বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কোনো ব্যাংকের মূলধন কিংবা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনে একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ করা হবে। দরকার হলে নতুন মূলধন দেওয়া হবে। আমানতকারীদের ভয়ের কিছু নেই। যার যেখানে আমানত আছে, সেখানেই রাখুন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যাংক রক্ষার জন্য নয়; আমানতকারীর স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং ঋণের কিস্তি নিয়ে সমঝোতা বিষয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন গভর্নর। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে। যে ব্যাংকের জন্য যা করা প্রয়োজন, তা-ই করা হবে। সবই করা হবে আমানতকারীর স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে। তাদের ভয়ের কিছু নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের সঙ্গে আছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো সবল করা হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্র সাময়িকভাবে দুর্বল ব্যাংকের মালিকানা নেবে। ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে অবক্ষয়ের মূলে ছিল পরিচালনা পর্ষদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা এবং সুশাসন ফেরাতে বিগত সরকারের নিষ্ক্রিয়তা। সরকার পরিবর্তনের পর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব ব্যাংকে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। 

গভর্নর বলেন, নীতিমালা প্রয়োগ করার কারণে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর হয়তো সমস্যা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অনুরোধে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংক রেজল্যুশনে নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিনিয়োগকারী দেখবে।

বিনিয়োগকারীর স্বার্থ দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের না। তারা বুঝেশুনে বিনিয়োগ করবেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের চোখের সামনে ব্যাংকের পতন হয়েছে। যারা পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন, তারাই এ জন্য দায়ী। তাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত হলে হয়তো এস আলম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের জন্য এটি ভালো হবে না। অন্যদের জন্য এটি ভালো।

তিনি জানান, ব্যাংকের জন্য আগামীতে ঝুঁকিভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। আইএফআরএস আইন চালু করা হবে। পুরোপুরিভাবে এসব করতে পারলে দেশের ব্যাংক খাতের গুণগত মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ককটেল ফেটে কব্জি উড়ে গেল ডাকাতের, যন্ত্রণায় মৃত্যু

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাল্কহেডে ডাকাতি করতে গিয়ে হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। এছাড়া ডাকাত দলের হামলায় দুই গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ডাকাতদের নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাত সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের হামলা আহতরা হলেন, ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক বেপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও একই গ্রামের রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।

আরো পড়ুন:

ছেলের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে রাখা ছিল কয়েকটি বাল্কহেড। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে সঙ্ঘবদ্ধ একটি নৌ ডাকাত দল। তবে নদীতে জেলেরা থাকায় সুবিধা করতে না পেরে তারা ফিরে যায়।

পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে তারা আবার ফিরে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন তাদের বাধা প্রদান করে। আতঙ্ক তৈরি করতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে ২-৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতদল। এ সময় ট্রলার থেকে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই ডাকাত সদস্যের এক হাতের কব্জি উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা ৫-৬ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে, ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নদীর চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় থেকে আটক করে জনতা। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় একজন।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “এ রকম একটি খবর আমি পেয়েছি। ঘটনা নদীতে আর ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সীমানায় পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।”

বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তারা শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত মেঘনা নদীর গজারিয়া উপজেলার ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে যায়।”

তিনি বলেন, “স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে ডাকাতরা জনগণকে উদ্দেশ্য করে কয়েক কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে শুনেছি। ককটেল নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকেসহ তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “তাদের তিনজনের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি।”

বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন রোগী আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যার হাতে ককটেলে বিস্ফোরিত হয়েছিল, সে মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি।”

বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি। তাদের নাম পরিচয় জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/রতন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ