পাকিস্তান থেকে ফিরে রিশাদ শোনালেন ‘যুদ্ধে’র অভিজ্ঞতার কথা
Published: 10th, May 2025 GMT
প্রথমবারের মতো গিয়েছিলেন বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে। সেই রোমাঞ্চের সঙ্গে পারফরম্যান্সও ছিল ভালো। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে পিএসএলে ৫ ম্যাচ খেলে নেন ৯ উইকেট। অথচ আজ বিকেলে দেশে ফিরে রিশাদ হোসেনকে বর্ণনা করতে হলো মাঠের বাইরের ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার কথা।
কয়েক দিন ধরে ভারত–পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি আক্রমণের মধ্যে হামলা হয় রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের পাশেও। এ ঘটনার পর পিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পিএসএল খেলতে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানান।
এরপরই পিএসএল স্থগিতের ঘোষণা আসে। পাকিস্তান থেকে বিশেষ বিমানে দুবাইয়ে আনা হয় বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারকে, সেখান থেকে আজ বিকেলে ঢাকায় পৌঁছান নাহিদ রানা ও রিশাদ। বিমানবন্দরে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রিশাদ বলেন, ‘আসলে প্রথম যে পরিস্থিতি আমরা দেখেছি, শুনতে পেয়েছি, শোনার পর একটু আতঙ্কিত হয়েছিলাম সবাই, ভয় কাজ করছিল। সবাই সাপোর্ট করছিল দেশ থেকে, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেও। বিসিবি থেকেও অনেক খোঁজখবর নিয়েছে।’
নাহিদ রানা একটু ঘাবড়ে যায় এবং একটু চুপচাপ ছিল। আমি ওকে বলছি টেনশনের কিছু নেই, আমরা দুজন আছি। আল্লাহ তো আছেই।রিশাদ হোসেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটারএকে দেশের বাইরে, তার ওপর যে দেশে খেলতে গেছেন, সেই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে! পাকিস্তান থেকে পরিবারকেও সাহস জোগাতে হয়েছে রিশাদদের। ‘চেষ্টা করছি ভালো রাখার জন্য (পরিবারকে), পজিটিভ কথা বলার জন্য যেন টেনশন না করে’—বলেছেন বাংলাদেশ দলের এই লেগ স্পিনার।
বিমানবন্দরে কথা বলছেন রিশাদ হোসেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই আয়োজক গ্রেপ্তার
ইরানের কিশ দ্বীপে এক দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়া নারীদের অংশ নেওয়ার ছবি প্রকাশের পর দুজন আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দেশটির বিচার বিভাগ এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির অতি রক্ষণশীলদের সমালোচনা বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ ব্যর্থ হচ্ছে। পশ্চিমা প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কায় এসব সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর থেকে ইরানে অনেক নারী হিজাব আইন লঙ্ঘন করে চলেছেন। গত সপ্তাহে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তর জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হিজাববিহীন এক নারীর ছবি প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে পড়ে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাববিহীন নারীদের অংশ নেওয়ার ছবিগুলো শুক্রবারের। এতে দেখা যায়, অনেক নারী হিজাব ছাড়া দৌড়ে অংশ নেন। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে হিজাব বাধ্যতামূলক করে ইরান।
বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৌড় প্রতিযোগিতার দুই প্রধান আয়োজককে পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে একজন কিশ মুক্তাঞ্চলের কর্মকর্তা। অন্যজন প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কিশ দ্বীপের এ দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের বরাতে মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনকানুন, ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি এবং পেশাগত নীতিমালা মানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগেই (আয়োজকদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছে।’
ইরানের ‘তাসনিম’ ও ‘ফার্স’-এর মতো রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলো এ দৌড় প্রতিযোগিতাকে আগেই অশালীন এবং ইসলামি আইনের প্রতি অসম্মানজনক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছিল।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাহ সরকার উৎখাত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র নারীদের পোশাকে কড়াকড়ি আরোপ করে আইন পাস করে। শুরুতেই এ আইনের বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, জনপরিসরে নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখা এবং শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
২০২২ সালে যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে রাজধানী তেহরান থেকে মাশা আমিনি নামের এক কুর্দি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নীতি পুলিশের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে কয়েক মাস টানা বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েক শ বিক্ষোভকারী নিহত হন। গ্রেপ্তার হন কয়েক হাজার। এরপর হিজাব আইন মানার ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে হিজাব আইন প্রয়োগের ব্যর্থতার অভিযোগ আনে। পরে দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই হিজাব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ইরানের পার্লামেন্ট হিজাব আইন লঙ্ঘনকারী নারীদের কঠোর শাস্তির আদেশসংবলিত একটি আইন পাস করে। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সরকার তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২৩ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে নারীরা হিজাব ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ওই বছরের মে মাসে দেশটির অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।