ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের সহযোগিতায় প্রধানশিক্ষকসহ অবরুদ্ধ অন্যান্য শিক্ষককে উদ্ধার করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

সোমবার উপজেলার ময়না এ.সি বোস ইনস্টিটিউশনে এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোখলেসুর রহমান অরুণের পদত্যাগ চেয়ে গত দুই মাস ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, সোমবার সকালে স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষক মিলনায়তনে গেলে ওই কক্ষের প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়ে মিছিল এবং স্কুল বাউন্ডারির টিনের বেড়া ভাঙচুর করে তারা। পরে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা স্থানীয় ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা ও থানা পুলিশকে জানালে তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করেন। 

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃধা আবুল হাশেম ও সহকারী শিক্ষক মো.

শাহাদাত হোসাইন বলেন, সোমবার সকালে তারা শিক্ষক রুমে ঢুকলে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়। এ সময় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। উপায় না পেয়ে শিক্ষকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন দেন। পরে তিনিএসে   মিলনায়তনের তালা খুলে শিক্ষকদের বের করে আনেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তালা খুলে দেওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জোর করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল হাশেম মৃধা অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

প্রধান শিক্ষক মোখলেসুর রহমান অরুণ বলেন, ঘটনার সময় তিনি স্কুলে গেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষকদের অবরুদ্ধ রেখে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়না ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের ফোন পেয়ে তিনি ওই স্কুলে যান। এ সময় ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের একটি দল আসে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তালা খুলে দিলে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা শিক্ষকরা বের হয়ে আসেন। 

বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, স্কুলে একটু ঝামেলা হয়েছিল পরে ঠিক হয়ে গেছে।

গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা। 

বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র র পদত য গ অবর দ ধ শ ক ষকর এ সময় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।

প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ