সুরা মুমিনুন পবিত্র কোরআনের ২৩তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ১১৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা বিশ্বাসীদের গুণাবলি, মানুষের সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহর নিয়ামত, নবীদের কাহিনি ও কিয়ামতের ভয়াবহতার ওপর আলোকপাত করে। মুমিনদের সাফল্যের সাতটি গুণ উল্লেখ করায় এটি ‘সুরা মুমিনুন’ (বিশ্বাসীগণ) নামে পরিচিত। এই সুরা বিশ্বাসীদের জীবনে সফলতার পাথেয় হিসেবে কাজ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কুরআন, সুরা মুমিনুন)
সফলকাম বিশ্বাসীদের সাত গুণ
সুরা মুমিনুনের শুরুতে বিশ্বাসীদের সাতটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা এই গুণাবলি অর্জন করবেন, তাঁরা ফেরদৌসের অধিকারী হবেন, ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে বিশ্বাসীরা, যারা তাদের নামাজে বিনয় ও নম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাত দানে সক্রিয়, যারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী বা দাসীদের ক্ষেত্রে নয়, কারণ এতে তারা নিন্দনীয় নয়। কিন্তু যারা এদের বাইরে অন্য কাউকে কামনা করে, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী। আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের নামাজে যত্নবান, তারাই হবে ফেরদৌসের অধিকারী, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)
এই গুণগুলো বিশ্বাসীদের জীবনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলার ভিত্তি স্থাপন করে এবং জান্নাতের পথ সুগম করে।
আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মানুষ সৃষ্টির রহস্য
সুরায় মানুষের সৃষ্টির ধাপগুলো বর্ণনা করে আল্লাহর সৃষ্টিশক্তির মহিমা তুলে ধরা হয়েছে, ‘আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাকে শুক্র বিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে রাখি, পরে আমি শুক্রকে জমাট রক্তে পরিণত করি, তারপর জমাট রক্তকে এক চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডে, আর চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডকে অস্থিপঞ্জরে। তারপর অস্থিপঞ্জরকে মাংস দিয়ে ঢেকে দিই, শেষে তাকে আরেক রূপ দিই। নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১২–১৪)
এই আয়াতগুলো মানুষের সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রক্রিয়া ও আল্লাহর অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে। সুরায় আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন মানুষকে পুনরুত্থিত করা হবে। (আয়াত: ১৫–১৬)
বৃষ্টি আল্লাহর নিয়ামত
বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে সজীব রাখেন, যা তাঁর অসংখ্য নিয়ামতের অন্যতম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারিবর্ষণ করি, তারপর আমি তা মাটিতে ধরে রাখি এবং আমি তা সরিয়ে নিতেও পারি। তারপর আমি তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি; তার মধ্যে তোমাদের জন্য থাকে প্রচুর ফল; আর তা থেকে তোমরা খেয়ে থাক।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১৮–১৯)
আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বৃষ্টির পানি পৃথিবীকে সবুজ করে, ফল–ফসল উৎপন্ন করে এবং প্রাণীদের জীবন ধারণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি ও রিজিক প্রদানের প্রক্রিয়ার একটি অলৌকিক নিদর্শন। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা মুমিনুনের ব্যাখ্যা)
নবীদের কাহিনি
সুরায় নুহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.) ও ঈসা (আ.)–এর কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নুহ (আ.)–এর সম্প্রদায় তাঁকে অবিশ্বাস করায় তাদের প্লাবনের মাধ্যমে নিমজ্জিত করা হয়। এই কাহিনিগুলো সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ও নবীদের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারপর আমি নুহর পরে অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসুল প্রেরণ করেছি। তারা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা এমন কিছুতে বিশ্বাস করেনি, যাকে তারা পূর্বে মিথ্যা বলেছিল।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৪৪)
কিয়ামতের ভয়াবহতা ও ক্ষমাপ্রার্থনা
সুরায় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বিশ্বাসীদের আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষকে তাদের কর্মের প্রতি সচেতন হতে ও আল্লাহর রহমত অন্বেষণে তৎপর থাকতে উৎসাহিত করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১১৮)
আরও পড়ুনসুরা কারিয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা০৪ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য় মত র আল ল হ ত রপর ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বাসীদের সাফল্যের সাত গুণ
সুরা মুমিনুন পবিত্র কোরআনের ২৩তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ১১৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা বিশ্বাসীদের গুণাবলি, মানুষের সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহর নিয়ামত, নবীদের কাহিনি ও কিয়ামতের ভয়াবহতার ওপর আলোকপাত করে। মুমিনদের সাফল্যের সাতটি গুণ উল্লেখ করায় এটি ‘সুরা মুমিনুন’ (বিশ্বাসীগণ) নামে পরিচিত। এই সুরা বিশ্বাসীদের জীবনে সফলতার পাথেয় হিসেবে কাজ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কুরআন, সুরা মুমিনুন)
সফলকাম বিশ্বাসীদের সাত গুণ
সুরা মুমিনুনের শুরুতে বিশ্বাসীদের সাতটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা এই গুণাবলি অর্জন করবেন, তাঁরা ফেরদৌসের অধিকারী হবেন, ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে বিশ্বাসীরা, যারা তাদের নামাজে বিনয় ও নম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাত দানে সক্রিয়, যারা তাদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী বা দাসীদের ক্ষেত্রে নয়, কারণ এতে তারা নিন্দনীয় নয়। কিন্তু যারা এদের বাইরে অন্য কাউকে কামনা করে, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী। আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের নামাজে যত্নবান, তারাই হবে ফেরদৌসের অধিকারী, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)
এই গুণগুলো বিশ্বাসীদের জীবনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলার ভিত্তি স্থাপন করে এবং জান্নাতের পথ সুগম করে।
আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মানুষ সৃষ্টির রহস্য
সুরায় মানুষের সৃষ্টির ধাপগুলো বর্ণনা করে আল্লাহর সৃষ্টিশক্তির মহিমা তুলে ধরা হয়েছে, ‘আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাকে শুক্র বিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে রাখি, পরে আমি শুক্রকে জমাট রক্তে পরিণত করি, তারপর জমাট রক্তকে এক চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডে, আর চর্বিতপ্রতিম মাংসপিণ্ডকে অস্থিপঞ্জরে। তারপর অস্থিপঞ্জরকে মাংস দিয়ে ঢেকে দিই, শেষে তাকে আরেক রূপ দিই। নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১২–১৪)
এই আয়াতগুলো মানুষের সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রক্রিয়া ও আল্লাহর অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে। সুরায় আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন মানুষকে পুনরুত্থিত করা হবে। (আয়াত: ১৫–১৬)
বৃষ্টি আল্লাহর নিয়ামত
বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে সজীব রাখেন, যা তাঁর অসংখ্য নিয়ামতের অন্যতম। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারিবর্ষণ করি, তারপর আমি তা মাটিতে ধরে রাখি এবং আমি তা সরিয়ে নিতেও পারি। তারপর আমি তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি; তার মধ্যে তোমাদের জন্য থাকে প্রচুর ফল; আর তা থেকে তোমরা খেয়ে থাক।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১৮–১৯)
আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বৃষ্টির পানি পৃথিবীকে সবুজ করে, ফল–ফসল উৎপন্ন করে এবং প্রাণীদের জীবন ধারণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি ও রিজিক প্রদানের প্রক্রিয়ার একটি অলৌকিক নিদর্শন। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা মুমিনুনের ব্যাখ্যা)
নবীদের কাহিনি
সুরায় নুহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.) ও ঈসা (আ.)–এর কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নুহ (আ.)–এর সম্প্রদায় তাঁকে অবিশ্বাস করায় তাদের প্লাবনের মাধ্যমে নিমজ্জিত করা হয়। এই কাহিনিগুলো সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি ও নবীদের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারপর আমি নুহর পরে অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসুল প্রেরণ করেছি। তারা তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা এমন কিছুতে বিশ্বাস করেনি, যাকে তারা পূর্বে মিথ্যা বলেছিল।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৪৪)
কিয়ামতের ভয়াবহতা ও ক্ষমাপ্রার্থনা
সুরায় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বিশ্বাসীদের আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটি মানুষকে তাদের কর্মের প্রতি সচেতন হতে ও আল্লাহর রহমত অন্বেষণে তৎপর থাকতে উৎসাহিত করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১১৮)
আরও পড়ুনসুরা কারিয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা০৪ মে ২০২৫