দেশের বিভিন্ন স্থানে আজও হতে পারে বৃষ্টি
Published: 5th, July 2025 GMT
ঢাকাসহ সারা দেশে গতকাল শুক্রবার বৃষ্টি বেড়েছে। রংপুর বিভাগের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া গতকাল সারা দেশে বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হালকা, কোথাও অতি ভারী, কোথাও–বা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে গতকাল। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার এ প্রবণতা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে।
সরকারের আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। আজ রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় (৭৬ থেকে ১০০ শতাংশ এলাকায়) এবং রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় (৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ এলাকায়) হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতসহ অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াও বয়ে যেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। বৃষ্টি বাড়ায় আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
কোথাও হালকা, কোথাও অতি ভারী, কোথাও–বা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে গতকাল। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার এ প্রবণতা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার আগপর্যন্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি। রংপুর ছাড়া দেশের প্রতিটি বিভাগের সব জায়গায় গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ১৬২ মিলিমিটার, যা অতি ভারী। সাতক্ষীরায়ও অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে, ১২১ মিলিমিটার। এ ছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় ৭২ মিলিমিটার; সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে ৫৯ মিলিমিটার ও তাড়াশে ৪৫ মিলিমিটার; কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ৫৮ মিলিমিটার ও টেকনাফে ৫৭ মিলিমিটার; যশোরে ৫০ মিলিমিটার; চুয়াডাঙ্গায় ৪৮ মিলিমিটার এবং খুলনায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।
গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা ছিল রংপুর, নীলফামারীর ডিমলা ও সিলেটে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ২৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল স
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চলছে ধনীদের ব্যয়ে, অন্যদের খরচ বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে
যুক্তরাষ্ট্রের ভোগব্যয় বৃদ্ধিতে অসম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ধনীদের ব্যয় যে হারে বাড়ছে, অন্যদের ব্যয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে সমাজে যেমন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অর্থনীতিতেও ভারসাম্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মহামারির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে ভোগব্যয় বেড়েছে, তার প্রায় পুরোটাই করেছে ধনিক শ্রেণি। অন্যদিকে নিচের ৮০ শতাংশ আমেরিকান কেবল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করছে। খবর ফরচুন ম্যাগাজিন।
মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সতর্ক করেছেন, দেশটির অর্থনীতি এখন ক্রমেই ‘ধনীদের আয় ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে।’ ধনীদের সম্পদ দ্রুত বাড়লেও চাকরির বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবৃদ্ধি দুর্বল। সেই সঙ্গে পণ্যের দামও বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না।
জান্ডি লিখেছেন, অনেক আমেরিকান মনে করেন, অর্থনীতি তাঁদের জন্য কাজ করছে না—এটাই সত্যি। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মহামারির পর থেকে দেশের নিচের সারির ৮০ শতাংশ মানুষ কেবল মূল্যস্ফীতির সমান হারে খরচ বৃদ্ধি করেছে, অর্থাৎ তাদের ব্যয়ের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নেই। অথচ আয়ের শীর্ষ ২০ শতাংশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ব্যয়বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
ফেডারেল রিজার্ভের ভোক্তা জরিপ ও আর্থিক হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে মুডিস দেখিয়েছে, ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ধনী ও মধ্যবিত্ত–নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আয়ের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে।
তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেন সাধারণ আমেরিকানরা মনে করেন, এই অর্থনীতি তাঁদের জন্য নয়। যাঁদের বার্ষিক আয় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলারের নিচে, তাঁরা শুধু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খরচ বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু ওপরের ২০ শতাংশ, বিশেষ করে শীর্ষ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ, অনেক লাভবান হয়েছেন।
১৯৯৯ সালের শেষ প্রান্তিককে ভিত্তি ধরে মুডিস ব্যয়ের সূচক তৈরি করেছে। ওই সময়ের ভিত্তিমানকে ১০০ ধরা হলে এখন শীর্ষ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকানের ব্যয় সূচক প্রায় ১৭০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ব্যয় সূচক প্রায় ১২০ পয়েন্ট—অর্থাৎ মূলত মূল্যস্ফীতির সমান। অর্থাৎ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখন এক ক্ষুদ্র, ধনী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
জান্ডির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন অনেকটাই ধনীদের খরচের ওপর টিকে আছে। যতক্ষণ তারা ব্যয় করছে, মন্দার আশঙ্কা কম। কিন্তু তারা যদি হঠাৎ সতর্ক হয়ে যায়, তাহলে বড় বিপদ হতে পারে।
ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেফেডারেল রিজার্ভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা আরও দ্রুতহারে সম্পদশালী হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪ ট্রিলিয়ন বা চার লাখ কোটি ডলার; আগের বছরের ৩ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৮৪ হাজার কোটি ডলার থেকে যা সামান্য বেড়েছে। মধ্যবিত্ত (৫০ থেকে ৯০ শতাংশ) শ্রেণির সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন বা ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার কোটি ডলার—গত বছর যা ছিল ৪৭ লাখ ০২ হাজার কোটি ডলার।
শীর্ষ ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। শীর্ষ ১০ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ থেকে ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ ২৭ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির হাতে আছে ২২ লাখ ১৯ হাজার কোটি ডলার—দেশটির নিচের সারির অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সম্পদের পাঁচ গুণেরও বেশি। শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ আরও বাড়ছে।
ফোর্বসের হিসাব বলছে, এখন বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি—এক বছর আগের তুলনায় আরও ২০০ জন বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ধনী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের হাতে এখন দেশটির মোট পারিবারিক সম্পদের ১৪ শতাংশ, কয়েক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তাদের বিলাস্য–ব্যসনও বাড়ছে, যদিও দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, তার ধরন বদলে গেছে।
খুচরা বিক্রি এখনো শক্ত অবস্থানেযুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের গতি মন্থর। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও ভোক্তারা এখনো খরচ কমায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের তথ্যানুসারে, আগস্ট মাসে খুচরা বিক্রি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে—এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। সেপ্টেম্বর মাসেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, চাকরির বাজার কিছুটা দুর্বল হলেও স্কুল খোলার মৌসুমে খরচ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যখন আর উপায়ান্তর থাকবে না, তখনই মার্কিনরা খরচের লাগাম টানবে, তার আগে নয়।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা হলো, সাম্প্রতিক তিন মাসে ব্যয়ের বড় অংশ এসেছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে, প্রকৃত ক্রয় থেকে নয়। তাঁরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় আগেভাগে কেনাকাটার প্রবণতাও কাজ করেছে—অক্টোবরে তা কমে যেতে পারে।