বাস করছেন, তাঁদের জীবনের উন্নতির জন্য কোনো সংশোধনী আনা হয়েছে কি?’

জেইউআই-এফ নেতা সিনেটর কামরান মুরতাজা বলেন, ‘মাত্র ১৩ মাস আগে পাস হওয়া ২৬তম সংশোধনী কার্যত এখন বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুনসরকার চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিরোধীরা, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শাহবাজ!০৮ এপ্রিল ২০২২

পিপিপি নেতা সিনেটর শেরি রেহমান বলেন, ‘যদি কেন্দ্র এখন ব্যয়ভার সামলাতে না পারে, তবে আমরা সবাই বসে দেখি, কোথায় অপচয় হচ্ছে; কিন্তু প্রদেশগুলোর বাজেট কেটে নয়।’

এদিকে, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রধান সিনেটর আইমাল ওয়ালি খান বলেন, তাঁর দল জনগণের স্বার্থে নেওয়া যেকোনো উদ্যোগে সমর্থন দেবে।

ওয়ালি খান বলেন, আইন প্রণয়ন করা সরকারের এখতিয়ার এবং বিরোধীদলগুলোকে আইনসভার কমিটিতে যোগ দিয়ে বিলের বিষয়ে ‘গঠনমূলক মতামত’ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুনবিলাওয়াল বললেন, গণতন্ত্রই আসল প্রতিশোধ০৮ এপ্রিল ২০২২

সম্পর্কিত নিবন্ধ