সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ব্যাটারিচালিত ও অটোরিকশার দৌরাত্ম্যের সহিত সড়ক দুর্ঘটনাও ক্রমবর্ধমান। এইবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হইয়া যাহারা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা লইয়াছেন, সমকালের অনুসন্ধানে বাহির হইয়া আসিয়াছে, উহাদের প্রায় ৩৭ শতাংশই এই পরবিহনের যাত্রী কিংবা চালক। বলা বাহুল্য, দুর্ঘটনাস্থলে প্রাণহানির সংখ্যাও নেহাত নগণ্য নহে। পঙ্গু হাসপাতালের পরিসংখ্যানে স্বাভাবিক কারণেই তাহারা অন্তর্ভুক্তির বাহিরে। স্মর্তব্য, গত নভেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছাত্রীর প্রাণহানির পর অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা এই রিকশাকে নিরাপদ করিয়া তুলিবার তাগিদ দিয়াছিলাম। এই পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, উহা প্রমাণ করিতে অবশ্য পরিসংখ্যান জরুরি নহে; প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর হইতেই তাহা উপলব্ধ।
ব্যাটারিচালিত ও অটোরিকশার সংখ্যা লইয়া সুনির্দিষ্ট জরিপ না হইলেও, ধারণা করা হয়, সমগ্র দেশে প্রায় অর্ধকোটি ব্যাটারিচালিত রিকশা বায়ুবেগে ধাবমান। রাজধানীতেও কয়েক লক্ষ চালক এই ধরনের রিকশা চালাইয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেছেন। যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা চিন্তা করিয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে সরকার ইতোপূর্বে উদ্যোগ গ্রহণ করিলেও উহা সফলতার মুখ দর্শন করে নাই। এমনকি গত নভেম্বরে আদালতও উহার বিপক্ষে রায় দিয়াছিলেন। বাস্তবতা হইল, এই ধরনের রিকশার সংখ্যাধিক্য, চালকদের প্রতিবাদ এবং উহাদের জীবিকা বিবেচনায় সরকারের পক্ষে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা কঠিন। তজ্জন্য মন্দের ভালো ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা এবং নিরাপদ করিবার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আমরা দেখিয়াছি, এমনকি রাজধানীসহ অনেক জায়গায় পদচালিত রিকশা যেন অপাঙ্ক্তেয়। এক শ্রেণির যাত্রীও উক্ত বাহনকে পরিহার করেন। অথচ একসময় পদচালিত রিকশাই ছিল একমাত্র অবলম্বন। তজ্জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে যাত্রীদেরও দায়িত্ব রহিয়াছে। তবে প্রধান দায়িত্ব প্রশাসনের। তাহাদের উচিত হইবে এই রিকশার অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপাদনে লাগাম টানিয়া ধরা। পাশাপাশি চলাচলেও বিধিনিষেধ জারি করা যাইতে পারে, যথায় রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে ভিআইপি সড়কসমূহে উহাদের চলাচল নিষিদ্ধ করিয়াছে।
আমরা মনে করি, যেহেতু ব্যাটারিচালিত রিকশা গঠনগত কারণে দুর্ঘটনাপ্রবণ, তজ্জন্য উহাতেই সর্বাগ্রে নজর দিতে হইবে। ইহাও সত্য, ইতোমধ্যে সড়কে মিশুক অটোরিকশা রহিয়াছে, যেইগুলি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলিয়া প্রতীয়মান। ইহাও বলা জরুরি, পরিবহন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকদের দায়িত্বহীনতা। পূর্বে অনেক চালক যাহারা পদচালিত রিকশায় জীবিকা নির্বাহ করিত, তাহারা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশার উপর আস্থা রাখিতেছেন। চালকদের সচেতনতা ও সতর্কতার পাশাপাশি উহাদের স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। এই ক্ষেত্রে টেকসই সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা পালন করিতে পারে।
দেশে স্বভাবতই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণহীন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনায় সড়কে হতাহতের যেই চিত্র উঠিয়া আসে, তাহা আমাদের উদ্বিগ্ন করিতে যথেষ্ট। সেই বাস্তবতায় অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাসৃষ্ট দুর্ঘটনা যখন নূতন করিয়া সম্মুখে আসে তখন উহা নূতন করিয়া মাথাব্যথার কারণ হইয়া উঠিয়াছে, যাহা আর উপেক্ষা করা চলে না। দেশে সামগ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ পরিকল্পনায় এই ধরনের রিকশার বিষয় বিবেচনায় লইতেই হইবে। পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপই সড়ক ও জীবনকে নিরাপদ করিতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন র পদ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান
‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।
‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’
ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।
জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’
করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।
তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’
সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’