৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নূরুল হুদার বিরুদ্ধে
Published: 3rd, July 2025 GMT
বাজারমূল্যের চেয়ে দশ গুণ বেশি দামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে। দেড় লাখ নিম্নমানের ইভিএম কিনে সরকারের প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ক্ষতি বা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, সরকারি আর্থিক বিধিবিধান লঙ্ঘন, কোনো সমীক্ষা ও টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করে সোনাবাহিনীর কাছ থেকে ইভিএম কেনার অভিযোগ রয়েছে নূরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মকর্তাকে গত বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নির্বাচন কমিশনে গুণগত মানসম্পন্ন ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছে কিনা এবং প্রতিটি ইভিএমের মূল্য সঠিক ছিল কিনা– দুদক এ-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ বের করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে দুদকের সহকারী পরিচালক মো.
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ইভিএম ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির একটি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এই অভিযোগ নিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
দিনের ভোট রাতে দেওয়ার অভিযোগে গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ও দুদক একযোগে তদন্ত করছে।
দুদক যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. ফরহাদ হোসেন, সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ও সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতার। ওই দিন যারা হাজির হননি তারা হলেন– নির্বাচন কমিশন সচিবালযের উপপ্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী, সহকারী প্রধান মো. মাহফুজুল হক ও আইটি সিস্টেম কনসালট্যান্ট এএইচএম আব্দুর রহিম খান।
সূত্র জানায়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক নিরীক্ষায় ইভিএম ক্রয়ে ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকার ক্ষতি বা আত্মসাতের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দুদকে দেওয়া অভিযোগে সরকারের এই বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে উল্লেখ রয়েছে।
দুদক জানায়, নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে দেড় লাখ ইভিএম সোনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল। ডেলিগেটেড ক্রয় পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীকে কেনার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে তাদের মেশিনটুলস ফ্যাক্টরি থেকে ক্রয় করে নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করে।
এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বাজারদর কমিটির দরটাই আমলে নেওয়া হয়েছিল। তারা নিজেরা বাজারদর যাচাই কমিটি গঠন করেনি। দুদক জানায়, তারা নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। আরও কাগজপত্র সংগ্রহ করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।