ফেনীতে পানি কমছে, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
Published: 21st, June 2025 GMT
ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শনিবার সকাল থেকে ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এতে নদী তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। তবে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
এদিকে ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শনিবার সকাল থেকে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া বণিকপাড়ায় ২০ মিটার ভাঙা অংশে সংস্কার করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পানি কমে যাওয়ায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ঘরে কাদা থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে দু-তিন দিন লাগবে। বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে হতদরিদ্র, দিনমজুর ও প্রান্তিক কৃষকের। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। চব্বিশের বন্যার পর আবারও বাঁধ ভাঙায় পাউবোর দায়সারা কাজকে দুষছেন স্থানীয়রা।
উত্তর বরইয়া গ্রামের মো.
নাসিমা আক্তার বলেন, হঠাৎ পানি ঢুকে সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র সরাব, না হাঁস-মুরগি বাঁচাব, না বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে আশ্রয় নেব, এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি পার করেছি। এখন আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় লাগে।
পাউবো ফেনীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, সিলোনিয়া নদীর বাঁধের যে অংশে ভেঙেছে, সেটি সংস্কারে নদীর পানি কমার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। গোসাইপুর অংশে ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করতে কয়েক দিন লাগবে।
পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ফুলগাজীর উত্তর বরইয়া এলাকায় মুহুরী নদীর ২০ মিটার অংশ মেরামতে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
পাউবো পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদী পানির চাপ বাঁধ নিতে পারছে না। তাই বারবার ভেঙে যাচ্ছে। বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণ করলে সমস্যার সমাধান হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র মত
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”
আরো পড়ুন:
হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান
দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে
বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ