ঢাবিতে হচ্ছে না ক্লাস-পরীক্ষা, ছাত্রদলের বিক্ষোভ
Published: 15th, May 2025 GMT
শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। এদিকে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কলা ভবনের মূল ফটক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফটকে তালা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিন বেলা পৌনে ১১টায় কালো ব্যাজ পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, মহানগর, রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট এবং ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা।
এ সময় সাম্য হত্যার বিচার দাবিসহ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’ বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারী নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, সাম্যকে কীভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়, তা আমাদের প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমরা ভিসিকে কয়েকবার ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। ক্যাম্পাসে ৫ আগস্টের আগের কয়েক বছরে একটিও খুনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৯ মাসে কীভাবে দুটি হত্যা হয়? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া প্রক্টরকে আজকের মধ্যে আর তার পদে দেখতে চাই না। সেই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।
অবস্থান কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এখনও খুনি হাসিনার দোসররা অবস্থান করছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম, আপনারা ব্যবস্থা নেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারই ফল আমার ভাই সাম্য হত্যা।
তিনি বলেন, যারা বিগত ৯ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস করতে পারেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ছাত্রদলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সাম্যর বন্ধুরা কলাভবনে তালা দেন। তারা সেখানে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষোভ কর্মসূচির পোস্টার লাগিয়ে দেন। এর কিছু সময়ের পর ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় আজ পূর্ণদিবসের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।
এর আগে গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল স ম য হত য ছ ত রদল র পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।
প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।