বছরটা আমার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলা যায়। এ বছর কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও এসেছে দারুণ কিছু পরিবর্তন। রাজীব (আদনান আল রাজীব) আর আমি নতুন জীবনের শুরুটা করেছি কিছু প্রিয় গন্তব্য ঘুরে। তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ আর মিসর ভ্রমণের অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি– ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা নয়, এটি অনুভবের, উপলব্ধির আর নিজেকে নতুন করে চেনার একটা যাত্রা। ছোটবেলা থেকে আমার একটি স্বপ্ন ছিল– মিসরে যাওয়ার। ইতিহাসের বইয়ে পিরামিড আর মমির ছবি দেখে সেই যে মুগ্ধতা জন্মেছিল, তা কখনোই ফিকে হয়নি। এবার যখন ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার টিম নিয়ে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে মিসর গেলাম, তখন বুঝলাম– স্বপ্ন সত্যি হওয়ার এমন অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মিসরের জাদুঘরে প্রবেশ করে আমি যেন এক অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম। কয়েক বছর ধরে যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অবশেষে আমি মমি দেখেছি। যদিও ছবি তোলার অনুমতি ছিল না, তবুও সেই মুহূর্তটা আমার মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। মিসরের ইতিহাস, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রতিটি ধাপে ধাপে আমি বিস্ময়ে ভেসেছি। সত্যি বলতে মিসর জাদুকরী একটি দেশ– এমন এক মায়াবী শক্তি আছে, যেটি অনুভব না করলে বোঝানো যাবে না।
এরপর ইউরোপ ভ্রমণের অংশ হিসেবে আমরা গেলাম ইতালির ভেনিসে। ভেনিস শহরটা যেন এক প্রেমপত্রে লেখা, পানি আর পাথরের ওপর। রাজীব আর আমি হাঁটছিলাম সেই জলপথ ধরে। ভেতরটা কেমন যেন মুগ্ধতায় ভরে যাচ্ছিল। সেই ভ্রমণের একটা মুহূর্ত আমি শেয়ার করেছিলাম– লাল রঙের ওয়ান শোল্ডার গাউনে, খুবই হালকা মেকআপে। একদম আরামদায়ক কিন্তু ক্ল্যাসিক একটা লুকে।
লাল আমার প্রিয় রং। এটি শুধু একটা রং নয়– আমার কাছে এটি ভালোবাসা, উৎসব আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমি চাইছিলাম এমন একটা লুক, যেখানে নিজের মতো করে স্বস্তিতে থাকব, আবার নিজেকে সুন্দরও লাগবে। অনেকেই মনে করেন লাল পোশাক মানেই ভারী মেকআপ দরকার। আমি চেয়েছি একেবারে ‘আন্ডারস্টেটেড’ অথচ দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া একটা স্টাইল। লিপস, হালকা চোখের সাজ আর কানে একটু লাল ফুল– প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এক সহজ সৌন্দর্য। চুল বাঁধা ছিল একটু অগোছালোভাবে, সেটিই যেন আমার সেই মুহূর্তের গল্পের অংশ। এলোমেলো খোঁপায় একটি রাজকীয় ছাপ ছিল, যা আমি দারুণ পছন্দ করি। ভেনিসের সেই কিছু মুহূর্ত শুধু স্মৃতি হয়ে থাকেনি, সেটি যেন আমার জীবনের এক নতুন গল্প হয়ে গেছে। প্রতিটি ফ্রেম, প্রতিটি হাঁটা, প্রতিটি হাসি– আমি মনে করি সবই ছিল আমার একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রার প্রতিচ্ছবি। আমি ভাগ্যবান এ অভিজ্ঞতার জন্য, এই জীবনের জন্য।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হজ ব ন চ ধ র ভ রমণ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, কলেজ কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত জেলার প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। এদিকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
আজ মানববন্ধনে সুনামগঞ্জের লেখক-গবেষক সুখেন্দু সেন, সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল হক, পঙ্কজ কান্তি দে, মুহাম্মদ মুনাজ্জির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মুজাহিদুল ইসলাম, সালেহীন চৌধুরী, মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, নাসিম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা স্মারকস্তম্ভ কলেজের অন্য কোনো জায়গায় নির্মাণ এবং শহীদ মিনারের ভাঙা অংশ সংস্কারের দাবি জানান। পরে অধ্যক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ মুনাজ্জির হোসেন বলেন, ‘এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার, ইতিহাসের অংশ। এটি ভাঙা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কথা বলার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাঁরা স্মারকস্তম্ভ কলেজের অন্য জায়গায় নির্মাণ ও শহীদ মিনার যেভাবে ছিল, সেভাবে আবার সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন।’
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতারা আমাদের কাছে এসে তাঁদের দাবির বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি এখানে নতুন। আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সঙ্গে দ্রুত কথা বলে সমস্যার সমাধান করব।’
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি সুনামগঞ্জে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির একটি স্মারকস্তম্ভ।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারীকরণ করা হয় ১৯৮০ সালে। কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব হয়। এই উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন ক্যাম্পাসে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মাসখানেক আগে ওই স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ কোথায় এটি নির্মাণ করা হবে, সেই স্থানটি নির্ধারণ করেছে। স্থান নির্ধারণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ৯ ঘণ্টা আগে