বিদ্যালয়ের জমির সীমানা নির্ধারণে গেলে সার্ভেয়ারকে লাঞ্ছিত করেন দখলদার ও তাঁর লোকজন। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর শুরু করেন। ভাইকে মারধর করতে দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত শুক্রবার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত রুহুল আমিন তিয়শ্রী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

জানা গেছে, বিএনপি নেতা রুহুল আমিনের বড় ভাই হাফিজুর রহমান শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের জমিদাতাও তাঁর বাবা হাজি শামছুল হক। বিদ্যালয়ের পাশের জমির মালিক স্থানীয় গোলাপ মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া আক্তার। আম্বিয়া বিদ্যালয়ের জমি দখলে নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। পরে বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারের জন্য ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান। বিদ্যালয়ের জমি সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে সীমানা নির্ধারণের জন্যও আবেদন করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সার্ভেয়ার নাসির উদ্দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে জমি মাপা শুরু করলে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন আম্বিয়া ও তাঁর দলবল। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমানকেও মারধর শুরু করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন। তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নেওয়া হলে শুক্রবার রাত ১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির সামনে বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আম্বিয়াসহ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। এ ঘটনা দেখে আমার ছোট ভাই সহ্য করতে পারেনি। তাৎক্ষণিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আকন্দের ভাষ্য, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত তারা। এ নিয়ে জেলা বিএনপিও শোকবার্তা দিয়েছে।

সার্ভেয়ারকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় মামলা
শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন সার্ভেয়ার নাসির উদ্দিন। গত শুক্রবার রাতে আটজনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শ্রীধরপুর গ্রামের গোলাপ, আম্বিয়া, ফুলেছা ও বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মদন থানার পরিদর্শক (ওসি) তদন্ত দেবাংশু জানান, সার্ভেয়ারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শনিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত রক ন ব এনপ হ ফ জ র রহম ন র হ ল আম ন ব এনপ র স শ র ধরপ র শ ক রব র আম ব য় ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো

ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

কীভাবে চিকিৎসা নেবেন

ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।

যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫

যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।

এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:

১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।

৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।

প্রতিবেশীদের ভূমিকা

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।

 সূত্র: মুসলিম ডটএসজি

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ