বর্ষার শুরুতেই যমুনায় ভাঙ্গন, দিশেহারা পাড়বাসী
Published: 26th, June 2025 GMT
এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীতে। গত প্রায় এক মাস ধরে এই ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০টি বাড়িঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, বিদ্যালয়সহ শতাধিক পরিবার।
পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চর বক্তারপুর গ্রামে কৃষক হানিফ শেখের স্ত্রী আক্তার বানু। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে যমুনার পাড়ে বসবাস করেন প্রায় দুই যুগ। বর্ষা মৌসুম এলেই তাঁর কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। সম্প্রতি সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড়ে বসে তিনি ভাবছিলেন কীভাবে ভাঙ্গন থেকে বাঁচবেন।
আলাপকালে আক্তার বানু জানান, গত তিনবছরে তিনবার তাদের ঘর হারিয়েছে যমুনার গর্ভে। এবারও একই চিন্তায় দিশেহারা তিনি। গেলো কোরবানীর ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ভাঙ্গন আতঙ্ক। শুধু ভয়ে থাকেন কখন না জানি আবার ভাঙ্গন শুরু হয় আর ঘর সরানোর জন্য চিৎকার করতে হয়।
শুধু আক্তার বানু-ই নয়, তার মতো একই কান্না নদীপাড়ের অন্যান্য মানুষগুলোর। বক্তারপুর, চর বক্তারপুর, চর বুড়ামারা, সিংহাসন, আগবাকশো গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দিন কাটছে ভাঙ্গন আতঙ্কে।
স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে গত একমাসে অন্তত ২০টি বাড়িঘর ও অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক পরিবার।
চর বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা বেল্লাল শেখ, সেকেন বিশ্বাস জানালেন, গেলো কোরবানীর ঈদের দিন নদীতে ভেঙে যায় কয়েকটি বাড়ি। বাধ্য হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কেউবা ঘর ভেঙে রেখেছেন, কিন্তু নতুন করে ঘর তৈরী করতে পারছেন না অর্থাভাবে। বর্ষা মৌসুম আসলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।
শাজাহান আলী, নাদের শেখ, মামুন শেখ বলেন, এই বয়সে তারা অন্তত ছয় বার এই নদী ভাঙ্গন দেখেছেন। বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন তারা, আগে নদীর প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বসতবাড়ি ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে সেখান সরে এসেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি, ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মানুষ বাঁচবে। তবে এবার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার।
ভুক্তভোগী রওশন বিশ্বাসের স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন, ‘‘শিশু সন্তান আর গাবাদি পশু নিয়ে নির্ঘূম রাত কাটাতে হয়। কতবার ঘর ভাঙবে আর কতবার করে সরিয়ে নেবো। গত কোরবানীর ঈদের দিনও ভাঙ্গন হয়েছে। এলাকার লোকজনকে ডেকে ঘর দ্রুত সরিয়ে নিতে হয়। ঈদের দিন আমাদের রান্নাবান্না খাওয়া কিছুই হয়নি। এভাবে আর কতদিন?’’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হায়দার আলী বলেন, ‘‘কিছু ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের সিম দিতে চায় সরকার
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৈধভাবে সিম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গাদের সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।
মিয়ানমারে অত্যাচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে অবৈধভাবে দুই দেশেরই সিম ব্যবহার হচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে এবং মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার চিন্তা করে তৎকালীন সরকার। সে সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক সিম ব্যবহারের আলোচনা হয়েছিল। যদিও পরে বিষয়টি আর এগোয়নি।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চার মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্রমতে, ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা। ওই তারিখের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছু সিম দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
যেভাবে সিম দেওয়ার ভাবনাসিম বিক্রির বিদম্যান নীতি অনুযায়ী, ব্যক্তিকে শনাক্তকারী পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন হয়। যেহেতু রোহিঙ্গাদের সে ধরনের পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের সিম দেওয়ার জন্য বিকল্প উপায় ভাবা হচ্ছে। অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনায় বলা হয়, মোবাইল অপারেটররা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভিন্ন নম্বর সিরিজ রাখবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) কাছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে। যেটাকে সাধারণত ‘প্রোগ্রেস আইডি’ বলা হয়। সে আইডির বিপরীতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা সিম পাবেন। ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিমগুলো পাবে।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এই ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। কিন্তু এই ডেটাবেজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। সূত্র বলছে, যেহেতু সরকারের লক্ষ্য চলতি মাস, তাই সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫ আগস্টের মধ্যে ১০ হাজার নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ অফার করবে। এই প্যাকেজের খরচ ও সিমের দাম দেবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম দেওয়ার পর বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব অবৈধভাবে সিম চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার।
তবে এসবই আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের শনাক্তকরণ একটি বিষয়। এটা নিশ্চিত না হলে সিম সেখানে দেওয়া যাবে না। সরকারের দিক থেকে এই পরিচয় নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে।
অপারেটররা যা বলছেরোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম বিক্রয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা বহু মানুষকে বৈধ উপায়ে সিম ক্রয়ের সুযোগ করে দেবে।’
তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সিম কর বাবদ অপারেটররা ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের যে বিনিয়োগ এ খাতে করেছে, সেটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য সিমের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
রোহিঙ্গা শিবিরকে একটি বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, এখানে মিয়ানমারের নেটওয়ার্কও সক্রিয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে বাইরের দেশের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে আগেরগুলো জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।