সৌদি আরবে অপহরণ করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মাগুরা থেকে একজন গ্রেপ্তার
Published: 20th, November 2025 GMT
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মো. রাসেলকে আটকে রেখে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পাঁচ দিন পর গত ১৭ জানুয়ারি সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি রিয়াদে ব্যবসা করতেন। অপহরণে জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার মাগুরা থেকে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আগে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহর থেকে অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের কাছে একটি ইমো আইডি থেকে ও ভিওআইপির মাধ্যমে ফোন করে রাসেলের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা দেওয়া না হলে রাসেলের ক্ষতি করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বর এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইফুলসহ স্বজনেরা উপায়ন্তর না পেয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বরে ধাপে ধাপে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং অপহরণকারীদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ লাখ টাকা পাঠান। মোট ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ পেয়ে রাসেলকে ১৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিজেদের হেফাজতে নেয়। অপহরণের ঘটনা ফাঁস হলে রাসেলকে খুন করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখান অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। পরে রিয়াদের স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে গিয়ে রাসেল পরিবারকে সব খুলে বলেন। রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে থাকছেন এবং সেখানে ব্যবসা করছেন। গত ২১ জানুয়ারি রাসেলের শ্বশুর বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা যেসব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নম্বর ও ব্যাংকের হিসাব নম্বর অপহৃতের স্বজনদের দিয়েছিল, সেগুলোর তথ্যাদি পর্যালোচনা করে মো.
সিআইডির কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, মামলাটি বর্তমানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে। গ্রেপ্তার জিয়াউর রহমানকে রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপহরণক র স আইড র র স লক জ য় উর তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব, জমি ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব কাঠামো মেনে নিতে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটন। প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইউক্রেনকে নিজ ভূখণ্ডের একটি অংশ ছাড়তে হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুজন মার্কিন কর্মকতার বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থ রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, প্রস্তাবটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর পথ নেই।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে রাতভর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার, নিহত ৯
ফ্রান্স থেকে ১০০ রাফাল যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন
বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছেন, মার্কিন প্রস্তাবগুলোতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করার প্রস্তাবও রয়েছে। তারা বলেন, ওয়াশিংটন চায় কিয়েভ মূল বিষয়গুলো মেনে নেবে।
রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে আরো ভূখণ্ড দখলের পথে থাকা অবস্থায় এবং ইউক্রেনে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি মোকাবিলায় জেলেনস্কির প্রচেষ্টার মধ্যে এই ধরনের পরিকল্পনা কিয়েভের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
রয়টার্স বলছে, হোয়াইট হাউজ এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘এই সংঘাতের উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য সম্ভাব্য ধারণাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে থাকবে।”
রুবিও আরো বলেন, “ইউক্রেনের মতো জটিল ও প্রাণঘাতী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে গুরুতর ও বাস্তবসম্মত ধারণার ব্যাপক আদান-প্রদান প্রয়োজন। একটি টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য উভয় পক্ষকে কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় ছাড়ে সম্মত হতে হবে।”
ইউক্রেনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এর আগে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন যে, যুদ্ধ বন্ধের জন্য ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে যে আলোচনা করেছেন, তার কিছু মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে কিয়েভ ‘সংকেত’ পেয়েছে। সূত্রটি আরো বলেছে, প্রস্তাবগুলো প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।”
জেলেনস্কি বুধবার আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার কিয়েভে মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন।
জেলেনস্কি বুধবার টেলিগ্রামে এক মন্তব্যে ওয়াশিংটনের নতুন শান্তি কাঠামোর কথা উল্লেখ করেননি, তবে সাড়ে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কার্যকর মার্কিন নেতৃত্বের আহ্বান জানিয়েছেন।
টেলিগ্রাম পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘রক্তপাত বন্ধ এবং স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রধান বিষয় হলো আমরা আমাদের সব অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করি এবং আমেরিকান নেতৃত্ব কার্যকর ও শক্তিশালী থাকে।
আঙ্কারায় এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পর জেলেনস্কি এই মন্তব্য করেন।
জেলেনস্কি বলেন,“ যুদ্ধ শেষ হওয়ার জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেই পর্যাপ্ত শক্তি রয়েছে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “এরদোগান আলোচনার জন্য বিভিন্ন ফরম্যাটের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে তুরস্ক প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম প্রদান করতে প্রস্তুত।”
জুলাই মাসে ইস্তানম্বুলে একটি বৈঠকের পর থেকে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে কোনো মুখোমুখি আলোচনা হয়নি। রুশ বাহিনী ইউক্রেনে প্রায় চার বছর ধরে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। বুধবার রাতভর হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি
যুদ্ধ শেষ করার জন্য মস্কো তার শর্ত পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ না দেখালেও শান্তি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা গতি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন ধরে কিয়েভকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের পরিকল্পনা ত্যাগ করার এবং রাশিয়ার অংশ হিসেবে মস্কো দাবি করে এমন চারটি প্রদেশ থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি করে আসছেন। মস্কো এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যে, তারা এই দাবিগুলোর কোনোটি প্রত্যাহার করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, তারা এটি গ্রহণ করবে না।
রুশ বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে এবং শীতকাল আসার সাথে সাথে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ঘন ঘন আক্রমণ চালাচ্ছে।
কিয়েভ ও মস্কো উভয়েরই ঘনিষ্ঠ ন্যাটো সদস্য তুরস্ক। ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহগুলোতে তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা হয়েছিল, যা ইস্তাম্বুলে শুরু হয়। তবে, এই আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। এরপর চলতি বছর আবারো মধ্যস্থতার চেষ্টা শুরু করেছে তুুরস্ক। তারই আলোকে বুধবার তুরস্ক সফর করেন জেলেনস্কি।
ক্রেমলিন বলেছে, বুধবার আঙ্কারায় রাশিয়ান প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেবেন না। তবে পুতিন আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের সঙ্গে আলাপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে ভূখণ্ড?
বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞাত একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, নতুন মার্কিন পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে পূর্ব ইউক্রেনের একটি অংশ মস্কোকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, অংশটি বর্তমানে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে নেই। ভবিষ্যতে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিয়েভ ও ইউরোপের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে।
ইউরোপীয় একজন কূটনীতিক, কথিত নতুন মার্কিন প্রস্তাবের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘কিয়েভকে কোণঠাসা করার’ আরেকটি প্রচেষ্টা হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এমন কোনো সমাধান হতে পারে না যেখানে ইউক্রেনের অবস্থান বা ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের অবস্থান বিবেচনা করা হবে না।
আরেকজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার কমানোর পরামর্শটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের চেয়ে রাশিয়ার দাবি বলে মনে হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ