ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি পাকিস্তানের ওপর ভারতের হামলা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের সামরিক স্থাপনা টার্গেট করার পর, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের কারিগরি স্থাপনা, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, রেডার সাইট এবং অস্ত্র ডিপোগুলোকে বেছে বেছে টার্গেট করা হয়েছে।’

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, ‘রফিকি, মুরিদ, চাকলালা, রহিমইয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ায় অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, পাকিস্তানের পসরুরে অবস্থিত রেডার সাইট এবং শিয়ালকোটের বিমান ঘাঁটি টার্গেটেও ভারত হামলা চালিয়েছে।

এই ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সময় সাধারণ মানুষের অনেক কম ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামের ট্রেন ভাড়া ১০৫ টাকা স্টেশনে যেতে লাগে ৩০০ টাকা

দুপুর সাড়ে ১২টা, লোহাগাড়া রেলস্টেশন। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌঁছার কথা ১২টা ১১ মিনিটে, ২ মিনিট বিরতির পর ছাড়ার কথা। ইতোমধ্যে ১৯ মিনিট লেট, তবু ট্রেন আসেনি। ১২টা ৪৫ মিনিটে স্টেশনে ঢুকল প্রবাল এক্সপ্রেস। মাত্র ৪ জন যাত্রী উঠলেন ট্রেনে, নামলেন ২ জন। ২ মিনিট দাঁড়ানোর কথা থাকলেও ১৫ মিনিট পর ট্রেনটি চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। এ একটি ট্রেনই লোহাগাড়া স্টেশনে দিনে দুইবার থামে। এটি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে এবং বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখে ছাড়ার কথা। তবে ট্রেনটি প্রায় প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৫০ মিনিট লেট করে। কখনও তা ঘণ্টার কাঁটা পার করে দেয়।
সরেজমিন দেখা গেল, রেলস্টেশনের সব কক্ষে তালা ঝোলানো। শুধু স্টেশনমাস্টারের কক্ষটি খোলা ছিল। স্টেশনমাস্টার মুহাম্মদ লোকমান বলেন, ‘লোহাগাড়া স্টেশনে যাত্রী তেমন নেই। স্টেশনে যাতায়াতের সংযোগ সড়কটি নির্মাণ না হওয়ায় যাত্রী মিলছে না। লোহাগাড়া সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে যাত্রীদের আসতে হয় স্টেশনে, গুণতে হয় ৩০০ টাকা, যা চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়ার প্রায় তিনগুণ। এই অবস্থায়ও যারা ট্রেনে চড়েন তারা আসলে শখের বশে আসেন।’
প্রসঙ্গত, লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রামের ট্রেন ভাড়া প্রথম শ্রেণি চেয়ার ১০৫ টাকা ও শোভন চেয়ার ৮৫ টাকা। কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া প্রথম শ্রেণি চেয়ার ১৪০ টাকা ও শোভন চেয়ার ১২৫ টাকা। লোহাগাড়া সদর থেকে বাসে চট্টগ্রামের ভাড়া ১০০ টাকা ও কক্সবাজারের ভাড়া ১৪০ টাকা। অথচ সদর রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ায় খরচ হয় ৩০০ করে ৬০০ টাকা।
স্টেশনমাস্টার আরও জানান, রেলস্টেশন এখনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ রেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। এ স্টেশনের কারণে কক্ষগুলোতে তালা ঝোলানো রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন কক্ষে শ্রমিকরা কাজ করছেন। নিচে এলোমেলোভাবে বিদ্যুতের তার পড়ে আছে। লোহা, কংক্রিট, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ছড়ানো-ছিটানো এখানে সেখানে। যাত্রীদের বিশ্রামাগারে নেই কোনো আসবাব।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের লোহাগাড়া রেলস্টেশন চালু করা হলেও এখনও চালু হয়নি যাতায়াতের সড়ক। উপজেলার হাজী রাস্তা নামক এলাকার পশ্চিম দিকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়ক। সড়ক নয় যেন মেঠোপথ, পাড়া-মহল্লার মধ্য দিয়ে ছোট এ সড়ক দিয়ে যেতে হয় রেলস্টেশনে। তবে স্টেশনে পৌঁছার আগে সড়কে একটি কালভার্ট এক বছর ধরে নির্মাণাধীন। সে কারণে স্টেশন পর্যন্ত যানবাহন পৌঁছাতে পারে না। 

তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মকর্তা মো. রাসেল জামান বলেন, ‘রেলস্টেশনের অবকাঠামোর কাজ ইতিমধ্যে শেষে হয়েছে। শুধু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেটাও শেষ হয়ে যাবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘লোহাগাড়া রেল স্টেশনের ফিনিশিং কাজ চলছে। খুব শিগগিরইই আমরা স্টেশন বুঝে নেব। এরপর যাত্রীরা স্টেশনের সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।’
যাত্রী মাওলানা মকছুদ বলেন, ‘শখ করে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় স্টেশন পর্যন্ত গাড়ি আসে না। ৩০০ টাকা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে স্টেশনে এসেছি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সদর থেকে এত দূরে কেন রেল স্টেশন করা হলো? কার স্বার্থে করা হলো?’ 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লোহাগাড়া রেল স্টেশনে যাতায়াতের দুটি  সড়ক রয়েছে। যেটি মানুষ বেশি ব্যবহার করেন সেটা হলো– আধুনগর খান হাট থেকে চুনতি হাজির রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটি। এ সড়ক উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সড়ক উন্নয়নের কাজ পেয়েছেন বান্দরবান জেলার ঠিকাদার ইউ টি মং। 
জানা যায়, ঠিকাদার নিজে সড়কের কাজ না লোহাগাড়ার স্থানীয় ঠিকাদারদের সাব–কন্ট্রাক দিয়েছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করেন।  স্থানীয়রা সড়কটির নির্মাণ কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারপরও ঠিকাদার কাউকে তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যান। তবে একবছর আগে কালভার্টের কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় গত বছরের ৩১ মে সড়কের কাজ পরিমাপ করা হয়। সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুমন তালুকদারকে আহবায়ক ও উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনীরকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেন। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কমিটি পরবর্তী ৭ দিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও দেয়নি।
লোহাগাড়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশল মুহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনীর বলেন, ‘আগের ঠিকাদারকে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ