সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৮টা মধ্যে তারা মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৫৩ জন মারা গেছেন।
আরো পড়ুন:
ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৬, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮৮
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় আরো ৫ জনের মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ডেঙ্গু-বিষয়ক সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৮৮ হাজার ৪৫৭ জন।
অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২৭ জন, খুলনা বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৮ ও সিলেট বিভাগে একজন রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় যে ৪ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে দুই জন ঢাকা, একজন ময়মনসিংহ এবং একজন চট্টগ্রাম বিভাগের।
এ সময়ে ৬৯৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৫ হাজার ২৬৭ জন।
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি আসলে কারা চালাচ্ছে
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা থেকে গত বৃহস্পতিবার সকালে ১৫৩ জন ফিলিস্তিনিকে নিয়ে একটি চার্টার্ড উড়োজাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের কাছের একটি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল। তাঁদের অনেকের কাছেই প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নথি ছিল না, যা দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তাদের ‘হতভম্ব’ করে দিয়েছিল।
প্রায় ১২ ঘণ্টা চেষ্টার পর স্থানীয় একটি দাতব্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে ওই ফিলিস্তিনি যাত্রীদের উড়োজাহাজ থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
স্থানীয় দাতব্য সংস্থা ‘গিফট অব দ্য গিভার্স’ তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাঁদের উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসার অনুমতি দেয়।‘আল-মাজদ ইউরোপ’ নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে আরও তথ্য সামনে এসেছে। কর্মীরা অভিযোগ করছেন, এর মাধ্যমে ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, তারা ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়ার’ কাজে সমন্বয় করে থাকে। গাজার এই ফিলিস্তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের অর্থও নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত এই দলটির যাত্রা এবং ‘আল-মাজদ ইউরোপ’-এর পেছনে কারা আছে, সে সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে, পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কী ঘটেছিলদক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে রানওয়েতে দাঁড়িয়ে ছিল। কারণ, ফিলিস্তিনি যাত্রীরা গাজা ছাড়ার সময় তাঁদের পাসপোর্টে বহির্গমন সিল (এক্সিট স্ট্যাম্প) বা স্লিপ ছিল না। অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কোথায় থাকবেন বা কতদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতে চান—সে সম্পর্কেও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
এরপর স্থানীয় দাতব্য সংস্থা ‘গিফট অব দ্য গিভার্স’ তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাঁদের উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসার অনুমতি দেয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৩ জন ফিলিস্তিনি পরে অন্য দেশে চলে গেছেন। এর বাইরে আর বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত শুক্রবার বলেন, ‘এরা গাজার মানুষ। তাঁরা রহস্যজনকভাবে একটি উড়োজাহাজে করে কেনিয়ার নাইরোবি হয়ে এখানে এসেছেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে তাঁদের গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনাটির তদন্ত করছে।
ইসরায়েলের সংবাদপত্র হারেৎজ গত রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই সংস্থাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন টোমার জানার লিন্ড নামের একজন ইসরায়েলি-এস্তোনিয়ান দ্বৈত নাগরিক। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিটের সঙ্গে লিন্ড এমন বেশ কয়েকটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছেন।দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানএই ফ্লাইটের পেছনে রয়েছে ‘আল-মাজদ ইউরোপ’ নামের ওই সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
ইসরায়েলের সংবাদপত্র হারেৎজ গত রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সংস্থাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন টোমার জানার লিন্ড নামের একজন ইসরায়েলি-এস্তোনিয়ান দ্বৈত নাগরিক। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিটের সঙ্গে লিন্ড এমন বেশ কয়েকটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছেন।
এই ইউনিটের নাম ‘স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন ব্যুরো’। ফিলিস্তিনিদের তাঁদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করার নীতি কার্যকর করতে ২০২৫ সালের প্রথম দিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই ইউনিট গঠন করা হয়েছিল।
হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিন্ড ফিলিস্তিনিদের জন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার কথা অস্বীকার করেননি। তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
রামাল্লার বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও শরণার্থী অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক ওরুব আল-আবেদ আল–জাজিরাকে বলেছেন, এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।
আল–আবেদ বলেন, এটি দীর্ঘ ঔপনিবেশিক পদ্ধতির একটি অংশ। ইসরায়েলিরা সুসংগঠিতভাবে আদিবাসী ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করছে। তারা বহুমাত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূমিকে তার আদিবাসী মানুষশূন্য করতে চায়।
আল-মাজদ ইউরোপ সম্পর্কে কী জানা গেলআল–মাজদ ইউরোপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি ২০১০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর হোমপেজে একটি সতর্কবার্তা রয়েছে, যে কেউ তাদের এজেন্ট সেজে প্রতারণা করতে পারে। সেখানে ‘বৈধ প্রতিনিধিদের’ ফোন নম্বর দেওয়া আছে।
তবে ওয়েবসাইটে সংস্থাটির কোনো ঠিকানা বা ফোন নম্বর নেই। কেবল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহতে একটি অবস্থান দেখানো হয়েছে। যদিও আল–জাজিরা সেখানে কোনো অফিস খুঁজে পায়নি।
আলমাজদইউরোপ ডট ওআরজি (almajdeurope.org) নামের ওয়েবসাইটটির ডোমেইন মাত্র এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিবন্ধন করা হয়েছে। সাইটের বেশ কিছু লিঙ্ক কাজ করে না। সাইটে দেওয়া ই–মেইল ঠিকানা ([email protected]) থেকেও স্বয়ংক্রিয় বার্তা আসছে, ঠিকানাটি অস্তিত্বহীন।
নেমচিপ নামের যে প্রতিষ্ঠান ডোমেইনটি নিবন্ধন করেছে, সাইবার নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদনে অনলাইন জালিয়াতির ঘটনায় তাদের নাম এসেছে। কারণ, তাদের সাইন-আপ প্রক্রিয়া সহজ ও খরচ কম।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একটি ‘অনিবন্ধিত ও বিভ্রান্তিকর’ সংস্থার মাধ্যমে এই ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গাজার জনগণের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়েছে সংস্থাটি।আল–জাজিরা আরও জানতে পেরেছে, অনেক ব্যক্তিকে সংস্থার ব্যাংক হিসাবে নয়, বরং ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল।
ওয়েবসাইটটি মাত্র ১০ মাস আগে নিবন্ধন করা হলেও সেখানে আলেপ্পোর (সিরিয়া) ২৯ বছর বয়সী ‘মোনা’ সম্পর্কে একটি পোস্ট রয়েছে, যার তারিখ দেওয়া আছে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ। মোনার জবানিতে লেখা সেই গল্পে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে লেবাননে পালিয়ে যাওয়ার পর যখন তাঁরা বিপদে পড়েছিলেন, তখন আল–মাজদ তাঁকে এবং তাঁর মাকে ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করেছিল। এ জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তবে ছবিতে যাঁকে দেখানো হয়েছে, সেই মানুষটির নাম আসলে আবির খায়াত। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে লেবাননের ত্রিপোলিতে সাংবাদিক ম্যাডেলিন অ্যাডওয়ার্ডস যখন ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৩। মিডল ইস্ট আইয়ের জন্য তিনি ওই ছবিটি তুলেছিলেন।
অনলাইন ফর্মে লেখা আছে—বর্তমানে শুধু গাজা উপত্যকার ভেতরে থাকা বাসিন্দাদের জন্য—‘আপনি কি ভ্রমণ করে নতুন জীবন শুরু করতে চান? আমরা আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
মানুষ কীভাবে সেই ফ্লাইটে উঠলফিলিস্তিনি পরিবারগুলো প্রত্যেক শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য আল-মাজদকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ডলার দিয়ে ফ্লাইটে উঠেছিলেন। তবে তাঁদের চূড়ান্ত গন্তব্য জানা ছিল না। এই যাত্রীদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন।
স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ফ্লাইটে ওঠা লোয় আবু সাইফ গত শুক্রবার আল–জাজিরাকে বলেন, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আল-মাজদের কথা জানতে পারেন।
সাইফ বলেন, তাঁদের গাজা থেকে কখন বের হতে হবে, তা তিনি মাত্র এক দিন আগে জানতে পেরেছিলেন। সে সময় তাঁকে বলা হয়েছিল, যাত্রীরা শুধু একটি ছোট ব্যাগ, একটি মোবাইল ফোন ও কিছু নগদ টাকা নিতে পারবেন।
যাত্রীদের গাজার দক্ষিণে অবস্থিত রাফা থেকে বাসে করে কারেম আবু সালেম ক্রসিংয়ে (ইসরায়েলে যা কেরেম শালোম নামে পরিচিত) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের তল্লাশি করে। এরপর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ভ্রমণ নথিতে কোনো স্ট্যাম্প না দিয়েই ইসরায়েলের রামোন বিমানবন্দরে স্থানান্তর করে।
উড়োজাহাজে কয়েক দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসা এক ফিলিস্তিনি। এই ছবি জোহানেসবার্গের কোনো একটি এলাকা থেকে ১৪ নভেম্বর তোলা