ভাঙন আতঙ্কে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা
Published: 21st, June 2025 GMT
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধার নদী বেষ্টিত কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। আতঙ্কে ঘরসহ গৃহপালিত পশু সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। হুমকির মুখে পড়েছে স্কুল, মসজিদ-মাদরাসাসহ ফসলি জমি।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা একটি ইউনিয়ন উড়িয়া। এখানকার শতাধিক পরিবারের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। প্রশাসন থেকে ভাঙন রোধে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে এই ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি, কাবিলপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম।
আরো পড়ুন:
‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ২৩ কিলোমিটারে গাড়ির চাপ
কাটিয়ারভিটা গ্রামের বৃদ্ধা জমিলা বেগম বলেন, “প্রত্যেক বছর বানের পানি আসে আর হামরা ঘরবাড়ি নিয়্যা দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। যতগুল্যা আবাদি জমি ছিল, ভাঙতে ভাঙতে সগি (সব) শ্যাষ। এখন মানষের জাগাত যায়া ঘর তুলি থাকি।”
উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, “গত বছরও ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও সেই পুরোনো আতঙ্ক ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে কাটিয়ারভিটা এলাকার দড়িয়ার পাড়ায় প্রায় ১৫০ ফুট নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করেছে। নদীর তীব্র স্রোতে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দড়িয়ার ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসত বাড়ি, একটি বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘বারবার নদী ভাঙনে এলাকার অনেকের ঘর ও ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এখনো কাজ শুরু করেনি।”
কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা মজিবুর মুন্সি বলেন, “বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়টি এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
একই ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা নদী পাড়ের মানুষ খুব অসহায়। নদী পাড়ে একটা দোকান দিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই ভাঙন শুরু হওয়ায় দোকানটি সরিয়ে নিয়েছি।”
উড়িয়া ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহসিন মাস্টার বলেন, “প্রতিবছর নদী ভাঙনে ভিটে হারানোর আতঙ্কে পড়েন ফুলছড়ি উপজেলার হাজার হাজার ব্রক্ষপুত্র তীরবর্তী মানুষ। স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়ে একসময় হয়তো অনেক গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
তিনি আরো বলেন, “গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কয়েকদিন আগে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেও, আবার তা কমতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি নিয়ে আপাতত চিন্তার কিছু নেই।”
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ উপজ ল র নদ র প এল ক য় আতঙ ক সরক র ফ লছড়
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।
প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।