ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধার নদী বেষ্টিত কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। আতঙ্কে ঘরসহ গৃহপালিত পশু সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। হুমকির মুখে পড়েছে স্কুল, মসজিদ-মাদরাসাসহ ফসলি জমি।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা একটি ইউনিয়ন উড়িয়া। এখানকার শতাধিক পরিবারের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। প্রশাসন থেকে ভাঙন রোধে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে এই ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি, কাবিলপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম।

আরো পড়ুন:

‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’

ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ২৩ কিলোমিটারে গাড়ির চাপ

কাটিয়ারভিটা গ্রামের বৃদ্ধা জমিলা বেগম বলেন, “প্রত্যেক বছর বানের পানি আসে আর হামরা ঘরবাড়ি নিয়্যা দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। যতগুল্যা আবাদি জমি ছিল, ভাঙতে ভাঙতে সগি (সব) শ্যাষ। এখন মানষের জাগাত যায়া ঘর তুলি থাকি।” 

উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, “গত বছরও ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও সেই পুরোনো আতঙ্ক ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে কাটিয়ারভিটা এলাকার দড়িয়ার পাড়ায় প্রায় ১৫০ ফুট নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করেছে। নদীর তীব্র স্রোতে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দড়িয়ার ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসত বাড়ি, একটি বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘বারবার নদী ভাঙনে এলাকার অনেকের ঘর ও ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এখনো কাজ শুরু করেনি।”

কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা মজিবুর মুন্সি বলেন, “বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়টি এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

একই ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা নদী পাড়ের মানুষ খুব অসহায়। নদী পাড়ে একটা দোকান দিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই ভাঙন শুরু হওয়ায় দোকানটি সরিয়ে নিয়েছি।”

উড়িয়া ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহসিন মাস্টার বলেন, “প্রতিবছর নদী ভাঙনে ভিটে হারানোর আতঙ্কে পড়েন ফুলছড়ি উপজেলার হাজার হাজার ব্রক্ষপুত্র তীরবর্তী মানুষ। স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়ে একসময় হয়তো অনেক গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

হাফিজুল হক বলেন, “ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কাটিয়ারভিটাসহ কয়েকটি গ্রাম ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে ডাম্পিং শুরু করা হবে। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কয়েকদিন আগে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেও, আবার তা কমতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি নিয়ে আপাতত চিন্তার কিছু নেই।” 

ঢাকা/মাসুম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ উপজ ল র নদ র প এল ক য় আতঙ ক সরক র ফ লছড়

এছাড়াও পড়ুন:

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার অভিযোগ গঠন ও সূচনা বক্তব্যের দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

পরে বিকেলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদের মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হাসিবুরসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধ হওয়া মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে ২৭ ও ২৮ আগস্ট।

এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

বাকি ২৪ জন আসামি পলাতক। তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ, গণিত বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেন, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সেকশন অফিসার মো. মনিরুজ্জামান পলাশ, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, সাবেক পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রবিউল ইসলাম, সাবেক এসআই (নিরস্ত্র) বিভূতিভূষণ রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান, সহসভাপতি ফজলে রাব্বি ও আখতার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এমএলএসএস মোহাম্মদ নুরুন্নবী মণ্ডল ও আমির হোসেন, নিরাপত্তা প্রহরী নুর আলম মিয়া ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মাহাবুবার রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ