শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। এদিকে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কলা ভবনের মূল ফটক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফটকে তালা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

এদিন বেলা পৌনে ১১টায় কালো ব্যাজ পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, মহানগর, রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট এবং ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা। 

এ সময়  সাম্য হত্যার বিচার দাবিসহ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’ বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারী নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, সাম্যকে কীভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়, তা আমাদের প্রশ্ন।

তিনি বলেন, আমরা ভিসিকে কয়েকবার ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি‌। ক্যাম্পাসে ৫ আগস্টের আগের কয়েক বছরে একটিও খুনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৯ মাসে কীভাবে দুটি হত্যা হয়? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া প্রক্টরকে আজকের মধ্যে আর তার পদে দেখতে চাই না। সেই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি‌।

অবস্থান কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এখনও খুনি হাসিনার দোসররা অবস্থান করছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম, আপনারা ব্যবস্থা নেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি‌। তারই ফল আমার ভাই সাম্য হত্যা।

তিনি বলেন, যারা বিগত ৯ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস করতে পারেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ছাত্রদলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সাম্যর বন্ধুরা কলাভবনে তালা দেন। তারা সেখানে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষোভ কর্মসূচির পোস্টার লাগিয়ে দেন। এর কিছু সময়ের পর ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় আজ পূর্ণদিবসের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

এর আগে গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল স ম য হত য ছ ত রদল র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩–এর বিচারক আবু তাহের আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। রায়ের পর পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট মামলা করে দুদক।

এর আগে গত ২৫ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার পাঁচ তারকা একটি হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে আঁচ পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পাপিয়ার বুকিং দেওয়া বিলাসবহুল স্যুট ও ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা ও এটিএম কার্ড জব্দ করেছিল র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর মালিকানায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডে ২টি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা দামের ২টি প্লট, তেজগাঁওয়ে এফডিসি ফটকের কাছে গাড়ির শোরুমে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ, নরসিংদী জেলায় কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন নামের প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করে র‍্যাব। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে পাপিয়া ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ