এই গল্প গত বছরের বর্ষাকালের। প্রবল বৃষ্টিতে চারদিকে কত পানি জমেছিল! অথচ পান করার উপযোগী পানি ছিল না। মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন ভেবেছিলাম, ফেনীর আকাশে নিশ্চয়ই আমাদের মতো বাকিদেরও পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। প্লাবনে ধেয়ে আসা পানি বিষাক্তই হবে। শরীরে লাগতেই কেমন বিষক্রিয়া দেখা দেয়! এদিকে বোতলে মজুত থাকা পানিও শেষ হচ্ছে– যা আগের রাতে দোতলায় উঠে আসার সময় তোলা হয়েছিল।
বাসায় কিছু বোতলে পানি ভরে রাখা হতো, যাতে সহজে পান করা যায়। সে রাতে হু-হু করে বন্যার পানি বেড়ে ছিল। কিছুই ওপরে তোলার সময় ছিল না। একতলায় কোমরসমান পানিতে কোনোমতে খুঁজে খুঁজে কয়েকটি বোতল তোলা হলো। পরিবার আর আশ্রয় নেওয়া মানুষের তুলনায় তা তুচ্ছ ছিল!
শুধু গলাটা ভেজাতেই পানি শেষ হওয়ার আতঙ্ক! প্রাণভরে পান করার জো নেই। কেউ কেউ আবার বোতলের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করছে না পাছে তা খালি হয়ে যায়। এমন আতঙ্কের রাত যখন শেষের দিকে। তখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ভোরের আলো ফোটেনি। আবছা আলোতেই নিচ থেকে তুলে আনা কিছু পাত্র জড়ো করলাম। দোতলার রুমের একপাশে ছাদে কিছুটা জায়গা খালি ছিল। সেখানে উন্মুক্ত আকাশের নিচে পাত্রগুলো সাজিয়ে দিলাম। এই মুহূর্তে ভারী বৃষ্টির কামনা আত্মহত্যা কামনা করার মতোই! কারণ রাতের মধ্যে একতলা প্রায় ডুবে গেছে। এভাবে ভারী বৃষ্টিতে দোতলায় পানি উঠে গেলে যাব কোথায়?
তবুও আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি কামনা করলাম। অন্তত পাত্রগুলো ভরে গেলে বোতলগুলো পূর্ণ করতে পারব। সবাই তৃষ্ণা মেটাতে পারব। সঙ্গে থাকা মা-বাবা আর পরিবারের শিশুসন্তানদের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছিল। আমার বাসনা পূর্ণ হলো। কিছুক্ষণ পরেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। পাত্রগুলো ধীরে ধীরে পূর্ণ হতে লাগল। পাত্রে যত পানি দেহে তত প্রাণ সঞ্চার হচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য পাত্রগুলোকেই আপন মনে হলো। এভাবেই দু’দিন কেটেছে। এখন বন্যা নেই। পান করার পানিরও অভাব নেই। এই পাত্রগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পান করেছিলাম, তাই সেগুলোর দিকে নজর চলে যায়। মনে হয় বৃষ্টির দিনের সঙ্গ দেওয়া সঙ্গী কত আপনজন হয়ে আমার সঙ্গে আছে! বর্ষা আবারও এসেছে। আমাদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে! v
সভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ছাগলনাইয়া (ফেনী)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ প ত রগ ল র জন য প ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
সেই বর্ষণমুখর বিষণ্ন দিনে!
এই গল্প গত বছরের বর্ষাকালের। প্রবল বৃষ্টিতে চারদিকে কত পানি জমেছিল! অথচ পান করার উপযোগী পানি ছিল না। মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন ভেবেছিলাম, ফেনীর আকাশে নিশ্চয়ই আমাদের মতো বাকিদেরও পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। প্লাবনে ধেয়ে আসা পানি বিষাক্তই হবে। শরীরে লাগতেই কেমন বিষক্রিয়া দেখা দেয়! এদিকে বোতলে মজুত থাকা পানিও শেষ হচ্ছে– যা আগের রাতে দোতলায় উঠে আসার সময় তোলা হয়েছিল।
বাসায় কিছু বোতলে পানি ভরে রাখা হতো, যাতে সহজে পান করা যায়। সে রাতে হু-হু করে বন্যার পানি বেড়ে ছিল। কিছুই ওপরে তোলার সময় ছিল না। একতলায় কোমরসমান পানিতে কোনোমতে খুঁজে খুঁজে কয়েকটি বোতল তোলা হলো। পরিবার আর আশ্রয় নেওয়া মানুষের তুলনায় তা তুচ্ছ ছিল!
শুধু গলাটা ভেজাতেই পানি শেষ হওয়ার আতঙ্ক! প্রাণভরে পান করার জো নেই। কেউ কেউ আবার বোতলের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করছে না পাছে তা খালি হয়ে যায়। এমন আতঙ্কের রাত যখন শেষের দিকে। তখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ভোরের আলো ফোটেনি। আবছা আলোতেই নিচ থেকে তুলে আনা কিছু পাত্র জড়ো করলাম। দোতলার রুমের একপাশে ছাদে কিছুটা জায়গা খালি ছিল। সেখানে উন্মুক্ত আকাশের নিচে পাত্রগুলো সাজিয়ে দিলাম। এই মুহূর্তে ভারী বৃষ্টির কামনা আত্মহত্যা কামনা করার মতোই! কারণ রাতের মধ্যে একতলা প্রায় ডুবে গেছে। এভাবে ভারী বৃষ্টিতে দোতলায় পানি উঠে গেলে যাব কোথায়?
তবুও আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি কামনা করলাম। অন্তত পাত্রগুলো ভরে গেলে বোতলগুলো পূর্ণ করতে পারব। সবাই তৃষ্ণা মেটাতে পারব। সঙ্গে থাকা মা-বাবা আর পরিবারের শিশুসন্তানদের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছিল। আমার বাসনা পূর্ণ হলো। কিছুক্ষণ পরেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। পাত্রগুলো ধীরে ধীরে পূর্ণ হতে লাগল। পাত্রে যত পানি দেহে তত প্রাণ সঞ্চার হচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য পাত্রগুলোকেই আপন মনে হলো। এভাবেই দু’দিন কেটেছে। এখন বন্যা নেই। পান করার পানিরও অভাব নেই। এই পাত্রগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পান করেছিলাম, তাই সেগুলোর দিকে নজর চলে যায়। মনে হয় বৃষ্টির দিনের সঙ্গ দেওয়া সঙ্গী কত আপনজন হয়ে আমার সঙ্গে আছে! বর্ষা আবারও এসেছে। আমাদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে! v
সভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ছাগলনাইয়া (ফেনী)