গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে তারকাবহুল সিনেমা ‘উৎসব’। সম্পর্ক, পরিবার ও সামাজিক বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে এটি নির্মাণ করেছেন তানিম নূর। চলচ্চিত্রটি দর্শকমহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এখানকার দর্শকহৃদয় জয় করে বিদেশেও রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। এর নির্মাণ, সাফল্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন এমদাদুল হক মিলটন
‘একসময় মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখতে যেত হলে। এমনকি তাদের বাজারের তালিকায় থাকত সিনেমার টিকিটের কথা। ওই সময়ের পারিবারিক গল্পের সিনেমাগুলো ছিল বেশ উপভোগ্য। মাঝে এ চিরচেনা দৃশ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। উৎসব দেখে মনে হলো, আবার ফিরে এসেছে সেইসব দিন’– রাজধানীর বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমা দেখতে আসা শফিকুল করিমের মন্তব্য ছিল এমনই। শুধু শফিকুল করিম নন, এ ধরনের মন্তব্য করেছেন অনেকেই। কেউ বলেছেন, বাঁকবদলের নাম ‘উৎসব’। সিনেমা হলের দর্শক ঢল সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। অনেক সিনেমা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁকবদল হয়েছে। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো উৎসবের নাম। শুধু মাল্টিপ্লেক্স নয়, সিঙ্গেল স্ক্রিনেও ভালো চলছে উৎসব।
চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারোল’ অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছেন তানিম নূর। ১৮২ বছর আগের গল্প এটি। ভিন্ন নামে বহুবার এসেছে চলচ্চিত্রে। সব জনরায়েই এ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। এবার যুক্ত হয়েছে বাংলা ভার্সনেও। পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ– এমন ট্যাগলাইন নিয়ে গত ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘উৎসব’। মুক্তির পর দেখা গেল, কথাটা পুরোপুরি সত্য। ট্যাগলাইনের কথায় কনটেন্টের কাজে মিল ছিল। এ কারণে এবারের ঈদে ‘উৎসব’ হয়ে উঠেছে পারিবারিক দর্শকের প্রথম পছন্দের সিনেমা। দিন যত যাচ্ছে, সিনেমাটি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকেরা ফিরে যাচ্ছেন তাদের সোনালি অতীতে।
প্রেক্ষাগৃহ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবখানেই পাওয়া যাচ্ছে ইতিবাচক মন্তব্য। ঈদের ৬ দিন আগে আসা সিনেমার টিজারটি দর্শককে হলে টেনে নিয়ে গেছে। সেখান থেকেই দর্শক হলমুখী হয়েছে। ঈদের প্রায় সব সিনেমা ছিল মারপিট, ভায়োলেন্সে ভরপুর। সেখানে উৎসবের টিজার দর্শকদের নিয়ে গেছে ভিন্ন আবহে। একজন খাইষ্টা লোকের কাছে তিন ভূত আসে। এরপর তাঁর ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান দেখায়। গল্পটি পর্দায় খুব সহজভাবে বলেছেন নির্মাতা। সামাজিক বন্ধন, সম্পর্ক, আচরণ, পরিবর্তন– প্রতিটি অধ্যায় দর্শককে নিয়ে গেছে চিন্তার জগতে। ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটের সিনেমাটিতে দর্শক চেনাজানা মানুষের ছায়া খুঁজে পেয়েছেন। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের এমন সাড়ায় অভিভূত নির্মাতা তানিম নূর। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি দর্শককে পারিবারিক উৎসবে নিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পাচ্ছি, এটিই আমার কাছে অনেক বড় ঘটনা। আমরা চাই, ছবিটি আরও দর্শকের কাছে পৌঁছাক।’
তারকাবহুল আয়োজন
ঢালিউডে তারকাদের সমাবেশ থাকত সিনেমায়। উৎসব সিনেমায় অনেক গুণী শিল্পীকে একত্র করেছেন নির্মাতা। সিনেমায় জয়া আহসান, জাহিদ হাসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনারের মতো নন্দিত তারকাদের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বর্তমান সময়ের সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মানসহ অনেকে। সিনেমায় তারকাশিল্পীদের ব্যাপ্তিকাল কম হলেও প্রতিটি চরিত্র ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমাটির গল্প লিখেছেন তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া। ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি হিসেবে কাজ করেছেন রাশেদ জামান। চিত্রনাট্য ও সংলাপ আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়ার। অনেক বছর পর মুক্তি পেল এমন তারকাবহুল সিনেমা।
আয়ের রেকর্ড
দেশের ভেতরে উৎসব সিনেমাটি দর্শক যেমন দেখছেন, তেমনি দেশের বাইরেও সিনেমাটি নিয়ে সাড়া পাচ্ছেন নির্মাতা। ২০ জুন দেশের বাইরে মুক্তি পেয়ে উত্তর আমেরিকায় রেকর্ড আয় করেছে সিনেমাটি। ‘উৎসব’ মুক্তির এখন ২৬তম দিন চলছে। অনেক সিনেমার দর্শকসংখ্যা কমলেও ব্যতিক্রম ‘উৎসব’। চতুর্থ সপ্তাহে এসেও বেশির ভাগ শো হাউসফুল। উত্তর আমেরিকায় প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি আয় করা ঢালিউড সিনেমাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এটি। এমনটিই জানিয়েছেন উত্তর আমেরিকার আন্তর্জাতিক পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর স্বত্বাধিকারী অলিউল্লাহ সজীব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন ম হল আম র ক কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁও জি.আর ব্যাচ-২০০৫ এর শিক্ষার্থীদের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর এলাকায় অবস্থিত সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২০০৫ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন সোনারগাঁও জি.আর ব্যাচ-২০০৫ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন বর্ণাঢ্য আয়োজনে।
“এসো সবে প্রাণের টানে, এসো সবাই প্রতিভার প্রাঙ্গণে”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সোনারগাঁ জি.আর. ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এস.এস.সি ২০০৫ ব্যাচের ২০ বছর পূর্তি উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সারাদিনব্যাপী এই উৎসব বসন্ত বিলাস রিসোর্টে আয়োজন করে জি.আর. ইনস্টিটিউশন ব্যাচ ২০০৫।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু হয় সোনারগাঁও জি.আর. ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ গেইট থেকে। গাড়িতে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে টি-শার্ট বিতরণ ও কুপন বিক্রয় করা হয়। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় তারাবো পৌরসভার যাত্রামুড়া বসন্ত বিলাস রিসোর্টে পৌছান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা সকালের নাস্তা সেরে নেমে পড়েন ফুটবলা খেলায়। ক্ষনিকের জন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেনো ফিরে যান শৈশবে।
মধ্যবয়সেও যেনো কিশোর বয়সের ন্যায় ফুটবল খেলার মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। খেলার মাঠে বেশকজন আহত হয়ে নিজেরা বুঝেছেন কিশোর যুবক বয়স পাড় করে মধ্যবয়সে ফিরেছেন তারা। এরপর ছুটে যান সুইমিং পুলে। সেখানেও থেমে থাকেনি।
বাধভাঙ্গা উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সুইমিং পুলে। এবারো যেনো প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফিরে গেলেন শিশুকালে। পরবর্তীতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সন্তানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বল নিক্ষেপ খেলা।
দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ছিল জুমাআ নামাজের জন্য বিরতি। দুপুর ২টা থেকে ৩টি পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বাধভাঙ্গা উল্লাস থেকে যেনো সবাই মিউয়ে পড়েন ক্লান্তিতে। এরি মাঝে শুরু হয় মেয়েদের বালিশ কার হাতে খেলা।
বাদ আসর শেষে পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভা ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বেশকটি ইভেন্ট সম্পন্ন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। সঙ্গে ছিল বসন্ত বিলাস রিসোর্টের বিভিন্ন রাইড ও বিনোদনমূলক আয়োজন সবার মাঝে যেনো আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলেন, “এই বন্ধুত্ব আর মিলনমেলা আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। ভবিষ্যতেও এ ঐক্য ধরে রাখতে চাই। শিক্ষাজীবনের স্মৃতি আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ।
এই আয়োজন সেই স্মৃতিগুলোকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। আমরা শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থী নই, সমাজ উন্নয়নে দায়িত্বশীল নাগরিকও। সেই লক্ষ্যেই আমাদের সংগঠন কাজ করছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- আল মাহামুদ সানি, আমিরুল ইসলাম সজীব, সিফাতুল ইসলাম সিফাত, কাউসার আল মামুন রাজু, নূর মোহাম্মদ রুবেল, সাদেকুর রহমান সাদেক, হাসান মেহেদী, শাহিন কবির, মাহাবুবুর রহমান তমাল, আজহারুল ইসলাম রনি, খোরশেদ আলী, তানিয়া মৌসুমী শোভা, ফারজানা রিনা, নজরুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ, আরিফুজ্জামান আরিফ, শাহআলী, রিপন আহমেদ আশিক, সাইদুর রহমান, শরীফ হোসেন, মোহাম্মদ রাসেল, মাজহারুল ইসলাম রোকন সহ অন্যান্যরা। এ ছাড়াও প্রবাসে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, “২০০৫ ব্যাচ” নামে একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সামাজিক সংগঠন ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই সংগঠনটি সোনারগাঁ অঞ্চলে নানামুখী সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে, যা বর্তমানে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে সোনারগাঁও জুড়ে।