১৯৭১ কে ২০২৪–এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা প্রত্যাখ্যান গণতন্ত্র মঞ্চের
Published: 29th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের নেতারা বলেছেন, কেউ যেন বিভাজন তৈরি করে বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় বাধা দিতে না পারে, সে জন্য সব পক্ষকে একটা জায়গায় আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এ কথাগুলো বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাস যেদিকে গেছে, জামায়াত তার বিপরীত দিকে গেছে। জনগণ যে পক্ষে গেছে, তারা তার বিপক্ষে গেছে। এটা প্রমাণিত। এখন সেই অবস্থানের জন্য যদি তারা জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চায়, তাহলে সেটা যদি, কিন্তু ছাড়াই করা দরকার। এখানে যদি, কিন্তু বা কোনো অস্পষ্টতা রাখলে সেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করবে বলে মনে করি না।’
গণতন্ত্র মঞ্চের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এখন যে বিভাজনের খেলা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, নতুন করে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো আবারও শঙ্কার মধ্যে ফেলছে যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মতো আবার কোনো ফ্যাসিবাদী ধারা তৈরি হতে যাচ্ছে কি না। একে প্রতিরোধ করার জন্য মনোযোগী হতে হবে।’
১৯৭১ ও ২০২৪–কে পরস্পরের মুখোমুখি করে দাঁড় করানোর যে চেষ্টা বিভিন্ন পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, একে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সে আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেই এখানে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থান হলো ১৯৭১ সালেরই ধারাবাহিকতা। এই দুইয়ের মাঝে কোনো বিরোধ নেই।
২০২২ সালের ৮ আগস্ট সাতটি দলের সমন্বয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। পরে একটি দল বেরিয়ে এখন ছয়টি দলের সমন্বয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দলগুলো হলো আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলন, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভাসানী অনুসারী পরিষদ (বর্তমান নাম ভাসানী জনশক্তি পার্টি) ও হাসনাত কাইয়ূমের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনগণ র
এছাড়াও পড়ুন:
তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের দিনমজুর পারভিন আক্তার (৪৭)। তিনি এই বাজারে আলুর একটি আড়তে কাজ করেন। বসে বসে আলু বাছাই করা তাঁর কাজ। প্রতিদিন পান ৬০০ টাকা। সংসারে অসুস্থ স্বামী। তবে তিনি মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। স্বামীর আয় নিয়মিত নয়। তাঁদের মেয়ে ও এক ছেলে সঙ্গে থাকে। মেয়েটির আবার দুটি সন্তান আছে। পুরো পরিবারটি পারভিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
গত এপ্রিল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিজে অন্তত দুই বার এবং মেয়ে ও তাঁর ছেলেটি তিন বার করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পারভিন কাজে গেলে টাকা পান, না গেলে নেই। এভাবে অসুখের কারণে এ বছর ১১ দিন কাজে যেতে পারেননি, স্মরণ করে বলেন পারভিন। কারওয়ানবাজারে কাজের যে পরিবেশ, সেখানে গরমে ঘামতে হয়। কয়েক বছর ধরে গরমটা অসহনীয় বলে মনে হয় তাঁর কাছে।
পারভিন বলছিলেন, ‘ঘাম শরীরে বইসা অসুখ বাধায়। গরম এত বাড়ছে যে কওনের কথা নাই।’
পারভিনের মতো এমন অসংখ্য মানুষের এভাবেই গরমের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। এই তো গত বছরেই (২০২৪) ২১ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম ‘অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ।’ এতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সঙ্গে আছে ২০২৪ সালে করা একটি বড় জরিপ, যেখানে দুই ধাপে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়।
১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১°ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ সময় গরমের অনুভূতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৫°ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সময়ে ঢাকার গরম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার গরম জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘ কাশি, শ্বাসকষ্ট আর প্রচণ্ড অবসাদ—এসব রোগ বেড়েছে।
অধ্যাপক আবদুস সালাম তাঁর একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দূষণের সম্পর্ক আছে। তিনি বলছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কয়েকটি ক্ষতিকর গ্যাস। এর মধ্যে আছে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই–অক্সাইড ও মিথেন।গরমের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ২০২৪ সালে গরমের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কর্মদিবস (আড়াই কোটি দিন) নষ্ট হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার এবং প্রতিবেদনের সহলেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে সরাসরি উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও ঘটছে। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর বাস্তব ঝুঁকির মুখে।’
আরও পড়ুনতাপমাত্রা এত বাড়ছে কেন?২১ এপ্রিল ২০২৪প্রখর রোদে ছাতা মাথায় মাঠের মধ্যে ধান শুকাচ্ছেন এক গৃহবধূ। কাইমউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, নর্থ চ্যানেল, ফরিদপুর