ভুয়া মামলার হয়রানি রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধি সংযোজন হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
Published: 29th, June 2025 GMT
ভুয়া মামলা দায়ের এবং মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করার চেষ্টা রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধি সংযোজিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। খবর বাসসের
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অ্যাডভাইজার কাউন্সিলের আজকের বৈঠকের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন। আমাদের সরকারের আমলে কিছু জিনিস নিয়ে আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত, এবং এ বিষয়েগুলো নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করি। তেমনই একটি বিষয় হচ্ছে ভুয়া মামলা, এবং আরেকটি হচ্ছে মামলায় অকারণে নির্দোষ ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করে মামলা বাণিজ্য করা। এ বিষয়টি থেকে পরিত্রাণ পেতে এটি নিয়ে আমরা ভেবে দেখেছি। বাংলাদেশের ক্রিমিনাল ল' এক্সপার্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা, বৈঠক করে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির একটি বিধানে বড় একটি সংশোধনী এনেছি।’
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে যখন একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় তখন ইনভেস্টিগেশন করতে তিন-চার বছর লাগে, এখানে শত শত আসামি থাকেন, কিছু ক্ষেত্রে এখানে মামলা বাণিজ্যও হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক)/১৭৩(অ) এই নতুন বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনো জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে ইনভেস্টিগেশন অফিসার/তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক বা প্রিলিমিনারি ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই, তাদের প্রি ট্রায়াল বা বিচার পূর্ববর্তী স্টেজেই মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন।’
ড আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আশা করছি এটি কার্যকর হলে পুলিশ ও আদালত প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে এসমস্ত মামলায় গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এর ফলে নিরপরাধ ব্যক্তিরা ভুয়া মামলা থেকে রেহাই পাবেন। এর ফলে তদন্ত কিন্তু থেমে যাবে না, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলমান থাকবে।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত একটি ধর্ষণের বিষয়ে তিনি বরেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, তাতে বাংলাদেশের যে কোনো সাধারণ নাগরিকের মত আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামির সঙ্গে যারা এই ছবি বা ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও অপরাধমূলক কাজ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ধর্ষণ বিষয়ক আইনে সময়োপোযোগী সংশোধন এনেছি, সেটার প্রমাণ আপনারা মাগুরার ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে দেখেছেন। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার করব, সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের পরিবারের সদস্যদের হিসাব তলব
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক ৩ গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, সাবেক বিএফআইইউ প্রধান এবং তাদের পরিবারের সদস্য তথা স্ত্রী-সন্তান-জামাতা-পূত্রবধূর হিসাবও তলব করেছে। এসব ব্যক্তির হিসাবের যাবতীয় তথ্য জানাতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাদের হিসাব তলব সংক্রান্ত চিঠি বুধবার ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে বিএফআইইউ।
আরো পড়ুন:
সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব
১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এল ১০৫ কোটি ডলার
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করা এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতের বিভিন্ন অনিয়ম, ব্যাংক দখলের মাধ্যমে অর্থ লোপাট এবং অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়ে ঋণ বিতরণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। হিসাবের যাবতীয় তথ্য পাওয়ার পর এসব ব্যক্তির হিসাবে অস্বাভাবিক কোন লেনদেন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
যাদের হিসাব তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির এবং আব্দুর রউফ তালুকদার। অভিযোগ অনুযায়ী, ফজলে কবিরের মেয়াদে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দখল নিয়ে লুটপাট শুরু হয় এবং তা অব্যাহত থাকে আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়েও। বিশেষ করে রউফ তালুকদারের সময় টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের সুযোগ তৈরি হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
হিসাব তলব করা সাবেক ডেপুটি গভর্নরদের মধ্যে রয়েছেন এস কে সুর চৌধুরী, এস এম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান এবং আবু ফরাহ মো. নাছের। এর মধ্যে এস কে সুর চৌধুরী বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি। একই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসও।
অন্যদিকে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সরকারি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর আবু ফরাহ মো. নাছেরের বিরুদ্ধে নীতিমালা শিথিল করে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিএফআইইউর সাবেক প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান এবং মো. মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব, লেনদেন বিবরণী, হিসাব খোলার ফরম এবং পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে চাওয়া হয়েছে। কোনো হিসাব বর্তমানে বন্ধ থাকলেও, সেটির তথ্য আলাদাভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ